শিরোনাম: |
গাজায় জাতিসংঘ চালিত স্কুলে ইসরাইলের বিমান হামলা: নিহত ৫০
|
গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘ চালিত একটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল জাজিরার। শনিবার (১৮ নভেম্বর) টানা ৪৩তম দিনের মতো গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, এদিন ভোরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছেই জাতিসংঘ চালিত আল ফাখোরা স্কুলে বিমান হামলা চালানো হয়। ইসরাইলি হামলা থেকে বাচতে স্কুলটিতে কয়েক হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল। গাজা থেকে আল জাজিরার এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ‘হামলার পর হতাহত মানুষ এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সরানোর চেষ্টা করছেন।’ ওই প্রতিবেদক আরও জানান, ইসরাইলের চলমান স্থল অভিযানের মধ্যে অনেক ফিলিস্তিনি জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী ইন্দোনেশিয়ান হসপিটাল ছেড়ে জাতিসংঘ চালিত আল ফাখোরা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এদিকে আল ফাখোরা স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গাজার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামলার পর মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই হামলাই প্রমাণ করে যে ইসরাইল বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং তারা গাজার উত্তরাঞ্চল জনশূন্য করতে চায়।’ অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দক্ষিণেও বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলে নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে গাজায় দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন হামাস। অন্যদিকে লেবানন সীমান্ত থেকেও ইসরাইলি সেনাদের অব্স্থান লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। হামাস নির্মূলের নামে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলছে ইসরাইলি তাণ্ডব। একের পর এক বোমা হামলায় কেঁপে উঠছে পুরো উপত্যকা। এরইমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে বেশিরভাগ আবাসিক ভবন। গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবস্থান লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনারাদের। এতে ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর অস্ত্রের গুদাম ধ্বংসের দাবি করেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। ভবনটিতে রকেট, অস্ত্র ও ড্রোনের যন্ত্রাংশ পাওয়ার কথাও জানানো হয়। উত্তরাঞ্চলকে ধ্বংস্তূপে পরিণত করে এতদিন নিরাপদ দাবি করা দক্ষিণেও হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা। গেল ২৪ ঘণ্টায় অঞ্চলটিতে চালানো বিমান ও ড্রোন হামলায় বেশ কয়েকজন নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত ১’র বেশি। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর কিংবা দক্ষিণাঞ্চল নয়, যেখানে হামাস যোদ্ধারা অবস্থান করবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। ইসরাইলি সেনারা হামলা জোরদার করলেও তীব্র প্রতিরোধ করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। গাজার অভ্যন্তরে নেতানিয়াহু বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানোর নতুন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। এতে ইসরাইলি সেনাদের ওপর রকেট ও স্নাইপার দিয়ে হামলার চিত্র দেখানো হয়। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে সেনাচৌকিতে হামলার দাবি করেছে সংগঠনটি। এতে কয়েকজন সেনা নিহত ও সামরিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবিও করা হয়েছে। তবে লেবাননে হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলও। বিমান ও ড্রোন থেকে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। এদিকে রেকর্ডকৃত এক অডিও বার্তায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠনটি। এমনকি হামাসের ক্ষমতা শত্রুর চেয়েও বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি। হানিয়া আরও বলেন, গাজায় অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইল ব্যর্থতা, হতাশা এবং পরাজয় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। তিনি জানান, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি এবং জোরপূর্বক বন্দিদের পুনরুদ্ধারের বিষয়ে শত্রুদের যে পরিকল্পনা ছিল সেটিকে ব্যর্থ করে দিয়েছে গাজার বাসিন্দা এবং প্রতিরোধ যোদ্ধারা। হানিয়া হুঁশিয়ার করে বলেন, আল-কাসাম ব্রিগেড এবং প্রতিরোধ দলগুলো গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্বকে পরাজিত করবে। এদিকে হামাস-ইসরাইল সংঘাতের জেরে বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যে যুক্তরাষ্ট্রের নগ্ন সমর্থনে বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরাইল সেই দেশের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে আন্দোলন। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটনের বিক্ষোভকারীরা। পশ্চিমাদের তীব্র সমালোচনায় রাজপথে নেমেছে জর্ডানের বাসিন্দারা। বিক্ষোভ হয়েছে লেবাননেও। |