শিরোনাম: |
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে নুসা এনজিও, তদন্ত শুরু
স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ খালেদের পক্ষে কাজ না করলে চাকরি থাকবে না
|
বর্তমান প্রতিবেদক: শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ডাঃ খালেদ শওকত আলীর নির্বাচনি প্রচারণায় না গেলে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির (নুসা) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকুরী হারানোর হুমকিতে রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ওই এনজিওতে চাকুরীরত প্রায় ১ হাজার ২শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অধিকাংশরাই চাকুরী হারানোর ভয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা) ভৌগলিকভাবে পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি, দুর্য়োগ প্রবন এলাকা ও দরিদ্রঘন অঞ্চল শরীয়তপুর জেলায় দুঃস্থ মানুষদের মাঝে ত্রান ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সনে নড়িয়া উপজেলার কিছু সংখক সমাজ উজ্জিবক ও উন্নয়ন সংগঠকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর মূল স্বপ্নদ্রষ্টা সংগঠক ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী। তাঁর মৃত্যুর পর বর্তমানে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন মরহুম কর্নেল (অব.) শওকত আলীর স্ত্রী মাজেদা শওকত আলী। অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ ও পরিচালনা বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই তাদের একই পরিবারের। শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে একেএম এনামুল হক শামীম নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেশোরে। নৌকার প্রার্থী একেএম এনামুল হক শামীম গত ৫ বছরে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করায় তার জনপ্রিয়তা শীর্ষে। ফলে শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকা নড়িয়া ও সখিপুরের সকল দলীয় নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এনামুল হক শামীমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। পক্ষান্তরে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক মাজেদা শওকত আলীর পুত্র ডাঃ খালেদ শওকত আলী। নির্বাচনী প্রচারণায় কর্মীহীন হয়ে পড়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাঃ খালেদ শওকত আলী। একারণে তাদের পরিচালিত এনজিও নুসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করার জন্য একদিকে যেমন বোনাস দেয়ার লোভ দেখাচ্ছেন অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণায় না গেলে চাকুরী থেকে বহিস্কারের হুমকি প্রদান করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। অফিস সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উন্নয়ন সমিতিতে কর্মরত ১ হাজার ২শ’ লোকের মধ্যে নড়িয়া ও শরীয়তপুরে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোক নিরুপায় হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নুসায় কর্মরত এক কর্মকর্তা ও কয়েকজন মাঠকর্মী অভিযোগ করে বলেন, আমরা সব সময় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট প্রদান করে আসছি। এখন চাকুরী বাঁচাতে বাধ্য হচ্ছি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে। নড়িয়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, নুসায় কর্মরত চাকুরীজীবীদের বোনাসের লোভ দেখিয়ে অথবা চাকুরী থেকে বরখাস্ত করার ভয় দেখিয়ে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যা নির্বাচনী আচরণ বিধির পরিপর্ন্থী। এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক মাজেদা শওকত আলী বলেন, এধরনের ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। এগুলো প্রপাগন্ডা ছড়ানো হচ্ছে। তাছাড়া নুসায় কর্মরত অনেকের বাড়ি অন্য জেলায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে নুসাকে নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে নড়িয়া উন্নয়ন সমিতির যুগ্ম পরিচালক জয়দেব চন্দ কুন্ডু মুঠোফোনে বলেন, আমরা কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণে বাধ্য করিনি। তবে অনেকেই এলাকার ভোটার, সেক্ষেত্রে অফিস বন্ধের দিন কেউ যদি কারো পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালায় সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। মুঠোফোনে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ বৈদ্য বলেন, এ ধরণের একটা গুঞ্জন শুনেছি। তবে কোন চাকুরীজীবীকে চাকুরী হারানোর ভয় দেখিয়ে যদি নির্বাচনী প্রচারণায় বাধ্য করা হয় এবং এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাই, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবন্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট আসলে আমরা উপরে জানাবো।
|