শিরোনাম: |
রাস্তায় অপচয় কর্মঘণ্টা
|
মোহাম্মদ আবু নোমান : বিশ্লেষকদের মতে, গত এক দশকে যানজটে অপচয় হওয়া সময় ব্যবহূত হলে বাংলাদেশ বহু আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো। যানজট অনেকগুলো সম্পর্কযুক্ত সমস্যার সামগ্রিক ফল। ইতিপূর্বে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্তরের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ এখন খুবই জরুরি। তাছাড়া এই যানজট এখন শুধু রাজধানীবাসীরই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে- অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ।
বর্তমানে ঢাকার যানবাহনের গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা যদি বর্তমান গতিতে বাড়তে থাকে, ২০২৫ সাল নাগাদ গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটারে নেমে আসবে, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। অথচ মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের উপরে। ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি। ঢাকার পাশে একটি স্যাটেলাইট সিটি করে সেখানে সচিবালয়সহ সরকারি অফিসগুলো নিয়ে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে দুরত্ব কোনো সমস্যা নয়। ঢাকার ৯০ শতাংশ লোকের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। দোতলা বাস চালু করা। বর্ধিত ঢাকার সঙ্গে মূল ঢাকায় চলাচলের জন্য অধিকসংখ্যক বাইপাস সড়ক নির্মাণ। রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করা। যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা প্রতি বছর অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। এ তথ্য বিশ্বব্যাংকের। যানজটের জন্য মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসন অনেকটাই দায়ী। মনে হয়, ঢাকা যেন মৌচাক, আর জনতা মৌমাছি। আর সেই মধুর লোভে পারলে ১৬ কোটি মানুষই ঢাকায় সেটেল হয়ে পড়ে! দেশের প্রতিটি এলাকা থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ আসছে কাজের খোঁজে। সাগর-নদী থেকে বালতি-বালতি পানি তুলে নিয়ে কি কমানো যাবে? তেমনি ঢাকা শহরমুখী অভিবাসনকে ঠেকানো ও বিকেন্দ্রীকরণ না করলে ঢাকার যানজট কমবে না। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে ঢাকার বাইরের বাংলাদেশটাকে নিয়ে ভাবতে হবে যাতে সেখানে থেকে মানুষ ঢাকামুখী হতে বাধ্য না হয়। গবেষণায় এসেছে, আর কয়েক বছর পরে ঢাকায় গাড়িতে করে চলতে হবে না। গাড়ি হাঁটবে আর মানুষ দৌড়াবে। নয়তো উড়াল গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে ঢাকাবাসীকে! প্রত্যেকে নিজ বাড়ির ছাদের ওপর থেকে উড়াল দিবেন, অফিসের ছাদে ল্যান্ড করবেন! কথাটি শুধু ‘রস’ করেই বলা নয়। বরং তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর কাছে ডাল-খিচুড়ি মাত্র। আর এর বাইরে আরেকটি ‘বিকল্প পরীক্ষিত পদ্ধতি’ চালু সম্ভব! তা একটু পরেই বলছি। আশ্চর্যের বিষয় হলো দীর্ঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে সিটি করপোরেশন বা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না কেন? এখানেই উপরোল্লিখিত বিকল্প পরীক্ষিত পদ্ধতি চালু করা অতি জরুরি। তা হলো— মেয়র বা মন্ত্রীরা তো আর যানজটের শিকার কখনও হন না। এ জন্যই তারা হয়তো ব্যাপারটা উপলব্ধিও করতে পারছেন না। যেন মনে হয় দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা শুধু কথা বলেই খালাস। এটা করা হবে, ওটা করা হবে, করছি, করব...। এসব শুনতে শুনতে কারোরই আর ভালো লাগে না। যেখানে ৫ বছরেও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার সম্পন্ন হয়নি। এখন এমআরটি, বিআরটি, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কবে সম্পন্ন হবে? একটি ফ্লাইওভার তৈরি হতে কেন এত সময় লাগছে তার কোনো ব্যাখ্যা আজ জনগণ জানতে পারছে কি? কেন প্রতি বছর রাস্তা কেটে উন্নয়নের কথা বলে জনগণকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে? কেন বর্ষা মৌসুমে রাস্তা মেরামত কাজ করা হয়? একই রাস্তা কেন বারংবার মেরামতের দরকার হয়? কেন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজ করা হয় না? তার কোনো ব্যাখ্যা আছে কি? রাজউক, ডেসা, ওয়াসা, ডেসকো আলাদাভাবে গড়ে ওঠা ও সমন্বয়হীনভাবে কাজ করায় আসলে কোনো লাভ হচ্ছে না। শুধুই বিড়ম্বনা ছাড়া কিছুই না। বিশ্লেষকদের