শিরোনাম: |
নির্ভরযোগ্য ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট পেতে হলে...
|
মো. জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ) : বর্তমানে কেউই কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্টে ভরসা পান না, হোক জনগণ কিংবা ডাক্তার! একে তো রোগীর লোকজন অপ্রয়োজনীয় টেস্ট কিংবা ডাক্তারের কমিশন খাবার বাহানা ভেবে ডায়াগনস্টিক টেস্টকে অবহেলা করে থাকেন, অপরদিকে ডাক্তাররাও অস্বস্তিতে থাকেন। কারণ অদক্ষতা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে একই স্পেসিমেনের রেজাল্ট বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বিভিন্ন রকম হয়, এমতাবস্থায় ভালো ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিনতে আপনার, আমার কিংবা ডাক্তারের করণীয় কী সেটাই আজকের আলোচ্য বিষয়।
আগেকার দিনে রোগীর দেহের তাপমাত্রা, নাড়ির গতি, জিহ্বার রঙ, হাঁটাচলা দেখে রোগ নির্ণয় করা হলেও এখনকার দিনে এমনটা করলে তা হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। যদিও বর্তমানে রোগ নির্ণয় করতে সঠিক ডায়াগনস্টিক রিপোর্টের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয়। তারপরেও প্রকৃতপক্ষে রোগ নির্ণয়ের পূর্বশর্ত হলো রোগীর সঠিক রোগের ইতিহাস, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন এবং সর্বশেষে ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট। এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া রোগ নির্ণয়, চিকিত্সা ও ফলোআপ করা বর্তমানে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং রোগী ডাক্তার দেখালে, তিনি রোগের তথ্য জানতে চান, শারীরিক পরীক্ষা করে একটা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস দাঁড় করান। ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিসের ওপর নির্ভর করে তিনি রোগীদের প্যাথলজি টেস্ট বা ইমেজিং অ্যাডভাইস দেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য রোগী তার নিজের কিংবা ডাক্তারের পছন্দমতো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। এ ক্ষেত্রে আপনি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার জন্য গেলে নিচের জিনিসগুলো অবশ্যই লক্ষ করবেন এবং আশ্বস্ত হলে পরীক্ষাগুলো করাবেন অথবা করাবেন না। রিসেপশন কাউন্টারে বিনয়ী কর্মী, ওয়েটিংয়ের জায়গায় পর্যাপ্ত আসন, পরিচ্ছন্ন বাথরুমের সুবিধা, আপডেট লাইসেন্সের কপি ও সার্ভিসের মূল্য তালিকা টানানো, সঠিক দিক-নির্দেশনামূলক চিহ্ন, রুম নম্বর ও রুমের পরিচিতি দেয়া থাকবে। অনেক অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত মূল্যসংবলিত তালিকা টানিয়ে দেদার ব্যবসা করে। প্যাথলজি রিপোর্ট অথরাইজড করতে প্যাথলজিস্ট, ল্যাব-সায়েন্টিস্ট, বায়োকেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও প্যাথলজির নমুনা সংগ্রহ এবং কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদন করতে ডিপ্লোমাধারী দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান থাকবে। অনেক জায়গায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম, ঠিকানা ও কাগজপত্র থাকলেও তাদের উপস্থিতি ছাড়াই সব কার্যক্রম চলে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি নিয়ে সবারই কমবেশি ভুল ধারণা আছে। এই ভুল ধারণা রোগীর জন্য ক্ষতিকর এবং কিছু প্রতারক ব্যবসায়ীর অবৈধ আয়ের হাতিয়ারও বটে। ২উ/৩উ/৪উ/ডপলার নিয়ে ডায়াগনস্টিক মালিকদের অহেতুক প্রচারণা এখন তুঙ্গে। তাই এ ব্যাপারে সবারই সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। আল্ট্রাসনোগ্রাম আধুনিককালের একটি কার্যকরী ইনভেস্টিগেশান এবং স্বাভাবিকভাবেই আল্ট্রাসনোগ্রাফির ভার্সন (২উ/৩উ/৪উ/ডপলার) যত উন্নত, ইনভেস্টিগেশান কোয়ালিটি তত বেশি আপগ্রেডেড, এমন ভুল ধারণার কারণে অনেক রোগী অপেক্ষাকৃত বেশি খরচে সর্বশেষ ভার্সনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে আগ্রহী হন। এমন সুযোগে একশ্রেণির প্রতিষ্ঠান মালিক ২উ আল্ট্রাসনোগ্রামের কালারফুল ছবি দিয়ে ৪উ আল্ট্রাসনোগ্রাম বলে চালিয়ে দিয়ে বেশি টাকা আদায়ের ফন্দি করে। প্রকৃত সত্য হলো, ৪উ আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য টেনিসবল আকৃতির যে ব্যয়বহুল প্রোব লাগে সেটা তাদের মেশিনে থাকেই না। তাছাড়া ২উ/৩উ/৪উ/ডপলার এগুলো একটির চেয়ে অন্যটি ভালো মানের পরীক্ষা, বিষয়টি এমন নয় বরং প্রত্যেকটির আলাদাভাবে বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। যেমনটি আপনার প্রয়োজন সেটি প্রকৃত ডাক্তাররাই নির্ধারণ করে দেন। এক্স-রে নিয়ে আছে আরেক ভুল বোঝাবুঝি। অনেক সিআর (কম্পিউটেড রেডিওগ্রাফি) সিস্টেম এক্স-রে’র ডায়াগনস্টিকগুলো রোগীর উদ্দেশে প্রচারণা চালায়, অ্যানালগ নাকি ডিজিটাল? এমন প্রশ্নবোধক ডিজিটাল প্রচারণা চালিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টায় থাকে কিছু প্রতিষ্ঠান। আসলে এই সিআর সিস্টেম এক্স-রের বিশেষ কোনো বিশেষত্ব নাই, সাধারণ অ্যানালগ এক্স-রেতে সরাসরি ফিল্মে এক্স-রে প্রয়োগ করে পরবর্তী ধাপে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ছবি তৈরি করা হয়, যা সময়সাপেক্ষ। তাই সময় বাঁচাতে সরাসরি ফিল্মের বদলে এক ধরনের ক্যাসেটে এক্স-রে প্রয়োগ করে সেই ক্যাসেটের ছবি রিডার নামের যন্ত্রের মাধ্যমে কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয়, তারপর প্রিন্টারের সাহায্যে ফিল্ম প্রিন্ট করা হয়। কিন্তু এটা প্রকৃত ডিজিটাল এক্স-রে নয়। ডিআর (ডিজিটাল রেডিওগ্রাফি) সিস্টেম এক্স-রে হলো প্রকৃত ডিজিটাল এক্স-রে, এই সিস্টেমে এক্স-রে প্রয়োগের পর ছবি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারে চলে যায় এবং প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্টেড ফিল্ম বের হয়ে আসে। বিষয়গুলোর খোঁজ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট হলে, রিসেপশনে ডাক্তারের অ্যাডভাইস জমা দিয়ে মানি রিসিট নিয়ে লক্ষ রাখবেন ডাক্তার যেসব পরীক্ষার উপদেশ দিয়েছেন, তা সঠিকভবে তোলা হয়েছে কি-না এবং তালিকা মোতাবেক মূল্য রাখা হয়েছে কি-না। আপনার সচেতনতাই নির্ভরযোগ্য ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট নিশ্চিত করবে। লেখক: পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড টেকনোলজি), ডি-স্ক্যান হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ |