শিরোনাম: |
শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু
সন্ধ্যার পর মণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
|
বর্তমান প্রতিবেদক: দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধন শেষে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শারদীয় দুর্গাপূজার এবারের আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। রাত ৯টার মধ্যে মন্দির বন্ধের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে দেবীপক্ষের। শারদীয় দুর্গাপূজায় সাধারণত মহালয়া ও ষীর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধান থাকলেও আশ্বিন মাস মল (মলিন) মাস হওয়ার কারণে এবার প্রায় ৩৫ দিন পর শুরু হচ্ছে ষী পূজা। বৃহস্পতিবার মহাষী পূজা দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতিমধ্যে কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা এনে স্থাপন করা হয়েছে মন্দিরে মন্দিরে। এবার দেবীদুর্গা আসবে দোলায় চড়ে, আর যাবে গজে বা হাতিতে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, আতশবাজি, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুান এবং ভক্তিমূলক গান হবে না। জনসমাগম বন্ধ করতে এমনকি মন্দিরে মন্দিরে পূজার প্রসাদ খিচুড়ি বিতরণ হবে না। সন্ধ্যার মধ্যে ভক্তদের মন্দিরে না আসতে নিরুৎসাহিত করা হবে। সারা দেশে এবার মোট ৩০ হাজার ২৩১টি মণ্ডপে পূজা অনুতি হবে। সন্ধ্যার পর দুর্গাপূজার মণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত: করোনার বিস্তার রোধে সন্ধ্যারতি বা সন্ধ্যার পর সর্বসাধারণের জন্য দুর্গাপূজার মন্দির/মণ্ডপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। ফলে সন্ধ্যার পর এবার পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা কিংবা আরতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। গতকাল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। বিজ্ঞপ্তিতে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন জনসমাগমে কেউ যেন মাস্ক ছাড়া বের না হয়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে মর্মেও নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রকারান্তরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে পুনরায় জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেশের চিকিৎসকরাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে জনগণকে বারবার সতর্ক করছেন। তারা আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সশরীরে পূজায় অংশগ্রহণ করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের করোনার কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন নাকি এবারের পূজায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন- তা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, দুর্গাপূজা পাঁচ দিনব্যাপী অনুান। সবার অংশগ্রহণে করোনার বিস্তারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর দায় নিজের ঘাড়ে নেয়া থেকে দূরে থাকুন। সন্ধ্যারতির পর সর্বসাধারণের জন্য মন্দির/মণ্ডপ বন্ধ রাখুন। মা সর্বত্র বিরাজমান। বাড়িতে থেকে আপনার প্রণাম মা নিশ্চয়ই গ্রহণ করবেন। তিনি বঞ্চিত করবেন না তার আশীর্বাদ থেকে। সবস্তরের কমিটির নেতাদের তাদের এ বার্তা দ্রুত গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার অনুরোধও জানায় পূজা উদযাপন পরিষদ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে পূজামণ্ডপ বন্ধ হয়ে যাবে। ঘটা করে পূজা দেখা, বেড়ানো-এটা আসলেই বন্ধ করতে চাচ্ছে। ভালো করে বলতে পারছি না, যেটুকু বলেছে, এটুকু দিয়েই বুঝে নিতে হবে। এদিকে গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। সেখানে সংগঠনটির সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৩২টি দুর্গাপূজা হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাত ৯টা পর্যন্ত পূজামণ্ডপ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, সন্ধ্যারতির পর পূজামণ্ডপ বন্ধ থাকবে। প্রতি মণ্ডপ থেকে সরাসরি নিজ নিজ বিসর্জন ঘাটে গিয়ে বিসর্জন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল করা হয়েছে, যারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে বলেও জানিয়েছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেও সারাদেশে এবার ৩০ হাজার ২১৩টিতে পূজা হবে। গত বছর দুর্গাপূজার মণ্ডপ ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ১ হাজার ১৮৫টি দুর্গাপূজা কম হতে যাচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়ায় পিতৃপক্ষের সমাপ্তিতে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হলেও এ বছরের আশ্বিন মাস মল মাস হওয়ায় দেবীপক্ষে দুর্গাপূজা অনুতি হবে না। ফলে প্রায় এক মাস পাঁচ দিন পর হেমন্তের কার্তিকে (২২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার) পূজার মধ্য দিয়ে এবার দুর্গাপূজার আনুানিকতা শুরু হবে। ২৩ অক্টোবর সপ্তমী, ২৪ অক্টোবর অষ্টমী, ২৫ অক্টোবর নবমী শেষে ২৬ অক্টোবর (সোমবার) দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজার অনুান। |