শিরোনাম: |
পরীর প্রেম
|
পথিক : খিলখিল হাসিতে থমকে দাঁড়ায় অভি। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১২টা বাজতে দুই মিনিট বাকি। এই দুপুর রাতে মেয়েলি কণ্ঠের হাসি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, না কাউকে দেখতে পায় না। মনে মনে ভাবে এত রাতে এই নিঝুম জায়গায় মেয়ে মানুষ কি করতে আসবে, হয় তো ভুল শুনেছে সে। এ কথা ভেবে সামনে এগুবে আবারও হাসির শব্দ এবার আগের চাইতে আরেকটু জোরেই শোনা গেল। আবারও দাঁড়ায় অভি এবার শরীরটা কেমন জানি ভার ভার লাগছে, মৃদু বাতাসটাও কেমন জানি গরম অনুভূত হচ্ছে। শহর থেকে অনেকদিন পরে গ্রামে আসা, সন্ধ্যার আগে বাড়িতে পৌঁছার কথা থাকলেও রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে এত দেরি হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে অভি। চাঁদের আলোতে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায় কিন্তু হাসির উত্স খুঁজে পাচ্ছে না। দ্বিধায় পড়ে অভি, শরীরটাও কেমন অবশ মনে হচ্ছে, সামনে পা এগুতে চায় না। এবার হাসির পরিবর্তে একাধিক কণ্ঠের ফিসফিস কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে অভি, কেউ যেন বলছে মনে হয় ভয় পেয়েছে। এবার অভিকে ভয় চেপে ধরে। মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকে। চাঁদের আলোটা মেঘের আড়াল হওয়াতে অন্ধকারটা আরেকটু বেড়ে যায়। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে অভি। হঠাত্ রাস্তা থেকে একটু দূরে বাঁশঝাড়টা কেঁপে উঠে, শন শন বাতাস যেন অভির দিকে ধেয়ে আসছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই রাস্তার পাশে ধপাস করে দুই তিনটা কলাগাছ ভেঙে পড়ে। ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে অভির, পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। এ সময় কেউ যেন তার একটি হাত চেপে ধরে তুলতুলে হাতের স্পর্শে বোঝা যাচ্ছে না পুরুষ না নারী। ঘাড় বাঁকিয়ে দেখবে সে সাহসটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে, এ সময় কানের কাছে কেউ যেন বলছে ভয় নেই। গরম নিশ্বাস আর মন মাতানো সুগন্ধে যেন মৌ মৌ করছে চারদিক। হাতের স্পর্শে সাহস ফিরে আসে অভির। পিছনে তাকিয়ে দেখে আকাশের চাঁদটা যেন তার পিছনে দাঁড়িয়ে। বাম হাতে চোখ কচলিয়ে আবারও তাকিয়ে দেখে অভি, কি দেখেছে সে। হ্যাঁ চাঁদকে হার মানানো এক অষ্টাদশী শক্ত করে তার ডান হাতটা ধরে আছে। বরফ খণ্ডের মতো শক্ত হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অভি। কানের কাছে আবারও ফিসফিস।
কি দেখছ এভাবে! গরম নিঃশ্বাসে ঝাঁকুনি খেয়ে উঠে অভি, তার ডান হাতটা তখনো অষ্টাদশীর হাতে বন্দি। অভি কিছু বলতে যাবে, এ সময় দুই ঠোটের উপরে আঙুল তুলে চুপ থাকার ইঙ্গিত দেয় তরুণী। তখনি তরুণীর চোখে চোখ পড়ে অভির, এ যেন জ্বলন্ত দুটি ড্রিম লাইট জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ভয়ে অভির বুকটা আতকে উঠে, মনের মাঝে হাজারও ভয় জমাট বাঁধতে থাকে যেন পুরো শরীর অবশ হয়ে পাথর হতে থাকে। কে এই তরুণী? মনে এবার সাহস এনে প্রশ্ন করে। কে তুমি, কি চাও আমার কাছে! অভির প্রশ্নে নির্বাক তরুণী হাতের ইশারায় সামনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে হাঁটতে থাকে। অভির এক হাত তরুণীর হাতে ধরা থাকার কারণে টান পড়ে অভির শরীরে। কিন্তু অভি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে, আবারও প্রশ্ন করে। তুমি কে? আর তোমার পরিচয় না দেয়া পর্যন্ত আমি সামনে যাবো না। অভির ছাগলখুঁটির মতো দাঁড়িয়ে যাওয়া দেখে অভির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো। আমি