শিরোনাম: |
আমার কাছ থেকে দেশের মানুষের যেন উপকারই হয় : প্রধানমন্ত্রী
বেসরকারি মেডিকেলে ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক রাখার শর্তে আইনের খসড়া অনুমোদন ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে চাইলে মত দেবে মন্ত্রিসভা
|
বর্তমান প্রতিবেদক : নিজের ৭৪তম জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, যতদিন বেঁচে আছি সম্মানের সঙ্গে যেন বাঁচতে পারি। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষের যেন উপকারই হয়, মানুষ যেন ভালো থাকে, সেই কাজটুকু যেন করতে পারি। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে তার সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতি। কারণ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও মেধা আমাদের দেশের জন্য রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি অত্যন্ত ধীরস্থির ও ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু বিবেচনা করতেন। অনেক জটিল মামলা ভালোভাবে সমাধান করেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি যে, এই কয়েকটা বছর আমরা দেখেছি বাংলাদেশে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা এই জায়গাটায় এসেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দেশটাকে যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারি। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, ওইটুকুই আমার প্রচেষ্টা আর কিছু না। নইলে বাবা-মা সব হারিয়ে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে এই দেশে এসে কাজ করা, এটা খুবই কঠিন কাজ। তার পরও শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি- যে দেশটাকে আমার বাবা এত ভালোবেসেছেন, যে দেশের মানুষকে। তাদের জন্য কিছু করে আমাকে যেতে হবে। তার স্বপ্নটা যেন অপূর্ণ না থাকে সেটি যেন পূর্ণ করতে পারি। দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস না এলে আমরা আরও অনেক কাজ করতে পারতাম। তার পরও যত বাধাবিঘ্ন আসুক সেটি অতিক্রম করার মতো ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষ রাখে। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সীমিতপরিসরে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে দলীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বেসরকারি মেডিকেলে ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক রাখার শর্তে আইনের খসড়া অনুমোদন: বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক রাখতে হবে। ২৫ শতাংশের বেশি খøকালীন (পার্টটাইম) শিক্ষক রাখা যাবে না এমন বিধান রেখে বেসরকারি মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২০ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খসড়া আইন অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকায় মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপনে দুই একর ও অন্যান্য এলাকায় চার একর জমি থাকতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এতদিন বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো চলতো দুটি নীতিমালার মাধ্যমে। একটি ছিল বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা ২০১১ ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা ২০০৯। এখন দেখা যাচ্ছে নীতিমালা দিয়ে সবকিছু সুুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য একটা আইন প্রয়োজন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগ থেকে এ খসড়া আইন নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক অনুমোদন, অ্যাকাডেমিক অনুমোদন নবায়ন, শিক্ষা কার্যক্রম, কতগুলো ছাত্র থাকবে, সে জন্য কী ফ্যাসিলিটিজ থাকতে হবে, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কী হবে, শিক্ষকদের কী যোগ্যতা থাকবে, কলেজগুলো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেন হবে, কী ফ্যাসিলিটিজ থাকবে- এ বিষয়গুলো খসড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপাত হবে ১:১০, অর্থাৎ প্রত্যেক ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মিনিমাম ছাত্র হতে হবে ৫০ জন। ৫০ জনের কম হলে করা (মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ) যাবে না। ২৫ ভাগের বেশি খøকালীন শিক্ষক রাখা যাবে না, ৭৫ শতাংশ স্থায়ী শিক্ষক থাকতে হবে। বর্তমান নীতিমালায় অনেক কিছু স্পষ্ট না থাকায় অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে চালানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষক থাকতে হবে, সেখানে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকবে। পরিচালনার বিস্তারিত নির্দেশনার জন্য খসড়া আইনে বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যদি কেউ আইন ভঙ্গ করেন তবে শাস্তির কথা বলা হয়েছে খসড়া আইনে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদø বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যেতে পারে। শর্তপূরণ না করলে অনুমোদন বাতিল হবে বলেও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। রিজার্ভ ফান্ড হিসেবে মেডিকেল কলেজগুলোতে তিন কোটি ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে দুই কোটি টাকা রাখতে হবে বলে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে খসড়া আইনে অনেকগুলো শর্ত দেয়া আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মেডিকেল চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটা ব্যবস্থা রাখতে হবে। চিকিৎসা বর্জ্যগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, নরমাল যে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সেখানে ফেললে হবে না। সেখানে থেকে ভাইরাস বা রোগ-জীবাণুর ব্যাপক প্রসার হতে পারে। এজন্য মেডিকেল কলেজগুলোকে মেডিকেল বর্জ্য ডিসপোজালের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তারা যে জমি নেবে তা অবশ্যই নিষ্কণ্টক থাকতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় দুই একর ও অন্যান্য স্থানে চার একর জমি থাকতে হবে। জমি না থাকলে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ অনুমোদন পাবে না। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডেন্টাল কলেজের জন্য অবশ্যই দুই কোটি টাকা রিজার্ভ ফান্ড থাকতে হবে। ডেন্টাল কলেজের নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে এক কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কলেজের ১০ শতাংশ শয্যা গরিব রোগীদের জন্য বিনা পয়সায় চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। মেডিকেল কলেজগুলোতে কমপক্ষে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ডেন্টালে ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেই বিভাগে যে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থাকবে, তা সেই বিভাগের মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। ঢাকা বিভাগের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। যেখানে নেই সেখানে সার্কুলার দিয়ে বলে দেয়া হবে, তারা কোন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৭০টি, ডেন্টাল কলেজ ২৬টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৬টি এবং একটি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শিক্ষা প্রতিান খুলতে চাইলে মত দেবে মন্ত্রিসভা: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিান খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভা বা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চাইলে তা দেওয়া হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বলে দিয়েছি, যে কোনো সেক্টরগুলো রেসপেক্টিভ মিনিস্ট্রিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা কর্তৃপক্ষ তারা তাদের নিজ বিবেচনায় ব্যবস্থা নেবেন। এরপরও তারা যদি মনে করেন কোনো সাজেশন বা কোনো রুলিং দরকার কেবিনেটের বা প্রধানমন্ত্রীর, আমাদেরকে যদি রেফার করে তখন সেটা ওভাবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এখন অথোরিটি তাদের কাছেই দিয়ে দেওয়া আছে। মহামারী সঙ্কটে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যেই সার্বিক বিষয়ে অবহিত করতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিানে ছুটি ঘোষণা করা আছে। গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তা স্থগিত রয়েছে। বছর প্রায় শেষ হয়ে আসায় এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। মহামারীর কারণে এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার। শিক্ষা প্রতিানে এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে উপরের শ্রেণিতে তোলার কথা রয়েছে। তবে চারটি শর্ত দিয়ে আগামী অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালনায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ও এবং এ লেভেলের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। |