সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শীতে উত্তরের জনজীবন বিপর্যস্ত
Published : Sunday, 7 January, 2018 at 6:00 AM, Count : 930

বর্তমান ডেস্ক : রাজশাহী, দিনাজপুর ও পাবনায় শীত ও ঘনকুয়াশায়  জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পাবনায় ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। অন্যদিকে শীতজনিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিধি ও সংবাদতাদাদের পাঠানো খবর:
রাজশাহী: রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে টানা শীতে কাঁপছে জনজীবন।  রোববার বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবারের তুলনাই রোববার সকালে তাপমাত্রা আরও দশমিক ৫ ডিগ্রি কমে আসে। তাপমাত্রা হঠাত্ করে নিচে নেমে যাওয়ায় শীতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে জনজীবন। তীব্র শীতের কারণে শিশু ও ছিন্নমূল মানুষ কাতর হয়ে পড়েছেন। এতে চলাফেরা ও কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেককে খড়কুটো সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান,  রোববার সকালে রাজশাহীতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টার আগে ৫ দশমিক ৫ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশকি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রোববার ছিল চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রোববার সকাল ৬টার দিকে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা নিচে নামার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়া ঠাণ্ডার পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। চলতি সপ্তাহজুড়েই এই রকম ঠাণ্ডা থাকতে পারে বলে জানান। অনেকে তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। এতে শীতে কাহিল হয়ে পড়েন তারা। বিশেষ করে তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষ ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। কিন্তু ছিন্নমূল বা খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষের মাঝে তেমন সাহায্য নিয়ে হাত বাড়ানোর তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব মানুষরা। কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়ে জনজীবন। তীব্র শীতে অতিষ্ঠ রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ। যেন শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা গত ৩/৪ দিন থেকে বিরাজ করছে। রিকশাচালক আলী হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নগরীর শিরোইল বস্তির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, শীতের কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। এতো শীতেও কেউ একটি গরম কাপড় দেয়নি।
জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, কয়েকদিন থেকে উপজেলা পর্যায়ে শীতের কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। নগরীতে ৩টি টিমের মাধ্যমে শীতের কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শীতের কাপড় আছে।
দিনাজপুর: টানা শৈত্যপ্রবাহে দিনাজপুরে রোববার তাপমাত্রা নেমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। গতকাল দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে শীতের কারণে মানুষসহ গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণিকূল কাবু হয়ে পড়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত শনিবার ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং শুক্রবার ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে দিনাজপুরে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ গোটা উত্তর জনপদ। প্রচণ্ড শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও রোববার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। প্রচণ্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরাও কষ্ট পাচ্ছেন। শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ফলে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে বলে জানান ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন নার্স। ঘনকুশায় রাতের বেলায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। মধ্যরাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘনকুয়াশা অব্যাহত থাকে। ফলে দিনের বেলায়ও যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে পথ চলাচল করেছে। হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ বেড়েছে অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের। বিশেষ করে দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষগুলো বেশি বিপাকে পড়েছেন। শীতের কারণে কাজ করতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম খাদ্যসঙ্কটে রয়েছেন এসব মানুষ। এদিকে শীতের কারণে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় বেড়েছে। শহরের বড়মাঠে অবস্থিত কাচারি বাজারে পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানে ভিড় বেড়েছে। দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতায় গত দুদিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাবনা: পাবনায় স্মরণকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা। জেলায় রোববার ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ঈশ্বরদী আবহাওয়া অধিদফতরের টিপিও আবদুল খালেক সরকার। তিনি বলছেন, এ অবস্থা আরও বেশ কয়েকদিন থাকতে পারে। 
এদিকে প্রচণ্ড শীত আর হিমেল বাতাসে জুবুথুবু অবস্থার মধ্যে অতিবাহিত করছে এ অঞ্চলের মানুষ। তীব্র শীত, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশার মধ্যে মহাসড়কগুলোতে ধীরগতিতে যান চলাচল করছে। পাশাপাশি কিছুটা সিডিউল বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে ট্রেন চলাচল। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কাজের উদ্দেশে শহরে এসে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে জুবুথুবু অবস্থায় রয়েছেন। কেউ বা খড়কুটিতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রচণ্ড বিপাকে পড়েছে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি শিশুসহ বৃদ্ধ রোগীরা। এছাড়া গবাদিপশুগুলো শীতে করুণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে দরিদ্র ও মধ্যবৃত্তরা কনকনে ঠাণ্ডা আর হিমেল হাওয়া কাহিল হয়ে পড়েছেন। পুরনো শীতবস্ত্র কিনতে হকার্স মার্কেটে ভিড় করছেন মানুষেরা। নিজেদের চাহিদা মতো দরদাম করে কিনছেন জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, টুপি, হাতমোজা ও কম্বল। হকার্স মার্কেটে আসা ক্রেতারা বলছেন, গেলবারের তুলনায় এবার হকার্স মার্কেটের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্রের দাম একটু বেশি। যদিও একটু কষ্ট হচ্ছে; তবুও প্রয়োজনের তাগিদে কিনতে হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বিগত ১০ বছরের তুলনায় এবারেই বেশি শীত পড়ছে, এ কারণে তাদের বেচা কেনা ভালো হচ্ছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft