বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভবিষ্যত্ নির্ভরতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি
Published : Thursday, 8 February, 2018 at 6:00 AM, Count : 1198

ড. এসএম জাহাঙ্গীর আলম : আগামী ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যেই জীবাশ্ম জ্বালানির রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় ভবিষ্যতে কয়লার মতো জ্বালানি ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বজুড়েই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অথচ এর বিপরীতে বাংলাদেশের এই জ্বালানির ব্যবহার যেন ‘মিথ’ বা অবাস্তব বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। শুধু ‘জিওথার্মাল’ ব্যতীত বাংলাদেশে সৌর-বায়ু-পানিপ্রবাহ-বায়োগ্যাস কিংবা বায়োমাস এ সবগুলোর ব্যবহার সম্ভাব্যতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু শুধু নীতি-নির্ধারণে অদূরদর্শিতা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা আর সক্ষমতা গড়ে তোলার আয়োজনের অপর্যাপ্ততার কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই এই আশ্চর্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রতিযোগিতার দৌড়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। একটি দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর সঙ্গে নির্ভর করে প্রকল্প প্রণয়ন, অর্থায়ন আর প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার মতো অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলো। অন্যান্য দেশ যখন জ্বালানি নীতিমালার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে তখন বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে প্রণীত জ্বালানি নীতিমালাগুলোতে এটিকে বিলাসী ব্যবস্থা হিসেবে জাহির করে অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। খোড়া ঘোড়া দিয়ে যেমন রেস জেতা যায় না, ঠিক তেমনি ক্রম পরিবর্তিত নীতিমালার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্রমোন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অতি সামান্য হলেও এর সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধকতার পাহাড়। আর এ কারণেই বিভিন্ন সময়ে ঘোষিত নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময়সীমা কয়েকবার করে বাড়ানো হলেও বাস্তবে তা অর্জনের অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেন কাজীর গরু’তে পরিণত হয়েছে যা কাগজে আছে কিন্তু বাস্তবে নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে একটি দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনার মূল অবকাঠামোতে সার্থকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু থেকেই প্রয়োজন কার্যকর গবেষণা। কেননা জীবনাচারণ, অর্থনৈতিক কাঠামো, কাঁচামালের জোগান, ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতা, আবহাওয়া- এসব কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে এ জ্বালানিকে সহজভাবে খুবই কম খরচে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে নিজস্ব গবেষণার কোনো বিকল্প নাই। ধরা যাক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বায়ু বিদ্যুত্ ব্যবহারবিষয়ক গবেষণার কথা। সেখানে বাতাসের গতি বিবেচনায় ‘উইন্ড টারবাইন’ কিংবা বায়ুকলগুলোকে কতটা ওখানকার বাতাসে চালানোর ব্যাপারে উপযোগী করে গড়ে তোলা যায় সে গবেষণা প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই গবেষণার আলোকে নিজস্ব পরীক্ষণ-পর্যবেক্ষণ ছাড়া শুধু কারো প্রেসক্রিপশন মেনে আমাদানি করা উইন্ড টারবাইন নিয়ে এসে স্থাপন করলে তা কোন ফল বয়ে আনবে না। উপরন্তু মোটের উপর তা হবে আত্মঘাতী কেননা টাকা খরচ করে সব কিছু করে ফেলার পর মানুষ যখন এর সুফল পাবে না তখন যে বাজে উদাহরণ তৈরি হবে তাতে করে মনে হবে বায়ুবিদ্যুত্ ধারণাটাই হয়তোবা অকেজো কিংবা বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুত্ উত্পাদন অসম্ভব। এ নিয়ে তখন যতটা সমালোচনার ঝড় উঠবে ততটাই ঢাকা পড়ে যাবে গবেষণা-পর্যবেক্ষণ আর যাচাই ব্যতীত আমদানি করার বিষয়টি। ঠিক এ ঘটনাটাই ঘটেছে রাঙ্গামাটির বরকলে স্থাপিত ৫০ কিলোওয়াটের মাইক্রো হাইড্রো প্লান্টটির ক্ষেত্রে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করার কারণে পানির সঙ্গে বয়ে আসা নুড়ি পাথর আর মাটির কারণে এটি চালুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। অথচ পানির উত্সমুখে সঠিক ফিল্টারিংয়ের ব্যবস্থা করলে খুব সহজেই এটি এড়ানো যেত।
এই ব্যর্থতার কারণে মাইক্রো বা পিকো হাইড্রোর বিষয়ে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, জামালপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই মাইক্রো বা পিকো হাইড্রোর জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে কোনো প্রকল্প কাজ শুরু করার কর্মতত্পরতা দেখা যাচ্ছে না। অর্থাত্ শুধু গবেষণাহীনতার কারণে একটি ব্যর্থ প্রকল্প পুরো ব্যবস্থাপনার মধ্যে মাইক্রো-পিকো হাইড্রোভিত্তিক উত্পাদন ধারণাকে নাই করে দিতে বেশ ভালোভাবেই সক্ষম হয়েছে। অথচ এর বিপরীতে আমদানি করা উচ্চমূল্যের ইউনিটের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার নিজস্ব গবেষণায় প্রযুক্তির স্থানীয়করণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত কংক্রিট ক্যাসিংয়ের কম দামি মাইক্রো-পিকো হাইড্রো ইউনিট খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে গবেষণা খাতটি বরাবরই অবহেলিত। এই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশেষায়িত প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পযন্ত বিস্তৃত। গবেষণা খাতে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রণোদনাহীনতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গবেষকদের বিদেশি গবেষণার