শিরোনাম: |
নরসিংদী-২ আসন
নৌকার প্রচারণায় চার প্রার্থী, বিএনপিতে একক
|
মো: তারেক পাঠান, পলাশ (নরসিংদী): দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগম হয়ে উঠেছে নরসিংদীর- ২ (পলাশ) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সারা দেশের ন্যায় পলাশ আসনেও তাদের স্বস্ব অবস্থান গড়তে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সভা সেমিনার ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড গুলো প্রচারণার মধ্য দিয়ে চলছে রাজনৈতিক কার্যক্রম।
অপরদিকে বিএনপি সল্প পরিসরে সভা সমাবেশ করলেও এই দিক দিয়ে জাতীয় পার্টি (জাপা) রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ উন্নয়নে কে কি ভূমিকা রেখেছে তার হিসাব-নিকাশ কষতে শুরু করেছেন ভোটাররা। তারা মনে করছেন, সুষ্ঠ ভোট হলে, কোন প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে জনগণের উন্নয়ন হবে, এসব বিষয় নিয়ে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ। এ আসনের বর্তমান সংদস সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান (দিলীপ) গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা মার্কা প্রতীকে সংদস সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি পলাশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব কামরুল আশরাফ খান পোটনের আপন বড় ভাই। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান কামরুল আশরাফ খান পোটন । বর্তমানে আসনটিতে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন, বর্তমান সংদস সদস্য পলাশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ । কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও দৈনিক সংবাদের সম্পাদক-ঘোড়াশাল মিয়া বাড়ির সন্তান আলতামাশ কবির মিশু। নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. ইঞ্জি. মাসুদা সিদ্দিক রোজী। এছাড়া মহাজোটের প্রার্থী চেয়ে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছেন নরসিংদী জেলা জাসদের সভাপিত ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জায়েদুল কবির। অপরদিকে এ আসনটিতে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও জাতীয় পার্টির নরসিংদী জেলার উপদেষ্টা রফিকুল আলম সেলিম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ স্বপন প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামীলীগঃ স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলেও পলাশ আসনে বিজয়ের মুখ দেখেনি আওয়ামীলীগ। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বরাবরই ড. আবদুল মঈন খান এ আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এমপি ও মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। সে সময়কার পলাশ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি হাসানুল হক হাসান, ঘোড়াশালের মিয়া পরিবারের সন্তান খায়রুল কবির ও নৌ-বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার নুরুল ইসলাম আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজীত হন। দীর্ঘ বছরের পরাজয়ের গ্লানি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে পলাশের তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। তখন থেকেই পাল্টে যায় আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অঙ্গন। সভাপতি ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ রাজনৈতিক বিচক্ষনতায় খুব অল্প সময়ে আওয়ামীলীগের দুর্বল সংগঠনকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসেন। যার প্রতিফলন হিসেবে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো বিএনপির ঘাঁটি থেকে ড. আবদুল মঈন খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেন। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ দেখে স্বার্থকতার মুখ। এরপর আর থেমে যায়নি আওয়ামীলীগ। দলীয় প্রার্থী দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান,পৌরসভার মেয়র ও চারটি ইউনিয়নের আসন গুলোকেও অর্জন করে নেয়। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে মহাজোট থেকে নৌক প্রতীকে জাসদ নেতা জায়েদুল কবিরকে মনোনয়ন দিলে অনেকটা বিভ্রান্তীকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় নেতাকর্মীদের। সে সময় সভাপতি, আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান ধরে রাখার জন্য তার আপন ছোট ভাই কামরুল আশরাফ খান পোটনকে সতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্যের পদটি পূণরায় দখলে নেয়। দশম নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন নেওয়া জাসদ নেতা জায়েদুল কবিরের পক্ষে আওয়ামীলীগের কিছু নেতাকর্মী নির্বাচনী কাজ করলেও দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই সতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপকে আওয়ামীলীগ নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন দিলে সংসদ সদস্যের পদটিতে তিনি বিজয় অর্জন করেন। এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয় প্রত্যাশী আলতামাশ কবির মিশু জানান, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারব। নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. ইঞ্জি. মাসুদা সিদ্দিক রোজী জানান, সমাজ উন্নয়নসহ দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমি ভূমিকা রেখেছি। করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ভোটারদের ধারে-ধারে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন বলে তিনি আশাবাদি । অপরদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) থেকে পলাশ আসনে পুণরায় দলীয় মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। জায়েদুল কবির বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও এমপি পরিবারের চাপে নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এরপর একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়ায় দলের সম্মানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হবে তার ভিন্ন চিত্র। এদিকে পলাশ আসনের বর্তমান এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান (দিলীপ) জানান, নরসিংদী-২ পলাশ নির্বাচনী আসনের উপজেলা চেয়ারম্যান,পৌর মেয়র ও প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পলাশের আসনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি আশাবাদী। জাতীয় পার্টিঃ একসময়ে পলাশের রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় পার্টি ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু সাংঠগনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বের অভাবে তা এখন তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। পলাশের অধিকাংশ নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে লিয়াজু করে চলছে। নবম দশম ও একাদশ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টি সরাসরি আওয়ামীলীগের পক্ষে অবস্থান নেয়। জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতা জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আব্দুল মঈন খানকে পরাজিত করে আওয়ামীলীগের বিজয় অর্জনে জাতীয় পার্টি বিরাট ভূমিকা পালন করে। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ স্বপন জানান, শরীক দল হিসেবে বিগত সময়ে আমরা আওয়ামীলীগকে কি দিয়েছি আর কি পেয়েছি তা নিয়ে আমাদের হিসাব নিকাশ রয়েছে। এবার দ্বাদশ নির্বাচনে আমাদের পার্টি থেকে একক প্রার্থী দেওয়া হবে। আমি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপিঃ গেল ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পলাশের বিএনপির শক্ত ঘাঁটির প্রথম পরাজয় হয়। এরপর থেকে একেএকে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোও চলে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের কব্জায়। এতে করে ভেঙে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল। সেই সাথে মামলা-হামলার ভয়ে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়তে হয় বিএনপিকে। নিজেদের ঘাঁটি পুণরায় ফিরে পেতে বিভিন্ন সভা সমাবেশের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছে উপজেলা বিএনপি। পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এরফান আলী জানান, পলাশ উপজেলা এখনো বিএনপির ঘাঁটি রয়েছে। যা একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ মিলবে। দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে এরফান আলী ও ঘোড়াশাল পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি বিএনপির সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: আলম মোল্লা জানান, পলাশের বিএনপির একক প্রার্থী ড. আব্দুল মঈন খান। নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে এ আসনটিতে মঈন খান বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। |