বিজয়ের ৪৬ বছর: উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ
Published : Thursday, 14 December, 2017 at 8:28 PM, Count : 2705

মোতাহার হোসেন : দেশ স্বাধীন হলো আজ থেকে ৪৬ বছর আগে। ৪৬ বছর আগের বাংলাদেশ আর ৪৬ বছর পরের বাংলাদেশ এক নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ৪৬ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক, সামাজিকখাতসহ সামগ্রিকভাবেই দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ‘জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত আমরা। বঙ্গবন্ধু দেশকে ভৌগলিকভাবে স্বাধীন করেছেন আর তারই সুযোগ্যে কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির, সমৃদ্ধির দেশ। ২০১২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হবে দেশ। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে ক্ষুধামুক্তি, দারিদ্র্য মুক্ত হবে দেশ।
ইতোমধ্যে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, বিদ্যুত্, জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য বই প্রদান, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, যোগাযোগ, সড়ক অবকাঠামো, রাস্তা ঘাট, পুল কালভাট উন্নয়ন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে ‘পায়রা বন্দর স্থাপন, রেল পথের সম্প্রসারণ, অত্যাধুনিক রেল বগি, ইঞ্জিন আমদানি, রাজধানীতে মেট্রোরেল স্থাপন, ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কে বাস রেপিড ট্রানজিট চালু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার লেনে উন্নীত, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ককে চার লেনে উন্নীত, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এই ৪৬ বছরে বড় অর্জন হচ্ছে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 
বিশেষ করে স্বাধীনতার ৪৬ বছরে দেশে আবাদি জমি কমেছে ব্যাপক হারে। তারপরও কৃষিকে সরকারের নব নব সংযোজন, প্রযুক্তির প্রয়োগ, অঞ্চল, মাটি, আবহাওয়া উপযোগী ধান, গমসহ অন্যান্য বীজ উদ্ভাবন বিশেষ করে ৪৮ রকমের হাইব্রিজ জাতের উন্নত ও অধিক ফলন শীল ধান বীজ উদ্ভাবন করায় হাজার বছরের খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, মানুষের গড় আয়, গড় আয়ু , রির্জাভ, রেমিটেন্স বেড়েছে ঈর্ষণীয় হারে। এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ১০ মেগা প্রকল্পের শতভাগ বাস্তবায়ন হলে বিশ্বে বাংলাদেশ হবে উন্নয়নের রোল মডেল।
এখানে একটি অপ্রিয় সত্য কথা হচ্ছে: আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির শত্রুপক্ষ বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী এবং নৈরাশ্যবাদীরা বরাবরই বলে- দেশ স্বাধীন হলেও তেমন লাভ হয়নি। দেশের উন্নয়ন হয়নি, অভাব যায়নি- ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা দেশের উন্নয়ন, সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাসহ সামগ্রীক ক্ষেত্রে অগ্রগতি চোখে দেখে না। অথচ নির্ধিদ্বায় তাদের অনেকই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে, বক্র পথে অর্থ বিত্তভৈববের মালিক হয়েছে। এরাই বিশ্বাসঘাতক, এরাই স্বাধীনতা, মানবতা ও মানবাধিকারের পরিপন্ত্রী। গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং সুশাসনের পরিপন্থী। এরাই জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃত্বকে পছন্দ করে না। বরং পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করে। অতীতে বিশেষ করে করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় ৪৬ বছর ধরে অনবরত মিথ্যাচার করছে এই চক্র।
দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সফলতার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এই বিশাল অংশ খুবই নিশ্চুপ থাকেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এখনও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জিয়াউর রহমানের তুলনা করেন। বিএনপির শাসনামলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শাসনামলের তুলনা করেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সঙ্গে জিয়া পরিবারের তুলনা করেন। আমি মনে করি এই তুলনা যারা করেন তারা রাজনৈতিকভাবে, মানসিকভাবে দৈন্যতায় ও হীনমন্যতায় ভোগেন। এতে লাভবান হয় অপশক্তি, রাজনীনিতে অনাহুত বির্তক সৃষ্টি করা হয়। ঠিক এমনি করে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে এই অপশক্তিই মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং বর্তমানে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের নিরন্তর অপচেষ্টা অব্যাহত। এখন প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সচেতন সমাজ, উন্নয়ন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য।
বিজয় অর্জনের এ ৪৬ বছরে এসেও মনে হচ্ছে এখন অব্দি স্বাধীনতা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার শত্রু পক্ষ। কাজেই ১৯৭১ সালে আমাদের লড়াই ছিল মুক্তির লড়াই। যে লড়াইর ডাক দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে বঙ্গবন্ধু তার অমর কবিতাখানি, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’.. এর মধ্য দিয়ে তা এখনও একেবারেই শেষ বা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। 
আজকের প্রজন্ম হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না কত ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে কারণে কিঞ্চিত্ এই দিকটি সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্বের নবীনতম দেশ ছিল; বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশও বটে। ২৫ মার্চ কালরাত্রির পর ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে বিশ্বব্যাংকের একটি বিশেষজ্ঞ দল কয়েকটি শহর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য করেছিল- ‘এগুলো দেখতে পারমাণবিক হামলার পরের একটি সকালের মতোই।’ প্রায় ৬০ লাখ বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল। ১৪ লাখ কৃষক পরিবার চাষবাসের হালহাতিয়ার ও পশু হারিয়েছিল। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ধ্বংস। রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত, সেতু বিধ্বস্ত এবং অভ্যন্তরীণ জলপথ অবরুদ্ধ হয়েছিল। ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ মা-বোনের উজ্জত আর বিপুল সম্পদ ক্ষতির বিনিময়ে অর্জিত হলো বাঙালির বিজয়, বাঙালির স্বাধীনতা। 
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত দেশটির ধ্বংসযজ্ঞ শুধুই বেড়েছে। কেননা পাকিস্তান বাংলাদেশের পোড়ামাটি চেয়েছিল। বাস্তবে পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরা তাই করেছিল। 
সময়টা একেবারে কম নয়, এরই মধ্যে আমরা বিজয়ের ৪৬ বছর পার করে ফেললাম। এই ৪৬ বছরের মধ্যে ২৮ বছর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সরকার ক্ষমতায় ছিল। জাতি রাষ্ট্র গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক মদত ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৪৬ বছরে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয় ‘সম্পদে ভরপুর এবং সম্পদে উপচেপড়া ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অর্জন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, সত্, যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। 
আশির দশকে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জনের সূচনা হয়। কালক্রমে এই শিল্প এখন বিশ্বে অন্যমত প্রধান রফতানি কারক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী আয় আজ বার্ষিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজ আমরা শত্রুর মুখে চুনকালি দিয়ে বিশ্ব অগ্রগতির মহাসড়কে। শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য দেখে বিশ্ব অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আশু সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ১১টির মধ্যে রয়েছে। জেপি মরগ্যান বলছে, বাংলাদেশ অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে ‘ফ্রন্টিয়ার ফাইভ’। সিটি গ্রুপ যা বলছে তা আরও উত্সাহব্যঞ্জক- ‘বাংলাদেশ এখন থ্রিজি অর্থাত্ থ্রি গ্লোবাল গ্রোথ জেনারেটর গ্রুপ’। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে ‘লিঙ্গভিত্তিক আয় সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ। 
সাউথ ইস্ট এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ শীর্ষে। দেশের শ্রমজীবী মানুষের অবদানেই এই অর্জন। 
নতুন প্রজন্ম এই দেশকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন চীনের সঙ্গে নেক টু নেক’ পাল্লা দিচ্ছে। ১০ বছর আগে এটি ছিল অচিন্তনীয়। কাজেই স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এখন যে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, যে সাফল্য তার ধারাবাহিকতায় প্রয়োজন আগামীতে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা। তাহলে নিশ্চিত হবে স্বাধীনতা সুর্বণজয়ন্তীতে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি পূর্ণতা পাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft