শিরোনাম: |
ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-বর্জ্য
|
বর্তমান প্রতিবেদক: দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ই-বর্জ্য। গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ। এই প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হচ্ছে ডাস্টবিনে। ফলে সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন। এখনই এর ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সামনের দিনে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করবে। দুই-একটি ছোট প্রতিষ্ঠান কিছু ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবে বড় পরিসরে এই উদ্যোগ নেওয়া না গেলে সংকট বাড়বে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের উত্পাদিত পুরোনো হ্যান্ডসেট ফেরত নেয়, তাহলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বিটিআরসি। তিনি বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিকল্পনা না নিলে আগামীতে এগুলো জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি তৈরি করবে। রোববার বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের পর মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব মানিক বলেন, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিক্রেতা ও উত্পাদনকারীর সমন্বয়ে উদ্যোগ নিলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধু উত্পাদক নয়, সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। ই-বর্জ্য নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার সবগুলো দেশই সংকটে রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। এশিয়ার ই-বর্জ্য নিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস ইউনিভার্সিটি গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এশিয়ায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ১২টি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে, এই পাঁচ বছরে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টন। এদের মধ্যে চীনের অবস্থা ভয়াবহ। এ সময় তাদের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৮১ হাজার টন। যা পুরো এশিয়ার জন্য উদ্বেগের বলে বলা হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে বলেছেন, এর জন্য বিজনেস প্ল্যান বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রয়োজন, যাতে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। তাহলে এটা আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না। তার মতে, দিনে দিনে ই-বর্জ্য কমানো যাবে না, আমাদের ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহার আরো বাড়বে। পুরনো প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে যেতে হবে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাও করতে হবে। দেশে সীমিত পরিসরে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এর একটি এনএইচ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হায়দার বলেন, টেলিকম অপারেটর থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। আমরা সীমিত পরিসরে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীদের দিয়ে পুরোনো হ্যান্ডসেট কিনে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা করছি। তার মতে, এর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও বড় আয়োজন দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত, যন্ত্র ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি শেখা। এতে মোবাইল, ল্যাপটপ ও ট্যাব বেশি দিন ধরে ব্যবহার করা যাবে। গুরুত্ব দিতে হবে পুরোনো সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানোর ওপরে। একই যন্ত্র একাধিক কাজ করবে, এমন মাল্টিপারপাস ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। একই চার্জারে সব সংস্থার সব মডেলের মোবাইল চার্জ করা যায়, এমন চার্জারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, ইউনিফর্মের ব্যবহার, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে কিছুটা সুফল মিলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ই-বর্জ্য একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে, যা সমাধানের লক্ষ্যে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ই-বর্জ্যেরে কারণে ঘটছে জলবায়ুর পরিবর্তন। এটা বিশ্বব্যাপীই ঘটছে। |