শিরোনাম: |
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা, নিহত ৪
|
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলার সময় ডনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে, এ ঘটনায় গুলিতে একজন নারী নিহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে বুধবার এ হামলা চালানো হয় বলে এক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে বিবেচিত ক্যাপিটল দখল করে নিয়েছিল। এতে অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ। এরপর ক্যাপিটলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করে, এতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি ও তাণ্ডবে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলার এক নজিরবিহীন দৃশ্যের অবতারণা হয়। দাঙ্গাহাঙ্গামার সময় গুলিতে একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে ওয়াশিংটন পুলিশ জানিয়েছে। এফবিআই জানিয়েছে, তারা দু’টি সম্ভাব্য বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকমাস ধরে যে বিভেদ সষ্টিকারী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছিল ক্যাপিটলে হামলা তার চূড়ান্ত পরিণতি বলে মন্তব্য করেছে। ভোটে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প এবং তার পরাজয় উল্টে দিতে তাকে সাহায্য করার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নির্বাচনের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ট্রাম্প। ক্যাপিটলে হামলার আগে হোয়াইট হাউসের কাছে কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের ক্ষোভ জানাতে সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে বলেন। কর্মকর্তাদের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করতে চাপ দেওয়ার জন্য তাদের বলেন তিনি, সমর্থকদের ‘লড়াই করার’ আহ্বান জানান। দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্যাপিটলের ভিতরে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করেন। ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা যন্ত্রণাদায়ক রাসায়নিক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সাড়ে ৫টার একটু পরে ক্যাপিটল ভবন নিরাপদ বলে ঘোষণা করে পুলিশ। এরপর নির্বাচনী জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু করতে রাত ৮টার পর আইনপ্রণেতারা অধিবেশন ফের শুরু করেন। এরপর অধিবেশনের সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, আজ যারা আমাদের ক্যাপিটলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছ- তোমরা জয়ী হতে পারবে না। চলুন আমরা কাজ শুরু করি। কংগ্রেস সদস্যরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেন। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনল ঘটনাটিকে ‘ব্যর্থ বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে ‘অনাচার ও হুমকির কাছে মাথা নত করবো না’ বলে প্রতিশ্রুতি রাখেন। আমরা আমাদের অবস্থানে ফিরে এসেছি। সংবিধানের অধীনে এবং আমাদের জাতির জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। আর আজ রাতেই আমরা তা করতে যাচ্ছি, বলেন তিনি। বুধবার কংগ্রেস যৌথ অধিবেশনের বিরোধিতা করে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিলেন। সেই সমাবেশে বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। জানাযায়, এই সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতার নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সেখানে এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত আইনপ্রণেতাদের তাদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক বের করে পরার পরামর্শ দেয়। মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লিখেছেন, আমি আমার অফিসের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমাকে লিখতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মিউরিয়েল বাউজার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করেন। ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তা করতে কংগ্রেস ভবনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা, এফবিআই এজেন্ট এবং মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। কারফিউ শুরু হওয়ার পর ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ক্যাপিটলের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেয়। হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পর এই গোলযোগ দেখা দেয়। বক্তব্যে পুরনো অভিযোগ ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার কাছ থেকে নির্বাচন ‘চুরি করে নেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা সবাই ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে তেমন কোনো জালিয়াতি না হওয়ার কথা বলেছেন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবে ট্রাম্পের ২৩২টির বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে আসে ৩০৬টি। এরপর দেশের বিভিন্ন স্টেটে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আদালতে গিয়ে বিফল হয় ট্রাম্প শিবির। যেসব স্টেটে ট্রাম্প অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন সেই সব স্টেটের নির্বাচনের ফল বাতিলের জন্য তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে চাপ দিচ্ছেন, যদিও তার এই ক্ষমতা নেই। কংগ্রেসে স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এক্ষেত্রে কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অ্যারিজোনাসহ কয়েকটি স্টেটের ফল বাতিলের প্রস্তাব তুললে তা কয়েক ঘণ্টার আলোচনার রসদ জোগাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। |