শিরোনাম: |
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
|
বর্তমান প্রতিবেদক : মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত দেশের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
বুদ্ধিজীবী দিবসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় স্মৃতিসৌধ। পরে দলে দলে যোগ দেয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় স্লোগান দিয়ে মিছিল করে আসতে থাকে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার, আলবদররা পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, বুদ্ধিজীবী আমরা কাদের বলবো? যারা শুধু স্কুল-কলেজে পড়িয়েছে বা যারা সাংবাদিকতা করেছে, তাদের? কিন্তু গ্রামীণ স্তরেও অনেক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তাদের লেখনী ও অবদান সম্পর্কে লোকসমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। বাংলা একাডেমি সেই কাজটি করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা অপপ্রয়াস চলেছে বিভিন্ন সময়ে। তাদের মধ্যে যেন একটা উপলব্ধি জাগ্রত হয় যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গঠনে একটি স্বপ্ন রেখে গেছেন। সেই সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যে প্রত্যয়, সেই প্রত্যয় থেকেই আমরা আজ এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। তিনি আরও বলেন, যত দিন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় নিয়ে আমরা এখানে আসবো। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রত্যুষে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। এ সময় শহীদদের স্মরণে সেখানে তিনি কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপাচার্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতক-পূর্ব শিক্ষাবিষয়ক স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরের পরিচালক, দফতর প্রধান, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা। তিনি বলেন, আমাদের সবকিছুর উৎস আমাদের জ্ঞান, বোধ, আমাদের বুদ্ধি। এসব কিছুর চর্চা বাঙালিদের আজকের বাঙালি করে তুলেছে। আমরা মানুষ, আমরা বাঙালি, তারপর আমরা বাংলাদেশি। বাঙালির ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের মিল আছে। আমাদের বোধের মিল, আমাদের মনের মিল, যা হলো আমাদের নান্দনিকতা। আমরা মানবিক নান্দনিক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন তেমন একজন মানুষ, যিনি মানবিক নান্দনিকতার মাধ্যমে এই বাংলাদেশকে যুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই যুক্তিযুদ্ধটাই বুদ্ধিজীবীরা করেন। পাকিস্তান ও তার দোসররা বুদ্ধিজীবী হত্যা করে এ দেশের যুক্তিযুদ্ধকে চিরতরে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা যারা তাদের উত্তরসূরি আছি, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেবো না। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে এদিন সকালে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এ ছাড়াও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। |