সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৮ পৌষ ১৪৩১
মৌসুমি শাক-সবজি ও ফলমূল সংরক্ষণ ব্যবস্থা জরুরি
Published : Sunday, 1 April, 2018 at 6:00 AM, Count : 749

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম : গত প্রায় এক সপ্তাহ আগেও দেখা গেছে যে, রাজধানীর অলি-গলিতে ভ্যানগাড়ি করে এক কেজি টমেটো ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এখন দাম আস্তে আস্তে বাড়ছে বটে। হয়তো কয়েক মাস বা আগামী রমজান মাসেই দেখা যাবে যে, এক কেজি টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে হবে রাজধানীতে। ঢাকায় ১০ টাকা কেজি টমেটোর দাম হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষক ৪ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। অর্থাত্ তারা উত্পাদন খরচ পাচ্ছে না। বর্তমানে রাজধানীতে মাঝারি ধরনের একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়। এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। কৃষক এসব পণ্যের উত্পাদন খরচও পাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আলুর উত্পাদন ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। এবার কিছুটা বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। শাক-সবজির উত্পাদন ছিল গত অর্থবছরে ১ কোটি ৫৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় অনেকটাই বেশি। টমেটো এখন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। উত্পাদন পরবর্তী সংরক্ষণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে বেশি মূল্যে টমেটো আমদানি করতে হয়। তাছাড়া যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর উত্পাদিত টমেটোর প্রায় ৪০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে। তাই টমেটো সংরক্ষণে পিপিপির (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় সারাদেশে হিমাগার স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। দেশে উত্পাদিত কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে টমেটো অত্যন্ত জনপ্রিয়, যার অবস্থান উত্পাদিত কৃষিপণ্যের মধ্যে চতুর্থ। আমাদের বার্ষিক টমেটোর চাহিদার পরিমাণ নির্ধারণে জরিপ চালানোর প্রয়োজন। তিনি বলেন, টমেটো পরিবহনের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক কেইস ব্যবহারের পাশাপাশি বেশি দূরত্বে টমেটো পরিবহনে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন, এতে টমেটো আহরণের পর তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। বর্তমানে দেশে উত্পাদিত টমেটোর মাত্র ৭ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে, তবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তা ৩০ শতাংশে উন্নীত করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য- ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ৩ টন টমেটো রফতানি করেছে, যে খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে প্রায় ২৫ লাখ টন আমদানি হয়েছিল। সংরক্ষণের অভাবে বা প্রয়োজনীয় হিমাগার ও প্রসেসিং প্লান্টের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর উত্পাদিত টমেটোর প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে।
আলু বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থকরী ফসল। আলুর বার্ষিক চাহিদা মাত্র ৭০ লাখ টন।  প্রায় ৮ লাখ কৃষক বর্তমানে আলু চাষ করে থাকে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী আলু চাষে জাড়িত। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৭ম বৃহত্তম আলু উত্পাদনকারী দেশ এবং এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে বাংলাদেশে ৪০৩টি আলুর হিমাগার রয়েছে যার ধারণ ক্ষমতা ৪৬ লাখ টন। প্রায় ২০ শতাংশ আলু সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। কৃষিপ্রধান এই বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় শাক-সবজির উত্পাদন বেশি হচ্ছে। সংরক্ষণের অভাবে কৃষক পাচ্ছে না ন্যায্য দাম, অন্যদিকে ভোক্তা সধারণ বেশি দামেই (মৌসুম শেষে) কিনছে। অপরদিকে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার। পান আর কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে অধিকাংশ কৃষিজাত পণ্যের বিশাল বাজার হলো মধ্যপ্রাচ্য। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো তথ্যে জানা যায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশে শাক-সবজি রফতানিতে আয় হয়েছে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানিকারকদের মতে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী শাক-সবজি রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সবজি উত্পাদনে। কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাঠজুড়ে শাক-সবজি দেখা যায়। দেশে সবজি উত্পাদনে যে বিপ্লব ঘটেছে এবারের সবজিমেলা তারই স্বাক্ষর বহন করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে দেশি-বিদেশি ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উত্পাদিত হচ্ছে। এসব সবজির ৯০ শতাংশ বীজই দেশে উত্পাদিত হচ্ছে। পুষ্টি এবং অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় শাক-সবজির ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ২২০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। যা বাংলাদেশে মাত্র ৭০ শতাংশ মানুষ পূরণ করতে পারেন।
খাদ্য নিরাপত্তায় পৃথিবীব্যাপী শাক-সবজির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল কাজে লাগিয়ে বর্তমানে এখন সারাবছরই সব ধরনের সবজি উত্পাদন করা যায়। শীতকালে বাংলাদেশে সবজির সমারোহ মুগ্ধ করে সবাইকে। উত্তরাঞ্চলে কাঁচা সবজির বৃহত্তম হাট বগুড়ার মহাস্থান। এ অঞ্চলের উত্পাদিত কপি, মরিচ, মুলা, বেগুন ও লাউসহ যাবতীয় সবজি এ হাটে বেচাকেনা হয়। এ হাট থেকে সবজি কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি হাটে ৪-৫ শতাধিক মণ সবজি বিক্রি হয়। ঢাকার পাশ্ববর্তী নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ জেলায়ও প্রচুর শাক-সবজি উত্পাদন হয়। কিন্তু উত্পাদন খরচ না পাওয়া কৃষকরা হতাশ। সে যাই হোক, বড় কথা হচ্ছে মৌসুমি শাক-সবজি আর ফলমূল সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা জরুরি। এতে কৃষক, ভোক্তা ইতিবাচক ফল পাবেন, পাশাপাশি রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও চেয়ারম্যান ন্যাশনাল ফ্রিডম ফাইটার্স ফাউন্ডেশন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft