বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
লালনের মানবতাবাদী চিন্তা
Published : Thursday, 1 February, 2018 at 6:00 AM, Count : 1500

ড. আবদুল ওয়াহাব : মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে। আর মনুষ্যত্বের পরিচয় মেলে ব্যক্তির কীর্তির মাধ্যমে। মানুষের কর্ম কীর্তিমান হয় তখনই যখন তার মননে দেখা দেয় সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। আমরা বলি প্রত্যেক কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক-সমাজচিন্তকের একটা দায়বদ্ধতা থাকা চাই। কি সেই দায়বদ্ধতা? আর কেনইবা দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। এই কেন’র উত্তর হচ্ছে মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, তাই সমাজের উন্নতি ও সমাজের মঙ্গলার্থ চিন্তা করা কবি-সাহিত্যিকের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের আজকের নিবন্ধের আরাধ্য লালনকে আমরা কবি বলতে পারি, দার্শনিক-সমাজচিন্তক বলতে পারি, আবার যুগের প্রতিনিধি বলতে পারি— যিনি বঙ্গ ব-দ্বীপের মতো একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের বাসিন্দা হয়েও সেই ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে ধারণ করেছিলেন হাজার বছরের মানব সমাজের চিন্তা-চেতনা ও মাঙ্গলিকতাকে। আর এই চিন্তা-চেতনাকে স্বীয় জীবনের অভিজ্ঞতার নির্যাসে জারিত করে সমগ্র মানুষের মঙ্গলার্থে এক নতুন চিন্তা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে তিনি জীবন নির্বাহ করেছেন এবং রচনা করেছেন অসংখ্য গান। লালনের চিন্তার সঙ্গে বাউল চিন্তা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বলা চলে লালন ও বাউল বাছলার সংস্কৃতিতে সামাজিক প্রপঞ্চ। এ দু’টি অভিধা একটি অপরটির পরিপূরক। বাউলের ধর্ম যেমন মানবধর্ম তেমনি লালনের ধর্মও মানবধর্ম। কাজেই লালনের পাশাপাশি বাউল চিন্তা বিশ্লেষণ আবশ্যক। লালন প্রয়াত হয়েছেন আজ থেকে ২১৭ বছর আগে। কম্পিউটার প্রযুক্তির আকাশচুম্বী উন্নতির পরও কেন লালনের চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক ও তার মর্মমূলে প্রবেশের চেষ্টা আছে এ প্রবন্ধে। আমরা দেখছি আজকের পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুউচ্চ মিনারে অবস্থান করেও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এবং হাজার বছর আগে উদ্ভুত বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায় পরস্পর সংঘাত/সহিংসায় লিপ্ত। এ সংঘাতের অবসানে লালনকে আমাদের জানা/চর্চা করা জরুরি এ কথা বলা বাহুল্য।
লালনের সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারটি হচ্ছে ধর্ম-বর্ণহীন এক সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা। তিনি সমাজকে নিরীক্ষণ করেছেন খালি চোখে, খোলা মনে; মুখে ঠুলি বা চোখে ঠুসি পরে নয়। মানুষের মুক্তির কথা লালন চিন্তা করেছেন, যে মুক্তি মোক্ষ লাভ বা স্বর্গ লাভ নয়। তার এই চিন্তার মধ্যে কোনো ধরনের বেহেশত-দোজখ-স্বর্গ-নরক বা কোনো আধ্যাত্মিক মুক্তির কোনো নিশানা ছিল না; ছিল শুধু মানুষের সামাজিক মুক্তি। এক্ষেত্রে তার এই চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে গৌতম বুদ্ধের চিন্তা, চার্বাক বা লোকায়াতিক চিন্তা, কিংবা অপেক্ষাকৃত অর্বাচীনকালে সৃষ্ট সুফিবাদের উদার মানবতাবাদী চিন্তার। ভারতের ভক্তিবাদ, গুরুবাদের সঙ্গেও লালন-চিন্তার সম্মিলন লক্ষ করা যায়। গীতার কর্মযোগ-ভক্তিযোগেরও আধার তার চিন্তায় সন্ধানযোগ্য। দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, দ্বৈতাদ্বৈতবাদ এসব কিছুকে স্পর্শ করেও তার চিন্তার সারবস্তু এ সব কিছুর ঊর্ধ্বে  প্রসারিত— তার সেই চিন্তার লক্ষ্যাভিসার হচ্ছে— সমাজ মানুষ। সমাজ মানুষের সামাজিক মুক্তিই তার কাছে মুখ্য, সর্বদা তার ঝোঁক বস্তুতান্ত্রিকতার দিকে। 