পরজীবী হয়ে যেতে বাধ্য করে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রেও একই কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। এই খাতে সরাসরি সরকারের এক টাকারও বরাদ্দ নাই। ছিটে-ফোটা গবেষণাগুলোর প্রায় সবই বিদেশি কিছু সংস্থার বিশেষ চাহিদা মাফিক কিংবা ‘সিএসআর’ অনুদান নির্ভর। অথচ পাশের দেশ ভারতেই প্রতি বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে খাতওয়ারি বরাদ্দ থাকে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করে। ইডকলের অন্যান্য কাজের মধ্যে একটি হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়ন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, ইউএসএআইডি, ডিএফআইডি, জাইকা’র মতো বিদেশি সংস্থা নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন সহকারে এই প্রতিষ্ঠানে টাকা দেয় যার একটি অংশ অনুদান হিসেবে বিতরণ করা হয় আর বাকিটা দেয়া হয় ঋণ হিসেবে। এই টাকা ব্যবহার করে ইডকলের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সোলার প্যানেল বিতরণ করে। আর এই প্যানেলের প্রধান ক্রেতা হচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বসবাসকারী তুলনামূলক নিম্নআয়ের শ্রমজীবী আর কৃষিজীবী মানুষ। মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুত্ ব্যবহারের জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে সোলার প্যানেল ব্যবহারে মানুষের উত্সাহের কমতি নেই। কিন্তু প্রকারান্তরে এটি এমন এক সিস্টেম যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে গ্রিডের বিদ্যুত্ সংযোগবিহীন অবস্থায় থাকা মানুষগুলোকে সোলার প্যানেল কিনতে এক প্রকার বাধ্য করে রাষ্ট্রের দায়িত্বকে আড়াল করে রাখা হচ্ছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ইডকল প্রায় ৪০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করেছে যার মোট ক্ষমতা প্রায় ১৭০ মেগাওয়াট। বিদেশি সংস্থার টাকা নিয়ে একটি কোম্পানি হিসেবে ইডকলের সাফল্য ১৭০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদন আর এটাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গত ১২ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প। অথচ বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতার বিপদ আমাদের কারোরই অজানা নয়। মাত্র কিছুদিন আগেই ওয়াল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন একটি রুলিং দিয়েছে যাতে বলা হয়েছে জওহরলাল নেহেরু সোলার মিশন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি না করে নিজেদের উত্পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির আয়োজন নাকি ভারতের জন্য নীতিবিরুদ্ধ! নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার প্রশ্নে এর প্রারম্ভিক খরচটাই বাধা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করা হয়। বিপরীতে এই জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে সম্ভাবনার বিষয়গুলো কিংবা দীর্ঘমেয়াদে লাভালাভ অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়া হয় না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাজেটের কোনো বরাদ্দ না থাকলেও অলস পড়ে থাকা রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রগুলোর জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নিয়মিতই বরাদ্দ পেতে থাকে।
বিশ্বজুড়ে ভর্তুকির টাকার চারভাগের মাত্র এক ভাগ ব্যয় হয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়নে অথচ ‘ঝঁনংরফু উত্রাবহ’ নামক তকমাটা সৌর কিংবা বায়ু বিদ্যুতের গায়েই সেটে থাকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে তা অস্বীকারের উপায় নেই, সেই সঙ্গে নিত্যনতুন গবেষণায় উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সে চ্যালেঞ্জগুলো উতরে যাবার সাফল্যে উদাহরণগুলোও এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। যেমন, উত্পাদন ব্যবস্থার তারতম্যের বিষয়টিকে সমাধানে এসেছে ‘স্মার্ট গ্রিড সিস্টেম’। উদ্বৃত্ত বিদ্যুত্ সরকারের কাছে বিক্রি করে দিতে উদ্ভাবিত হয়েছে ‘গ্রিড কানেক্টেড ইনভার্টার’। নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক উত্পাদন উত্সাহিতকরণে শুরু হয়েছে ‘ফিড ইন ট্যারিফ’ ব্যবস্থা। আর অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের মতো এ জ্বালানি রূপান্তর প্রযুক্তির দামও কমে আসছে খুব দ্রুত। উদাহরণস্বরূপ, সোলার প্যানেলের কথা উল্লখ করা যায় গত আট বছরে যেটির দাম কমেছে ৮৪ শতাংশ আর বায়ুবিদ্যুতের ক্ষেত্রে মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দাম কমেছে ১৮ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে নিকট ভবিষ্যতের জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আয়োজনে অন্যান্য দেশ যতটা এগিয়ে যাচ্ছে নীতি-নির্ধারণী মহলের অযোগ্যতার কারণে বাংলাদেশ ততটাই পিছিয়ে পড়ছে। নিশ্চিত সম্ভাবনার এই দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আর উদ্যোগের অভাবে এ জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। এ জ্বালানি বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সভা-সেমিনার আর ফিতা কাটা অনুষ্ঠানে যতটা কথা বলা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে ততটা কাজ হচ্ছে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়টিকে পাড়ে দাঁড়িয়ে সাঁতার শেখানোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ ভবিষ্যত্ জ্বালানি সঙ্কট মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আর তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে বাধ্য করতে আমাদের যে দায়িত্ব তা অস্বীকার করারও কোনো সুযোগ নেই।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও চেয়ারম্যান-ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft