শিরোনাম: |
অসহযোগ আন্দোলন
মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমপিদের বাড়ি ভাঙচুর, আগুন
|
বর্তমান প্রতিবেদক: সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গতকাল দিনভর আওয়ামী লীগ সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৭টি থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রেঞ্জ অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনদের অন্তত ৩৫ কার্যালয়ে ভাঙচুর শেষে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিপরীতে বিএনপির দুটি কার্যালয়ে আগুন দেয় সরকার সমর্থকরা। এর আগে গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসায় হামলার পর বিএনপির চার নেতার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হামলায় ঘরের এসি, জানালা ও গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। চাঁদপুর শহরের জে এম সেনগুপ্ত রোডের সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায় এবং চাঁদপুর পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। শহরের কালীবাড়ি পুলিশ বক্সে ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। বরিশাল নগরীর নবগ্রাম রোডে অবস্থিত পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের বাড়িতে বেলা দুইটার দিকে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বাড়ির ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই সময়ে হুইপের বাসার সামনে পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর ও এগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছে। হবিগঞ্জে বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। পরে সংসদ সদস্যের বাড়ির লাগোয়া দুটি বাসা ও পাঁচ থেকে ছয়টি দোকান পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের খেদন সরদার মোড় ও পৌর শহরের স্টেশন সড়ক এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা দোকানপাট ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত ও বর্তমান সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী বাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। নীলফামারীতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বাসভবন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও আগুন দেন। পুলিশ তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসানের (ছোট মনির) বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। বাসার নিচে সাতটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারা শিবনাথপাড়া এলাকায় পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হকের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। পরে বিক্ষোভকারীরা টাঙ্গাইল শহরের বাইপাস সড়কের দরুন এলাকায় সংসদ সদস্য তানভীর হাসানের মালিকানাধীন পেট্রলপাম্প ও হাইওয়ে রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। ময়মনসিংহে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। লক্ষ্মীপুরে সংসদ সদস্য নুরুউদ্দীন চৌধুরীর বাসায় ভাঙচুর, বগুড়ায় সংসদ সদস্য মজিবর রহমান ও খুলনায় সংসদ সদস্য শেখ হেলালের বাসভবনে হামলা ও আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকালের দিনভর সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১৪ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০১ জন। নিহতদের মধ্যে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন এলাকার ৯১ জন। আর ঢাকায় প্রাণ গেছে ১০ জনের। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন তিন সহস্রাধিক। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, এক সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদের ১৯ নেতাকর্মী রয়েছেন। আন্দোলন ঘিরে গত কয়েক দিনে এ নিয়ে মোট নিহত হয়েছেন ৩১৬ জন। |