মতে, গত এক দশকে যানজটে অপচয় হওয়া সময় ব্যবহূত হলে বাংলাদেশ বহু আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো। যানজট অনেকগুলো সম্পর্কযুক্ত সমস্যার সামগ্রিক ফল। ইতোপূর্বে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক জরিপে ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্তরের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ এখন খুবই জরুরি। তাছাড়া এই যানজট এখন শুধু রাজধানীবাসীরই নয়, জাতির জন্যও এক বিড়ম্বনার নাম। দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর সমস্যা। যানজটের কারণে যে সময়ক্ষেপণ ঘটছে- অর্থনীতির বিচারে তার ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ। এ সমস্যা উত্পাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দেশের রফতানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজধানীকে অস্বস্তির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বিঘ্নিত হচ্ছে যানজট তার অন্যতম। প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরী ইতোমধ্যে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমস্যাবহুল নগরী হিসেবে বদনাম কুড়িয়েছে। বর্তমানে ঢাকার যানবাহনের গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটার। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা যদি বর্তমান গতিতে বাড়তে থাকে, ২০২৫ সাল নাগাদ গড় গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটারে নেমে আসবে, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। অথচ মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারের উপরে। ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এমন জনসংখ্যার একটি নগরীর উত্পাদনশীলতা বাড়ানো গেলে তা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান করতে হবে। যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি। ঢাকার পাশে একটি স্যাটেলাইট সিটি করে সেখানে সচিবালয়সহ সরকারি অফিসগুলো নিয়ে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে দুরত্ব কোনো সমস্যা নয়। ঢাকার ৯০ শতাংশ লোকের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। দোতলা বাস চালু করা। বর্ধিত ঢাকার সঙ্গে মূল ঢাকায় চলাচলের জন্য অধিকসংখ্যক বাইপাস সড়ক নির্মাণ। রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করা। ঢাকার ফুটপাত সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে কতিপয় রাজনৈতিক মাফিয়ার স্থানীয় মাস্তানদের বাণিজ্যের ভেতরে। প্রবণতা চলেছে সব সরকারের আমালেই। এ জন্য সরকারকে দলীয় স্বার্থের ওপরে উঠে কিছু নীতিমালাকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার সঙ্গে বাস্তবায়িত করতে হবে। রাজধানীর রাজপথ দখলমুক্ত হলে যানজট সহনীয় মাত্রায় আসবে। যানজট শুধু রাস্তার সমস্যা নয়, এটা এক হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, প্রশাসনিক অদক্ষতার ফসল। এছাড়া নগরবাসীকেও তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালনে সচেতন এবং রাস্তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শিক্ষিত ব্যবসায়ীরা মতিঝিল ও কারওয়ান বাজারসহ যেখানে-সেখানে গাড়ি রেখে দেন; তখন সড়কের প্রস্থ কমে গিয়ে তৈরি হয় দুর্বিসহ যানজট। মানসম্মত চলমান গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে যার সামর্থ্য আছে তিনি তো গাড়ি কিনবেন অথবা কেনার স্বপ্ন দেখবেন। এই ধরনের মানসিকতার ফলাফল কেমন হতে পারে? যেমন- মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, মহাখালী বা বনানী এলাকায় হাজারো স্কুল রয়েছে। যদি প্রতিটি স্কুলে দুই হাজার ছাত্রছাত্রী থাকে, তাহলে কম হলেও এক হাজার থেকে দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসবে তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে। এর ফলে ওইসব স্কুল শুরু এবং শেষের সময়ে সেসব এলাকায় তীব্র যানজট হওয়াই স্বাভাবিক। যদি এমন একটি ব্যবস্থা করা হয় যে স্কুলের নিজস্ব দ্বিতল পরিবহন এবং নিরাপত্তাকর্মীরা নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে আসবে এবং ছুটির পর বাসায় পৌঁছে দেবে, তাহলে অনেকগুলো গাড়ি রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করা একটা স্বপ্নবিলাস মনে হলেও সুপরিকল্পনা নিলে অসম্ভব নয়। |