শিরোনাম: |
রাজশাহীর আওয়ামী লীগে ত্যাগীরা কোণঠাসায়
নীতিহীন রাজনীতির ফাঁদে ‘এমপি লীগ’ই শেষকথা!
এমপি ডা. মুনসুরের আশার বাতিঘর নিভু নিভু প্রায়
|
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর-৫ পুঠিয়া-দূর্গাপুরে এখন ‘এমপি লীগ’ই শেষকথা। আদর্শের রাজনীতি বলতে কিছু নেই। যারা যতক্ষণ এমপির স্বার্থ হাসিলসহ মন জুগিয়ে চলতে পারবে; ততক্ষণ তারাই এমপির ডান হাত। তাদের হাতেই থাকে সবকিছুর ক্ষমতা। যে কোনো বিষয়ে তারা যেটি বলে, সেটিই সিদ্ধান্ত। প্রশাসনও তাদের সমীহ করে চলেন। রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসনের শাসক দল আওয়ামী লীগে এমপি ডা. মুনসুর রহমানের নিজ এলাকায় রাজনীতির সদর-অন্দরে এমন চিত্র ধরা দিয়েছে অনুসন্ধানে। নীতিহীন রাজনীতির ফাঁদে এমপি লীগই রাজনৈতিক দল বিশেষ কিছু ব্যক্তির যোগে এলাকায় ক্রীড়নকে ত্রাসের রাজনীতি কায়েমে পরিণত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) সংসদীয় আসনে আওয়ামী শিবিরে চাপা অসন্তোষের পালে প্রতিবাদের জোরালো বাতাস বেশ জোরেশোরে বইতে শুরু করেছে। কেউ কেউ সাহস করে কথা বলছেন। ফাঁস করে দিচ্ছেন নীতিহীন রাজনীতির ফাঁদে এমপি লীগের সব গুমোর। অনেকে আবার কৌশলী। হেনস্তা হওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে চান না। তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নানা বঞ্চনা আর ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন-কীভাবে; তাদের চোখের সামনে আ’লীগের মতো একটি ঐতিহাসিক বড় দল থেকে বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় ক্ষমতার অপরাজনীতির কাছে হেরে গেল আদর্শের রাজনীতি। সূত্র মতে, এবার রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) সংসদীয় আসনের ডা. মুনসুরের আশার আলোর বাতিঘরগুলো নিভু নিভু প্রায়। চারিদিকে জেঁকে বসেছে হাইব্রিড। তোষামোদকারীদের জয়জয়কার। তবে আশার কথা, এই অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সাবেক এমপি ও রাজশাহী জেলার সম্পাদকের নির্দেশে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্ল্যাটফরমে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করছেন। চাইছেন কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয় দলের এই দুর্বৃত্তায়নের বৃত্ত ভাঙতে কঠোর হবেন। বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে থাকবেন, মূল্যায়ন করবেন এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ দারাকে নৌকার মাঝি বানাবেন, এটায় স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা। সূত্রগুলো জানায়, টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও রাজশাহীতে আ’লীগের আদর্শিক রাজনীতি প্রায় উধাও। এই এক যুগে দলের দুর্দিনের সঙ্গী ত্যাগী নেতাকর্মীদের বড় অংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তেমনইভাবে হাইব্রিডদের অনেকেই উপজেলায় সেসব পদ-পদবিতে আসীন। পুঠিয়া-দূর্গাপুর সংসদীয় আসনের এলাকায় এখন সংগঠন চলছে এক ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর। যাকে সবাই নাম দিয়েছেন ‘এমপি লীগ’। এদিকে এমপি ডা: মুনসুর ভবিষ্যতে ক্ষমতার রাজনীতির রোডম্যাপ ঠিকঠাক রাখতে বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে চান না। বরং রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রে রূপ দিতে যে যার মতো আস্থাভাজনদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব শক্তির নিñিদ্র বলয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বহাল এই নিখুঁত কারুকাজ। ত্যাগীদের ত্যাগ করে বসিয়ে দিচ্ছেন নিজের ধ্বজাধারীদের। এ সুবাদে বিতর্কিতরাও এমপিদের আশীর্বাদে যেখানে-সেখানে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদপদবিতে শক্ত আস্তানা গেড়ে বসছেন। কেউ কেউ মনোনয়ন পেয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যানে আবার অনেকে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। এসব নিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাবলু মুখ খোলেন। রাখঢাক না রেখে খোলাখুলি তুলে ধরেন বাস্তব চিত্র। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আ’লীগের রাজনীতি রাজশাহীতে এখন ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। সংসদ সদস্যরা এলাকায় নিজের মতো করে দল চালান। যারা কেবল শুধু হুজুর হুজুর করতে পারেন; পদপদবি, সুযোগ-সুবিধা তারাই লুটছেন। ত্যাগীরা উপেক্ষিত। দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। জেলা আ’লীগের কোনো কর্মসূচিতে সংসদ সদস্যরা প্রায়ই থাকেন না।’ এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘এমপি সাহেবরা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন ও কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে হয়তো তারা জেলা কমিটির কর্মসূচিতে থাকতে পারেন না। সংসদ সদস্যরা জেলা কমিটির সদস্য। তাদেরকে ডাকা হয়। কিন্তু আসতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে দলকে শক্তিশালী করতে হলে পদবঞ্চিতদের মান-অভিমান ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। এটা অব্যাহত থাকলে তা দলের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে।’ সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান রাজনীতির বাইরের লোক। এখানকার চিত্র অন্য এলাকার ঠিক বিপরীত। পুঠিয়া দুর্গাপুরে এমপির কোনো রাজনীতি নেই। এই আসনের সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা এখন জেলা কমিটির সম্পাদক। সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বর্তমান এমপির যোগাযোগও প্রায় শূন্য। স্থাসনীয় নেতাকর্মীরা সাবেক এমপি দারার নেতৃত্বে চলেন এবং আগামী জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনে তাঁকেই আবার যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন এলাকাবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুঠিয়া উপজেলা আ’লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ডা. মনসুর এমপির সঙ্গে দলের কেউ না থাকার কারণ তিনি কাউকে চেনেন না। চেষ্টাও করেন না। এমপি দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন না। সাবেক এমপি দারা বলেন, ‘পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের নেতাকর্মীরা সংগঠিত। এমপি সাহেব তার মতো চলেন। ওসব নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। দলের নেতাকর্মীরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসেন। আমি সাধ্যমতো দেখি।’ ডা. মনসুর রহমান এমপি বলেন, ‘আমি এলাকার উন্নয়নে মনোযোগী। রাজনীতির জটিল গর্তে আটকাতে চাই না।’ তার দাবি, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। অপরাদিকে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের সম্মেলনে রাজশাহী জেলা আ’লীগের নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল ঘটে। আগের কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদ পড়েন। এতে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এই দুই নেতার অনুসারীরা কেউ পদ পাননি। অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহীতে আ’লীগকে সুসংগঠিত করার ব্যর্থ অগ্রনায়ক ছিলেন জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। পদের ক্ষমতায় অপ্রকৃত রাজনীতি ও আদর্শহীন নেতা হওয়ায় জমি-বাড়ী দখল অর্থ আত্মসাৎ করায় তার কাল হয়েছে। হারাতে হয়েছে পদও। এসব কারণে তিনিসহ তার অনুসারীরা এখন প্রায় নিষ্ক্রিয়। এর ফলে মাঠের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েছে। |