শিরোনাম: |
সরকারি ও দলীয় কর্মসূচি পালন না করার অভিযোগ ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে
|
সবুজ ইসলাম, পাবা সংবাদদাতা : তিনি একই সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এই দুই দায়িত্বে থাকার পরেও তিনি মানেন না দলীয় ও সরকারি কর্মসূচি। এমনটাই অভিযোগ রয়েছে রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে। গত ২৮ ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের উপ-নির্বাচনে এই উপজেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন তিনি। জানা যায় নির্বাচনের পরবতীর্তে প্রথমদিকে উপজেলার সরকারি যে সকল কর্মসূচি থাকে সেগুলোতে তিনি নিয়মিতই উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু সময় যাওয়ার সাথে সাথে তিনি এগুলো কর্মসূচিতে উপস্থিত হওয়ার প্রবণতা কমে আসতে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি জাতীয় দিবসগুলোতেও উপস্থিত থাকেন না বলে জানা যায়।
গত ১৫ ই আগস্ট (২০২৩ ইং) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি নির্দেশনা ছিলো প্রতিটি ইউনিয়ন,পৌরসভা ও উপজেলাতে এই দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করার। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহীর পবা উপজেলাতেও ছিলো নানা কর্মসূচি। উপজেলা চত্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতিতে পূস্পার্ঘ অর্পণ করা, শোক দিবস উপলক্ষে র্যালি, হলরুমে দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। এগুলো কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর। কিন্তু তিনি এগুলো কর্মসূচিতে উপস্থিত হোন নি। এই বিষয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিসে যোগাযোগ করা হলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “অফিসের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মহোদয়কে দাওয়াতপত্র দেওয়া হয়েছে এবং আমি নিজেও উনাকে শোক দিবসের প্রগামে উপস্থিত হওয়ার জন্য ফোন করেছি, এর বাইরে আর কিছু বলতে পারবো না”। সরকারি কর্মসূচির বাইরেও আগস্ট মাস জুড়ে পবা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে শোক সভা, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে স্ব স্ব ইউনিয়ন ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ। এগুলো প্রগামের প্রতিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীকে কোথাও বিশেষ অতিথি,কোথাও প্রধান বক্তা হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু তিনি এই মাসে এখন পর্যন্ত একটি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের প্রগামেও উপস্থিত হোননি বলে অভিযোগ রয়েছে। পবা উপজেলার অন্তর্গত কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে শোক দিবস উপলক্ষে শোক সভা ও দোয়া মাহফিল প্রথম অনুষ্ঠিত হয় । সেই শোক সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর। কিন্তু তিনি সেই সভায় উপস্থিত হোননি। এই বিষয়ে কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা বলেন, “আমি নিজে ইয়াসিন আলী ভাইকে প্রগামে উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি এবং পরে ফোনও দিয়েছি। কিন্তু উনি আমাকে সরাসরি বলে দিয়েছিলেন উনি আমাদের এই প্রগামে আসবেন না”। কাটাখালি পৌরসভার ন্যায় দর্শনপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আয়োজনে শোক দিবস উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচি ছিলো। তিনি সেখানেও উপস্থিত ছিলেন না। এই বিষয়ে দর্শনপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহব্বায়ক সারোওয়ার জাহান মিল্টন বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বর্ধিত সভা হয়। সেই সভার পরবর্তীতে আমরা আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীকে দাওয়াত দেই । তিনি আমাদের এই প্রগামে আসেননি। কিন্তু তিনি আমাদের এই প্রগামে কেন আসেননি তা আমরা জানিনা আর বলতেও পারবো না”। পবা উপজেলার দামকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এই বিষয়ে বলেন, “আমাদের ইউনিয়নে শুধুমাত্র এই শোক সভা না এর আগে বিভিন্ন প্রগাম যেমন বাজেট সভায় উনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেই, ব্যানারে উনার নাম রাখা হয় । তারপরেও তিনি আমাদের প্রগামে আসেন না। এখন কেন আসেনা সেটা আমি বলতে পারবো না , হয়তবা টাকা খরচ হবে সেই ভয়ে তিনি আসেন না”। নওহাটা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক একই বিষয়ে বলেন, “এই শোক দিবসের প্রগামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে ভালোবেসে একজন হতদরিদ্র ভ্যান চ্যালক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শোক দিবসের প্রগামে আসে। বঙ্গবন্ধু প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সেই দিন সপরিবারের নিহত সকলের জন্য দোয়া করতে নওহাটা পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে আয়োজিত শোক সভা ও দোয় মাহফিলে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলো। আমাদের এই প্রগামে আমরা আশা করছিলাম আমাদের শ্রদ্ধেয় পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী চাচা উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু তিনি আমাদের এই শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে আসেননি। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে উনাকে দাওয়াত জানিয়েছিলাম”। এই বিষয়ে জানতে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজের কাছে যাওয়া হলে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং সেই দিন রাতে সপরিবারে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে শোক দিবস উপলক্ষে পবা উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন,পৌরসভা, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিয়েছি এবং দলের নেতাকর্মী সহ সকলকে তা মানতে হবে বলে বলা হয়েছে। এগুলো প্রগাম বাস্তবায়িত করা আমার পক্ষে একা একা একটু কষ্ট হয়ে যায় সেই জন্য আমি আমার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীকে বলি কিন্তু তিনি আসেন না। ১৫ই আগস্ট সকালে আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পবা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলের শ্রদ্ধা জানাই। তার আগের দিন এবং ১৫ ই আগস্ট আমি উনাকে কয়েকবার ফোন করি, কিন্তু তিনি আমার ফোন রিসিভ করেন না। এছাড়াও শোক দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য আমি উনাকে দাওয়াতপত্র দিয়েছি তাও তিনি এখন পর্যন্ত কোন ইউনিয়নে শোক দিবসের প্রগামে আসছেন না। উনি উনার দায়িত্বে থেকে এগুলো প্রগামে আসা প্রয়োজন তার কারণ হচ্ছে উনি আমাদের পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু তিনি কেন এগুলো প্রগামে আসছেন না তা আমি বলতে পারছি না” । এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী মুঠেফোনে বলেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম সেই জন্য কয়েকদিন আগে ইন্ডিয়া থেকে এসেছি। এছাড়াও শোক দিবসে আমি ঢাকায় অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন প্রগামে উপস্থিত হতে পারিনি” । আপনি এখন তো রাজশাহী আছেন এবং উপজেলায় অফিস করছেন আর এখনো প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়নে শোক দিবসের প্রগাম হচ্ছে তাহলে আপনি সেগুলো প্রগামে যাচ্ছেন না কেন ? এই প্রশ্ন উনাকে করা হলে উনি তা এড়িয়ে যান। |