পরী, সামনে চল না হয় ঘাড় মটকে জঙ্গলে ফেলে দেব। পরীর কথা শুনে অভি তো শেষ, চিত্কার করার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। তবুও মরার আগে নড়েচড়ে মরার কথা মনে করে বললো। কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে। অভির কথায় রেগে যায় পরী, আলতো এক থাপ্পড় মারে অভির গালে। অভি তো অবাক এ যেন তার গালে শিমুল তুলার তৈরি বালিশ ছুড়ে মারা। বিস্মিত অভি দ্বিধায় পড়ে যায় কি করবে সে পরীর থাপ্পড়ের নমুনা দেখে বুঝে নেয়, পরী তার ক্ষতি করবে না। তা হলে কি করবে? হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তার মাথায় নিজের মাঝে কিছুটা সাহস ফিরে আসে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে কিন্তু অজানা ভয় বার বার তাকে চেপে ধরে। মনের মাঝে ভেসে উঠে দাদি-নানিদের কাছে শোনা ভুতুড়ে গল্পের করুণ কাহিনী। এত কিছু ভাবছ কেন! পরীর কথায় বাস্তবে ফেরে অভি। কি চাও তুমি আমার কাছে। এবার সোজা প্রশ্ন করে অভি। অভির প্রশ্নে খিলখিল করে হেসে উঠে পরী। পরীর হাসিতে যেন বনবাদড়ও এক সঙ্গে হেসে উঠে। হাসির শব্দে যেন এক এক অন্যরকম সুর এছাড়া হাসির সময় পরীর শরীরে ঝাকুনিতে দুলে উঠে তার পরনের শাড়ি আর মুক্ত খচিত সে শাড়ির ঝংকারে বেজে উঠে সুরলহরী। তন্ময় হয়ে যায় অভি সুর মূর্ছনায় হারিয়ে যায় সে। ভুলে যায় সে পরীর হাতে বন্দি। আস্তে আস্তে হারিয়ে সে সুর লহরী এবার অভি পরীর মুখোমুখি দাঁড়ায় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পরীর চাঁদমাখা মুখের দিকে। কি বিচিত্র গল্পে শোনা পরী আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে তার এবং এক হাত ধরে আছে। কি দেখছো অভি, গল্পে শোনা পরী বাস্তবে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে! আর তোমার হাত ধরে আছে। চল তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। পরীর কথা শুনে অভি সামনে পা ফেলতেই প্রচণ্ড ঝড় বাতাস। প্রচণ্ড বাতাসে আশপাশের গাছগাছালি যেন ভেঙে গায়ের উপর পড়ছে। শোঁ শোঁ শব্দে কানে তালা পড়ার অবস্থা, তাকে চারপাশ থেকে ধূলিঝড় বেষ্টন করে রেখেছে, ভয়ে কাঁপতে থাকে অভি এ যেন মৃত্যুর আগে মৃত্যুর আলামত। মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না মুখস্ত দোয়া-দরুদ। হঠাত্ অভির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরীর চিত্কার। কি করছস তোরা? পরীর চিত্কার যেন মেঘলা আকাশের বজ্রপাতটা অভির মাথার উপর ভেঙে পড়ে। সাথে সাথে ঝড় বাতাস বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু বেষ্টন করা ধূলিঝড় থামছে না। এবার পরী কি যেন বলা শুরু করে, অভি সেসব বুঝতে পারেনি। কথা বলার পর ধুলিঝড় আস্তে আস্তে দূরে সরতে থাকে। কিছুক্ষণ পর চারদিকে সুনসান নীরবতা। পরীর ঝাঁকুনিতে ভয়ে অর্ধ্বমৃত অভি ফিরে তাকায় পরীর দিকে। তখন পরী তার কোমল তুলতুলে হাতটা দিয়ে অভির গালে আদরে চড় বসিয়ে বললো। খুব ভয় পেয়েছ? জবাবটা না দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এবার নাক টিপে ধরে বললো- কি দেখছ এভাবে? চল তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। ভয়ে কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে অভি তাই তাকিয়ে থাকে তার দিকে। এই তুমি কথা বলছ না কেন! বাড়ি যাবে না? এ কথা বলে অভির হাতটা আরো শক্ত করে ধরে পরী। সামনে পা ফেলতেই বুঝতে পারে অভি কাঁপছে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছে না সে, প্রচণ্ড ভয়ে পা দুটো অবশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তার, যেন শীতের তীব্রতায় থরথর করে কাঁপছে পুরো শরীর...চলবে |