শিরোনাম: |
বিশ্বকাপ জাদুঘরে রিচার্লিসনের গোলটি
|
বর্তমান ডেস্ক: বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে ব্রাজিলের সাম্বা নৃত্যের যোগসূত্রটা পুরোনো। ব্রাজিলিয়ানদের সাম্বা নাচ এবং তাদের মাঠের খেলা, দুটোই বিশেষ ছন্দময়। গোল করার পর তাই সাম্বা নাচের মাধ্যমে ব্রাজিলিয়ানরা দুটোকে একসুতোয় গেঁথে ফেলেন। পরশু কাতার বিশ্বকাপে দুটোই দেখা গেল একসঙ্গে। সার্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সত্যিকার অর্থেই ব্রাজিল ছন্দময় ফুটবল খেলেছে। গোলের পর দল বেঁধে উপহার দিয়েছে সাম্বা নাচ। আর খেলার সঙ্গে সাম্বা নাচের এই মিলন ঘটানোর উপলক্ষ্য তৈরির কারিগর ছিলেন একজনই—রিচার্লিসন।
ম্যাচে ব্রাজিল ২-০ গোলে জিতেছে। দলের হয়ে দুটো গোলই করেছেন রিচার্লিসন। চাইলে তার দ্বিতীয় গোলটিকেও ‘সাম্বা’র ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন! বাইসাইকেল কিকে করা তার গোলটি ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য সুন্দর। মোহনীয়, দর্শনীয়তায় এতটাই সুন্দর ছিল যে, বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা গোলটিকে যথাযথ মর্যাদা দিতেও কার্পণ্য করেনি। এরই মধ্যে রিচার্লিসনের দ্বিতীয় গোলটির জায়গা হয়েছে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা গোলের জাদুঘরে! আগের ২১ আসরের সবচেয়ে দর্শনীয় গোলগুলো রাখা হয়েছে জাদুঘরে। রিচার্লিসনের বাইসাইকেল গোলটির আশ্রয় হয়েছে সেখানেই। টটেনহামের ২৪ বছর বয়সি ফুটবলার এবারই প্রথম বিশ্বকাপে খেলছেন। ফলে পরশু সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপে তার অভিষেক ম্যাচ। তো অভিষেকেই কেড়ে নিয়েছেন সবটুকু আলো। করেছেন দুই গোল। জিতে নিয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। তবে রিচার্লিসন বেশি খুশি দলকে শুভ সূচনা এনে দেওয়ায়। আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো পরাশক্তিরা প্রথম ম্যাচেই হারের ধাক্কা খেয়েছে। অল্প হলেও ব্রাজিল শিবিরেও হয়তো সেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু ২৪ বছরের রিচার্লিসনের পায়ের জাদুতে সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পেয়েছে স্বস্তির জয়। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ- প্রায় পুরোটা সময়ই ছন্দময় ফুটবল খেললেও ব্রাজিলকে গোলের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৬২ মিনিট পর্যন্ত। দলের প্রাণভোমরা নেইমার, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রাফিনহা—শত চেষ্টা করেও সার্বিয়ার রক্ষণদুর্গ ভাঙতে পারেননি। তা পারছিলেন না রিচার্লিসনও। তবে ৬২ মিনিটে তিনিই সার্বিয়ার রক্ষণ দেয়ালভেদ করে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শট কোনো রকমে ঠেকিয়ে দেন সার্বিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু বল তিনি গ্লাভস বন্দি করতে পারেননি। বল চলে আসে রিচার্লিসনের পায়ে। তিনি আলতো টোকায় জড়িয়ে দেন জালে। হাফ ছেড়ে বাঁচেন ব্রাজিল কোচ। বিশ্বজুড়ে ব্রাজিলের কোটি কোটি সমর্থকরাও। ১১ মিনিট পর এই রিচার্লিসনই দেখান আসল জাদু। দ্বিতীয় গোলটিও সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পাস থেকেই করেন তিনি। তবে ভিনিসিয়ুসের পাসটি নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে বল একটু পেছনে চলে যায়, রিচার্লিসন মুহূর্তেই ঘুরে দর্শনীয় বাই-সাইকেল কিকে বল জড়িয়ে দেন জালে। লুসাইল স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা এবং সারা দুনিয়া জুড়ে টিভি পর্দায় খেলা দেখা কোটি কোটি দর্শক সাক্ষী হয় নয়ন জুড়ানো এক গোলের। ম্যাচে সার্বিয়ার বক্সের ভেতরে তিন বার বল পেয়েছেন রিচার্লিসন। তার দুটিতেই তিনি গোল করেছেন। তার জাদুর কারণেই রাফিনহা মিসগুলো বড় হয়ে উঠেনি। ব্রাজিলিয়ানরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল কাতারে মাঠের খেলার পাশাপাশি বিশেষ নাচের মাধ্যমেও দর্শকদের মন জয় করবেন তারা। ফুটবলের সঙ্গে ১০টি বিশেষ নাচের অনুশীলনও করে আসেন তারা। পরশু দুই গোলের পর দুটি নাচ দেখা হয়ে গেল। ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা দল বেঁধে বিশেষ সেই নাচের মাধ্যমেই গোল উদযাপন করেছেন। ম্যাচ শেষে জয় উদযাপনও করেছে নাচের মাধ্যমেই। রিচার্লিসনরা নিশ্চয় এই ধারা ধরে রাখতে চাইবেন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই। |