শিরোনাম: |
প্রযুক্তি ও নতুন প্রজন্ম প্রসঙ্গে
|
রায়হান আহমেদ তপাদার : ১৯৯৬ সাল থেকেই পুনরুদ্যমে শুরু, যদিও প্রথমদিকে অল্প কিছু মানুষের মধ্যে এটা সীমাবদ্ধ ছিল। গত সাত-আট বছর ধরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে। তবে এখনও খুব হাইটেক হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহূত হচ্ছে না। সাধারণ যোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ এবং বিনোদন-এ দুটোই প্রধান। এর সঙ্গে অল্প কিছু অনলাইন ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স হিসেবে কেনাকাটার কাজে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। গোটা দুনিয়া সাইবার অপরাধ নিয়ে যতটা সতর্ক ও সচেতন, আমরা তেমন নই। প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, প্রযুক্তিনির্ভর সন্ত্রাসীরা তার চেয়ে বেশি গতিতে এগোচ্ছে। তাই এখনই তাদের রুখতে না পারলে পরবর্তীতে তা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সম্প্রতি সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম নামে একটি দল ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সাইবার ক্রাইম শনাক্তকরণ কাজ শুরু করেছে বলে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। সিএসআইআরটি কাজ শুরু করায় সাইবার ক্রাইমের বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলবে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়- ওয়েবসাইটগুলোতে এমন বিষয় শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া এই দলের মূল কাজ। দেশে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পর্নোগ্রাফি। বর্তমানে পর্নোগ্রাফির করাল থাবা ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে, ব্লুটুথ-পেনড্রাইভ হয়ে কম্পিউটার থেকে সেলফোনে। দেশে পর্নোগ্রাফির বাজার ধরতে একশ্রেণির পেশাজীবী সাইবার অপরাধী যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় সাধারণরাও জড়িয়ে পড়ছে পর্নোগ্রাফিতে। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সাইবার ক্রাইম সংঘটিত হয় পর্নোসাইট বা পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে। গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি দেশি অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফির ৮৪টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিলেও বাংলাদেশে এসব সম্পর্কিত ওয়েবসাইটের ব্যবহার কমেনি। সাইবার অপরাধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেট ক্রাফট ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং ফেডারেল কমিউনিকেশনের পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট তৈরি ও নারীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি অরুচিকরভাবে প্রকাশ করছে। তাছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে থেমে নেই বাংলাদেশ। সোস্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ফেসবুক, টুইটার এবং মাইস্পেসে হাজার হাজার বন্ধু। প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের ধারায় কেউ ইন্টারনেটকে নিয়েছে পেশা হিসেবে, কেউ নিয়েছে শখ হিসেবে। আবার কেউ নিয়েছে মানুষের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে। দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধীরা। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারভিত্তিক অপরাধগুলোকে বলা হয় সাইবার ক্রাইম। বর্তমানে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা সারা দিন বসে চ্যাট করছে ইন্টারনেটে। মিলে যাওয়া বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হয় মোবাইলের মাধ্যমে, নয়তো কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে। এভাবে কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সাইটে সাইবার ক্রাইম ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক হারে। এসব প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানসম্মানের ভয়ে অনেকে এ অপরাধের শিকার হয়েও থানা পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করে না। দেশে প্রচলিত সাইবার ক্রাইমের মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ডের নম্বর চুরি, ব্ল্যাকমেইল, পর্নোগ্রাফি, হ্যারাজমেন্ট প্রভৃতি। দেশ প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অপরাধের মাত্রাও যোগ হচ্ছে। উল্লেখ্য, এখন অপরাধ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিময়। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতার হার বেড়েছে অনেক। অন্যান্য দেশে ইন্টারনেটে নজরদারি করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গঠিত টিম রয়েছে, যারা সবসময় পর্যবেক্ষণ করছে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তিনির্ভর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া। আমি একটা কথা বিশেষভাবে বলতে চাই, কম্পিউটার ও অনলাইনের ওপর আমাদের শতভাগ নির্ভরতা ঠিক হবে না। আমরা যেন অনলাইনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। কম্পিউটার এবং অনলাইন ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য প্রয়োজন, জীবনকে জটিল করার জন্য নয়। মানুষকে বিপদে ফেলার জন্য নয়। বিশেষ করে শিশুদের জগত এখন অনলাইনভিত্তিক হয়ে পড়ছে। মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ নিয়ে সে প্রচুর ব্যস্ত থাকছে। এটি শিশুর মনোজগতে বড় প্রভাব ফেলছে। স্কুলশিক্ষা তার সম্পন্ন হচ্ছে না যথাযথভাবে। এ নিয়ে আমাদের অভিভাবক বা শিক্ষকদের মাথাব্যথা আছে কি? এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী |