শিরোনাম: |
তারুণ্যের হাতে সেলেসাওদের মশাল
|
বর্তমান ডেস্ক: সেই ২০১৪ বিশ্বকাপ। নেইমারেই জ্বলেছিল সম্ভাবনার আলো, আবার নিভেছিলও নেইমারের চোটে। আট বছর পর কাতারে এসে মনে হচ্ছে ব্রাজিলের ফুটবল মশালটা আর নেইমারের হাতে নেই। সেটি ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, রাফিনহাদের মতো তরুণদের বজ মুষ্টিতে উঁচিয়ে ধরা।
নতুন প্রজন্মের হাতে সেলেসাওদের বিশ্বকাপ স্বপ্নও। এটা যেন কাতার বিশ্বকাপের আয়োজকরাও বুঝে গেছে। বিলবোর্ডে নেইমারের চেয়ে ঢের এগিয়ে মেসি-এমবাপ্পেরা। ব্রাজিল শহরে, অথচ নেইমারের কাট আউট নেই—অভাবিত ঘটনাই। তবে ব্রাজিল কোচ তিতের জন্য এটাই সুখের এবং আনন্দের। তিনি পুরো ব্যাপারটা দেখেন ইতিবাচকভাবে, ‘আমার কাছে ব্যাপারটা খুব ভালো লাগছে। তরুণ খেলোয়াড় উঠে আসছে এবং এটা বিভিন্নভাবে নেইমারের জন্য ভালো। ’ সেটা নাকি পিএসজি মহাতারকাও উপলব্ধি করতে পারছেন ভালোভাবে। নেইমারকে উদ্ধৃত করে তিতে বলেছেন, “একদিন নেইমার আমাকে বলেছে, ‘কোচ, জাতীয় দলে জায়গা নিতে অনেক তরুণ মুখিয়ে আছে। ওরা দারুণ খেলছে। ওদের সবাইকে দলে জায়গা দেওয়াটা আপনার জন্য মধুর সমস্যা হয়ে গেল। ” শুনে তিতে হাসেন এবং নিজের ‘মধুর সমস্যা’ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। ব্রাজিল এখন আর নেইমারনির্ভর দল নয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের মতো তাঁর ইনজুরি হলেও জাতি কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দেবে না, হারিয়ে যাবে না তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্নও। এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে কাতারে হলুদ কেতন উড়িয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসনরা। গত মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে সব দিক দিয়ে নেইমারকে পেছনে ফেলেছেন ভিনিসিয়ুস। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া এই ফরোয়ার্ড প্রথম দুই মৌসুম নিজেকে খুঁজে বেরিয়েছেন। তাঁর চোখ-ধাঁধানো ড্রিবলে প্রতিপক্ষের রক্ষণ চাপে পড়লেও গোলমাল পাকিয়ে ফেলছিলেন গোলের জায়গায়। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি মিলিয়ে দিয়েছেন তাঁর গোলের অঙ্ক। ভিনির প্রতিটি মুভ এখন সুফলা, কখনো নিজের পায়ে কখনো বা সতীর্থকে দিয়ে। গত মৌসুম থেকে এই তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডে নতুন ভরসা খুঁজে পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২২ গোল আর ২০ অ্যাসিস্টে এই উইঙ্গারের ধারেকাছে নেই নেইমার! ব্রাজিলিয়ান তারকার গোল আর অ্যাসিস্ট মোটে ১৩টি। তার ওপর সফল ড্রিবল, নিখুঁত ফরোয়ার্ড পাস ও পরিশ্রমের পরিসংখ্যানে ভিনি এখন ইউরোপসেরা। তাঁর নামে এখানে জয়ধ্বনি না হলেও এমন তারুণ্যের ঝলকে আলোকিত হতে পারে কাতার। বাঁ দিকে নেইমার থাকলে ডানে রাফিনহা। এবার বার্সেলোনায় পাড়ি জমিয়ে তিনি দারুণ শুরু করেছেন। এই পজিশনে তাঁর সঙ্গে লড়াই হবে আরেক তরুণ ফরোয়ার্ড রোদ্রিগোর। রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো এই তরুণ মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন দুই পায়ের ম্যাজিকে। তাহলে নেইমারের জায়গাটা কোথায়? তিতে এই তারকাকে খেলাতে চাইছেন ‘নাম্বার টেন’ হিসেবে, ‘নতুন পজিশনের জন্য নেইমার নিজেকে তৈরি করে ফেলেছে। ওর সৃষ্টিশীলতায় আক্রমণগুলো নিখুঁত হবে, একটু পিছিয়ে থেকে সে খেলাটা যেমন গোছাবে তেমনি ফিনিশারও হবে। এটাই দলে আনবে বাড়তি বৈচিত্র্য। ’ ভিনি-নেইমার-রাফিনহার ত্রয়ী জমে গেলে সেলেসাও আক্রমণভাগ হবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল এবং ভয়ংকর। কাতার আসার আগে তুরিনের মাঠেও আক্রমণভাগে বিভিন্ন কম্বিনেশনের চর্চা হয়েছে। দেখা গেছে, নেইমার অফ দ্য বলে নিজের খেলাটা খেলে সতীর্থকে খুলে দিয়েছেন গোলের জায়গা। আসলে দুর্দান্ত কিছু করতে হলে প্রতিপক্ষের অঙ্কের বাইরে গিয়ে খেলতে হবে, বাজিমাত করতে হবে সৃষ্টিশীলতায়। নইলে পরিণতি আর্জেন্টিনার মতোও হতে পারে। আগের টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার বিশ্বাসে বিশ্বকাপ শুরু করতে গিয়ে তারা সব হারিয়ে বসেছে পুঁচকে সৌদি আরবের কাছে। বিশ্বকাপ বড় কঠিন জায়গা। সবাই আসে প্রতিপক্ষের অঙ্ক ভণ্ডুল করে নিজেদের এগিয়ে নিতে। তিতের শক্তি অভিজ্ঞ নেইমার আর তারুণ্য। দুইয়ের সম্মিলনে দারুণ কিছু আশা করছেন ব্রাজিলের কোচ, ‘তরুণরা ইউরোপের বড় লিগে খেলে এসেছে। তাদের সামর্থ্য আছে, স্বপ্ন আছে। এখানে খেলেই কেউ কেউ আরো বড় হয়ে উঠবে। তবে নেইমারের অভিজ্ঞতা তাদের সাহায্য করবে, তালমিলটা হয়ে গেলে আমাদের বিশ্বকাপ সহজ হয়ে যেতে পারে। ’ আগের দুটো বিশ্বকাপ খেলা নেইমারের অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক সমৃদ্ধ। নিজের সেরা সময়টা হয়তো পার করে এসেছেন ৩০ বছর বয়সী। তবে অন্যদের সেরায় রূপ দেওয়ার কারিগরি সামর্থ্য এখনো তাঁর ফুরিয়ে যায়নি। নেইমারের একটা ডিফেন্সচেরা থ্রু বদলে দিতে পারে কোনো তরুণের ভাগ্য। তাই ব্রাজিল দলের বিলবোর্ডে বিশালাকৃতির নেইমার আছেন। সঙ্গে তারুণ্যের ব্রাশে কাতারে হলুদ ছবি আঁকার পরিকল্পনা তিতের। |