শিরোনাম: |
হিট স্ট্রোক এড়াতে যা যা করবেন
|
বর্তমান ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা এখন প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ উঠছে! শুনলাম এই সপ্তাহে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সর্বকালের রেকর্ড ভাঙার (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে) সম্ভাবনা রয়েছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলায়। এই তাপমাত্রায় দিনের পর দিন বাইরে থাকলে বা কাজ করলে ‘হিট এক্সহশন’ বা ‘হিট স্ট্রোক’ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি! ‘হিট স্ট্রোক’ একটা মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং অতি দ্রুত স্পেসিয়ালাইজড মেডিকেল ফ্যাসিলিটিতে না নিয়ে চিকিৎসা করালে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে!
এই গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আমাদের শরীর খুব তাপমাত্রা সেনসিটিভ। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের শরীর বিভিন্নভাবে তা কমাতে কাজ শুরু করে। প্রধানত ঘাম তৈরি করে। যখন আমাদের শরীরের সারফেস থেকে ঘাম ইভাপোরেট হয়ে শুকায় তখন শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটা লিমিটেশন আছে। হিউমিডিটি যদি ৭৫ শতাংশর বেশি হয় তাহলে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজ করে না। মঙ্গলবার ঢাকার হিউমিডিটি ছিল ৭৮ শতাংশ। অতিরিক্ত গরমের কারণে যেসব সমস্যা হতে পারে- প্রথম ধাপে যা হয় তা হচ্ছে হিট ক্র্যাম্প। অতিরিক্ত ঘামের কারণে লবণ ও পানির অভাব হয় এবং এর প্রভাবে মাংশপেশী (বিশেষ করে পায়ের) ক্র্যাম্প (কামড়ানো) শুরু হয়। এরপর এক্সহশন। হিট এক্সহশন এক দফায় হিট এক্সপোজারের কারণে না হয়ে অনেক দিনের কিউমিলিভ এফেক্টেও হতে পারে। যেমন আপনি পর পর ৩-৪ দিন দুই-তিন ঘণ্টা করে বাইরে গরমে থাকলেন। তারপর পাঁচদিনের দিন আপনার হিট এক্সহশনের সিম্পটম শুরু হলো। যারা বয়স্ক, যারা অতিরিক্ত শুকনা বা ওবিজ ও শিশু বা প্রেগন্যান্ট, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে- এরাই বেশি ভালনারেবল। হিট এক্সহশনের লক্ষণ হচ্ছে- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথা ব্যথা, বমিবমি ভাব আর ফেইন্ট ভাব হওয়া। তখন থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে পারেন হিট এক্সহশন কনফার্ম করার জন্য। হিট এক্সহশনের একপর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হার্ট রেট বাড়তে থাকে। কীভাবে চিকিৎসা করবেন প্রথমে রোগীকে ছায়ায় নিয়ে আসুন, রিহাইড্রেশন করুন। ওরস্যালাইন সবচেয়ে ভালো। প্রথমে শুধু ঠান্ডা পানি হলেও চলবে। আশপাশে পুকুর থাকলে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। পুকুর না থাকলে বাথটাবে শুইয়ে দেন এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দেন। তাও না থাকলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে। তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে নিন। তাপমাত্রা না নামলে আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে এবং সর্বোচ্চ গতিতে টেবিল ফ্যানে শরীর শুকিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ঠান্ডা পানির রিহাইড্রেশন খুব জরুরি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, শুধু পানি অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য ওরস্যালাইন উপকারী। যদি হিট এক্সহশনের ঠিকমতো চিকিৎসা করা না যায় অথবা ডায়াগনোসিস করা না হয় তবে ‘হিট স্ট্রোক’ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। যদি দেখেন স্কিন শুকনো ও লাল হয়ে যাচ্ছে; ঘাম হচ্ছে না, পালস হাই, রোগী উল্টা-পাল্টা কথা বলছে অথবা কোনো কথা বলছে না বা রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে, তাহলে ‘হিট স্ট্রোক’ সন্দেহ করুন। এরপরের ধাপে একের পর এক অর্গান ফেল করা শুরু করবে। প্রথমে ব্রেইনের নিউরনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর আমাদের লিভার ও রক্তনালীর সেলগুলোর ড্যামেজ হতে থাকবে। এমনকি সব অর্গানই ফেল করবে। রোগী এই অবস্থায় পৌঁছে গেলে ওপরের স্টেপগুলো (ধাপ) তো নিতে হবেই, সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ আছে এমন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে রোগীকে ঢাকা পাঠানোর নামে আরও ১০ ঘণ্টা গরমের মধ্যে (পথে ট্রাফিক জ্যামে) ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না। আপনার স্থানীয় ওষুধের দোকানিকে বলুন কিছু স্যালাইনের ব্যাগ ফ্রিজে রেখে দিতে (ডিপ ফ্রিজ নয়)। রোগীকে ওই ঠান্ডা স্যালাইন ইন্টারভিনাস দিতে পারলেও অনেক কাজ হবে। তবে মূল লক্ষ্য হবে কেউই যাতে ‘হিট এক্সহশন’ পর্যায়ে না যায়। ঘরের বাইরে যেতে হলে সঙ্গে বড় ঠান্ডা পানির ফ্লাস্ক বা বোতল রাখুন এবং কিছুক্ষণ পরপর পানি খেয়ে মুখ ভিজিয়ে রাখুন। শিশুরা যারা স্কুলে যায়, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে তাদেরকে স্কুলে না পাঠানোই ভালো। স্কুলে তো আর এসি নেই। বেশি গরম পড়লে স্কুল বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। যত হালকা বা খোলামেলা পোশাক পরা যায় ততই ভালো। নারীরা রান্নাঘরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থাকেন। গরমের দিন রান্না ঘরের তাপমাত্রা অন্যান্য কক্ষের চেয়ে অনেক বেশি। এই ব্যাপারটাও অনুগ্রহ করে মাথায় রাখা দরকার। |