শিরোনাম: |
ভিন্নমাত্রার বিনোদন দেবে শাপলার বিল
|
আষাঢ় চলে গেছে শ্রাবণ এখনও শেষ হয়নি। তাই অনাবিল বৃষ্টি অহরহ ঝড়ছেই। আর তাতে কোনো কোনো এলাকা তলিয়ে গেলেও এরই মাঝে কেউ কেউ খুঁজে ফেরে কাঙ্ক্ষিত বিনোদন। এই তো জীবন! সে কারণে অবিরাম বর্ষণে কখনো কখনো কারো কারো মন হয়তো খারাপ হলেও হতে পারে। আবার এই বর্ষার জন্যই অধীর
আগ্রহে সারা বছর অপেক্ষা করেন এমনও আছেন অনেকে। তাই সবকিছু ছাপিয়ে আজ হাওয়া বদলে আপনাদের জন্য জানান দেব এমনই কিছু স্থান বা জায়গা যেখানে গেলে আপনার বর্ষাকাল সার্থক হবে আর আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক স্বপ্নমাখা দুনিয়ায়। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন ঘুরে আসি এই বর্ষায় আমরা কোথায় হারিয়ে যাব! জেনে নেই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন অনিন্দ্য তাওহীদ এই বর্ষায় আপনার জন্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে অনেক কিছুই। কেউ বলবে, পাহাড়-ঝরনা, কেউ বলবে সাগর-নদী কিংবা সবুজালয় বৃক্ষরাজি। কিন্তু এত কিছুর ভিড়েও যে ভিন্নমাত্রার বিনোদন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, তা হয়তো আপনি কখনোই ভাবেননি। ঠিক তাই, আজ আপনাদের এমনই একটি জায়গায় নিয়ে যাব যেখানে এসবের কোনো কিছুই নাই। আছে শুধু বর্ষার পানি আর তাতে সুরভিত হয়েছে শাপলা ফুল। বিশাল এলাকাজুড়ে সেই শাপলার সৌন্দর্য দেখলে আপনিও বলবেন, এ আবার কোথায় আসলাম, এ যেন শাপলার রাজ্য। হ্যাঁ, আপনি শাপলার রাজ্যেই আছেন। লতা-পাতা গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহস্র লাল শাপলা মনে হবে হার মানিয়েছে সূর্যের আভাকেও। বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এক বিলে দেখা মিলবে চোখজুড়ানো এমন দৃশ্যের। প্রকৃতির বুকে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা। অপরূপ এ সৌন্দর্য বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের এক বিলের। স্থানীয়দের কাছে যেটি পরিচিত শাপলার বিল নামে। আগাছা আর লতা-পাতায়, বিলের হাজারো শাপলা, চোখ জুড়ায় পথচারীদের। বিলের যত ভেতরে যাওয়া যায়, ততই বাড়তে থাকে লালের আধিক্য। এ বিলে ঠিক কবে থেকে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে তা নিয়ে নেই সঠিক কোন তথ্য। তবে, স্থানীয় বয়স্কদের কাছ থেকে জানা যায়, জন্মের পর থেকেই এভাবে শাপলা ফুটতে দেখেছেন তারা। এ বিলে তিন ধরনের শাপলা জন্মে। লাল, সাদা আর বেগুনি। তবে, লাল শাপলাই বেশি। গোটা গ্রামজুড়ে শাপলার চাষ হয় এখানে। উত্তর সাতলা নামে এ গ্রামটির প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলার চাষ করা হয়। গ্রামের অধিবাসীদের ৭০ শতাশংই শাপলা চাষ এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িত। এ গ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে শাপলা সরবরাহ করা হয়। শাপলার ছবি তোলার জন্য আদর্শ একটি গ্রাম সাতলা। কখন যাবেন যদিও এই গ্রামে শাপলা হয় প্রায় ৯ মাস। মার্চ থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত শাপলার পুরো সিজন এখানে। তাই এ সময়ের মধ্যে গেলে শাপলা দেখতে পাবেন। তবে এখন শ্রাবণ মাস বিধায় শাপলা ফোটার উপযুক্ত সময়। তাই এখন ঘুরে আসলেই সবচেয়ে ভালো। আর ফুলের অপার সৌন্দর্য দেখতে হলে আপনাকে খুব সকালে যেতে হবে, কেননা সকাল ৮টার পরে ফুল বুজে ছোট হয় যায় অথবা শাপলা শিকারিরা শাপলা তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যায়। সবচেয়ে ভালো হয় রাতে গ্রামে থাকতে পারলে। সাতলা কীভাবে যাবেন উত্তর সাতলা নানাভাবে যাওয়া যায়। লঞ্চে বরিশাল গিয়ে সেখান থেকে বাসে শিকারপুর। এরপর অটোরিকশায় উত্তর সাতলা। ঢাকা থেকে বাসে গেলে উজিরপুরের নতুনহাট নেমে সেখান থেকে অটোরিকশায় যেতে পারেন। অথবা বরিশাল নতুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা-বাগধা গ্রামে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। প্রায় ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এছাড়া মহেন্দ্র গাড়িতে করেও আপনি যেতে পারবেন। আকাশপথে গেলে গাড়িতে করে শিকারপুর, তারপর অটোরিকশায় সাতলা গ্রাম। কোথায় থাকবেন সাতলাতে থাকতে হলে থাকতে হবে স্কুল ঘরে বা কোনো গৃহস্তের বাড়িতে। অতিথিপরায়ন মানুষেরা তাতে খুশিই হবে। এছাড়া আপনি চাইলে বরিশাল ফিরে আসতে পারেন। বরিশালে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল তো রয়েছেই আপনার অপেক্ষায়। |