লালন ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার ভাঁড়ারা গ্রামে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় ১১৬ বছর বয়সে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর তিনি প্রয়াত হন। তার জন্মের সন-তারিখ সঠিকভাবে আবিষ্কার করা আজও সম্ভব হয়নি; অবশ্য মৃত্যুর সন-তারিখ নানা তথ্যরাজি দ্বারা প্রমাণিত। পাক্ষিক হিতকরী নামক পত্রিকায় লালন প্রয়াত হবার মাত্র ১৬ দিন পর ৩১ অক্টোবর ১৮৯০ তারিখে ‘মহাত্মা লালন ফকির’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি লালনের জীবন ও কীর্তি আলোচনায় সত্যিই চিত্তাকর্ষক উপাদান যোগান দেয়। প্রথমেই এর শিরোনামের প্রতি পাঠকের দৃষ্টিনিবদ্ধ হয়। ‘উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক রূপকার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যে উপাধিতে ভূষিত যা অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন কালের। ‘হিতকরী’ পত্রিকা লালনকে সরাসরি ‘মহাত্মা লালন ফকির’ সম্মোধন করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে। প্রতিবেদনটির এক অংশে পাই; ‘ইহার জীবনী লিখিবার কোনো উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছুই বলিতেন না। শিষ্যেরা হয়ত তাহার নিষেধক্রমে না হয় অজ্ঞতাবশত: কিছুই বলিতে পারে না। তবে সাধারণে প্রকাশ লালন ফকির জাতিতে কায়স্থ ছিলেন। কুষ্টিয়ার অধীন চাপড়ার ভৌমিক বংশীয়েরা ইহার জ্ঞাতি। ইহার কোন আত্মীয় জীবিত নাই। ইনি নাকি তীর্থগমনকালে পথে বসন্তরোগে আক্রান্ত হইয়া সঙ্গিগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়েন। মুমূর্ষু অবস্থায় একটি মুসলমানের দয়া ও আশ্রয়ে জীবন লাভ করিয়া ফকির হয়েন। ইহার মুখে বসন্তরোগের দাগ বিদ্যমান ছিল। ইনি ১১৬ বত্সর বয়সে গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার প্রাতে মানবলীলা সম্বরণ করিয়াছেন’। কিন্তু এ পর্যন্তই। কেননা তার বাল্য-কৈশোর ও শিক্ষাজীবন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। অনুপুঙ্খ গবেষণা দ্বারা হয়তো এটা একদিন সম্ভব হতে পারে।
লালনের মানবতাবাদী চিন্তার উপাদান তার সত্যনিষ্ঠ ও অনাড়ম্বরপূর্ণ জীবন, ১১৬ বছরব্যাপী জীবনসংগ্রামের নানা অধ্যায় এবং তার রচিত সহস্রাধিক গান। তার সমাজচিন্তা সম্পর্কিত তথ্যের লিখিত সংবাদ আমরা প্রথম শুনতে পাই ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার কর্তৃক সম্পাদিত সাপ্তাহিক গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’য় প্রকাশিত জাতি শীর্ষক এক সংবাদ নিবন্ধে। এই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘লালন শাহ নামে এক কায়স্থ আর এক ধর্ম আবিষ্কার করিয়াছে। হিন্দু মুসলমান সকলেই এই সম্প্রদায়ভুক্ত। আমরা মাসিক পত্রিকায় ইহার বিশেষ বিবরণ প্রকাশ করিব। ৩/৪ বছরের মধ্যে এই সম্প্রদায় অতিশয় প্রবল হইয়াছে। ইহারা যে জাতিভেদ স্বীকার করে না সে কথা বলা বাহুল্য।’ এই উদ্ধৃতি থেকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে পারি— ক. ধর্ম আবিষ্কার, খ. আবিষ্কৃত ধর্মে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে প্রবেশাধিকার এবং গ. আবিষ্কৃত ধর্মে জাতিভেদের অস্বীকৃতি। আরও একটি বিষয়ের অবতারণা করা যায় যে, ঐ সময় লালনের মতো-দর্শন প্রবল প্রতিপত্তি নিয়ে অগ্রসরমান। এটা সাল ১৮৭২। তখন লালনের বয়স প্রায় ১০০ বছর। ঘটনা খুব স্বাভাবিক বলেই আমরা মেনে নিতে পারি। পূর্বোক্ত হিতকরী পত্রিকা আরও লেখেন, ‘লালন ফকিরের নাম এ অঞ্চলে কাহারো শুনিতে বাকি নাই। শুধু এ অঞ্চল কেন, পূর্বে চট্টগ্রাম, উত্তরে রঙ্গপুর, দক্ষিণে যশোহর এবং পশ্চিমে অনেক দূর পর্যন্ত বঙ্গদেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বহু সংখ্যক লোক এই লালন ফকিরের শিষ্য; শুনিতে পাই ইহার শিষ্য ১০ হাজারের উপরে।’
রবীন্দ্রনাথ লালনের গানের মর্মবাণীতে মানবহিতৈষণা ও উদারনৈতিক মানবতাবাদী জীবনচেতনার সন্ধান পেয়েছিলেন এবং তিনি লালনের গান থেকে অনুপ্রেরণা ও প্রণোদনা লাভ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মনোযোগ নিবদ্ধ হয়েছিল লালনের গানের মর্মবস্তুতে। লালনের গানে তিনি উদার-সাম্যের, বন্ধুত্বের-মিলনের-সমন্বয়ের-মানবতার, প্রেম-ভালোবাসার এবং শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সমাজের নিশানা দেখেছিলেন। তাই তো ১৩১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পর্ষদ আয়োজিত এক ছাত্রসভায় প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘লালন ফকির কুষ্টিয়ার নিকট হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন— এরূপ শোনা যায় যে তাহার বাপ মা তীর্থযাত্রাকালে পথিমধ্যে তাহার বসন্ত রোগ হওয়াতে তাহাকে রাস্তায় ফেলিয়া চলিয়া যান। সেই সময় একজন মুসলমান ফকির দ্বারা তিনি পালিত ও দীক্ষিত হন। এই লালন ফকিরের মতে মুসলমান-হিন্দু জৈন মত-সকল একত্র করিয়া এমন একটি জিনিস তৈয়ার হইয়াছে যাহাতে চিন্তা করিবার অনেক বিষয় হইয়াছে। এ বিষয়ে সকলেরই মন দেয়া উচিত্।’
রবীন্দ্রনাথের এ বক্তব্যের সারমর্মটি কি? তত্কালে বাংলার ভৌগোলিক পরিবেশে বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব ও ব্যাপকতা এতটা প্রকট ছিল যে আজকের দিনে তা অনুমান করা কল্পনাবিলাসীর পক্ষেও সম্ভব নয়। সুতরাং আমরা সবাই একমত যে তিনি (লালন) বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং পথিমধ্যে স্বজনরা তাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। তবে সদাশয় এক দয়ালু পরিবারের সেবা-শুশ্রূষায় লালন সুস্থ হয়ে উঠেন। কিন্তু গোল বাঁধায় ধর্মীয় সংস্কার বা প্রচলিত কূপমণ্ডূকতা— যেহেতু তাকে সেবা-যত্ন করেছে একটি মুসলমান পরিবার সেহেতু তিনি আর তার স্বীয় পরিবারে ফিরে যেতে সক্ষম হননি; তাই তার চেতনায় সেই প্রচলিত সমাজের প্রতি একটা বিদ্রোহ জাগা স্বাভাবিক। রবীন্দ্রনাথের কথায় বোঝা যাচ্ছে লালনের চিন্তা মিলনমুখী। লালন মানুষে মানুষে মিলনের এক সেতু নির্মাণ করতে চান, লালন সমগ্র মানব সমাজের সম্মেলনের জন্য অর্কেস্ট্রা বাদন সঙ্গত করতে চান। তাই জাত হাতে পেলে তা আগুন দিয়ে পোড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,
জাত হাতে পেলে 
পোড়াতাম আগুন দিয়ে।
লালন তার ব্যক্তিগত মনীষা অনুশীলন ও উপলব্ধির দ্বারা বাউল সাধনাকে সর্বোচ্চে তুলে ধরেন। বাউল গান মরমিভাবাপন্ন হলেও সামাজিক জীবনে মানুষের বঞ্চনা-শোষণ-পীড়নের সামাজিক দলিল হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। অর্থাত্ লালনের হাতে বাউল গান তার মরমি তাত্পর্য পরিত্যাগ করে অধিকতর সামাজিক তাত্পর্য পেয়েছে। তার গানে ধর্মনিরপেক্ষ জীবন চেতনা, মানবমহিমাবোধ, আচারসর্বস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরোধিতা, জাতিভেদের প্রতি ঘৃণা, সামাজিক অসাম্যের অবসান কামনার প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত হয়েছে। লালনের বিদ্রূপ মূলত চিরাচরিত শাস্ত্রাচার ও প্রচলিত অন্ধধর্মবোধের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে লালনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবতাবাদী মননের পরিচয় পাওয়া যায়। লালন বলেন, 
অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছুই নাই
দেব-দেবতাগণ করে আরাধন
জন্ম নিতে মানবে
লালনের সমকালের সমাজ ছিল ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। লালন জীবনব্যাপী সংগ্রাম করেছেন এই কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। তার ব্যক্তিগত জীবনের যে দুঃখজনক অভিজ্ঞতার কথা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি তা তাকে সংস্কারমুক্ত মানসিকতা অর্জনে সাহায্য করেছে। মারাত্মক বসন্ত রোগে আক্রান্ত লালনকে মুসলমান-গৃহে আশ্রয় নেয়ার জন্য শুধু সমাজচ্যুতই হতে হয়নি একই সঙ্গে পিতা-মাতা-পত্নী-
সন্তান-সন্ততি চিরতরে ত্যাগ করতে হয়েছে। এটি ছিল তার জীবনের চরম নির্মম ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। জাতের সীমাবদ্ধতা যে মানুষকে খণ্ডিত ও কূপমণ্ডূক করে রাখে এ ঘটনায় লালন তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেন। তাই লালন কবীর-তুলসীদাস-রজ্জবের মতোই ধর্মীয় বিভেদকে তুচ্ছজ্ঞান করে সম্প্রদায়-নিরপেক্ষ সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন। তিনি বলেন সমগ্র মানবসংসারের জন্ম-মৃত্যু-আসা-যাওয়া অনন্তকাল ধরে একই ভাবে ক্রিয়াশীল, একই পানি আমরা পান করি তবু আমরা কেন বিভেদের মিথ্যা বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে পারি না। লালন বলেন, 
কেউ মালা কেউ তসিব গলায়
তাইতে কি জাত ভিন্ন বলায়
যাওয়া কিংবা আসার বেলায়
জেতের চিহ্ন রয় কার রে
অথবা 
জগত্-বেড়ে জাতের কথা/লোকে গৌরব কবে যথাতথা 
লালন সে জাতে ফাতা/বিকিয়েছে সাধ-বাজারে
গানের এসব কথায় সমাজের প্রতি লালনের তীব্র অসন্তোষ, শ্লেষ-বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
লালন গান রচনা করেছেন প্রধানত সাধন-সঙ্গীত হিসেবে। কবি-লেখক যেহেতু সমাজ নিরপেক্ষ নন এবং বিশেষত লালন সাধনায় মানবপ্রীতি, মানবহিতৈষণার প্রাধান্য রয়েছে সেই কারণে তার গানে বিস্ময়করভাবে সমাজ চেতনা প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক অবিচার ও অসাম্য, ধর্মীয় কূপমণ্ডূকতা, শ্রেণি-শোষণ তার গানের বিষয়বস্তুতে প্রকট হয়ে উঠেছে। লালন তার ব্যক্তিগত উপলব্ধিবোধ থেকে মানবমুক্তির যে-সব বাণী উচ্চারণ করেছেন তা নিঃসন্দেহে লালনকে শোষিত-বঞ্চিতজনের পরমবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। লালন তার গানে যুগসমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন এবং তা সমাধানের ইঙ্গিত করেছেন। লালনের সমাজ সচেতনতা, প্রাগ্রসর সমাজভাবনা, রেনেসাঁস কালের মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষা ‘সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা’ সর্বোপরি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিচয় তার সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের উদ্গাতা ভলতেয়ার, রুশো, অক্টোবর বিপ্লবের উদ্গাতা-সংগঠক লেনিন, সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের তত্ত্বীয় ব্যাখ্যার উদ্গাতাদ্বয় মার্কস-এঙ্গেলস, বাংলার নবজাগরণের পথিকৃত্ রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের সমাজ চিন্তার বিচার তুল্য-মূল্যে চলে। অন্নদাশঙ্কর রায়, অমলেন্দু দে প্রমুখ পণ্ডিত এ বিষয়ে উদেযাগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। লালনকে অনুপুঙ্খ জানার জন্য প্রথমত তার মানস গঠনে বাঙালির মনোজগত্ ও আর্থসামাজিক পটভূমির প্রতি পাঠকের মনোযোগ নিবদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে পারি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft