শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড়
Published : Saturday, 22 July, 2017 at 6:00 AM, Count : 827

এম. উমর ফারুক : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর ঘিরে রাজনীতিতে উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিএনপি নেতারা এটাকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত তথা চিকিত্সার জন্য সফর বললেও আওয়ামী লীগ তা মানতে নারাজ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিদিন বিভিন্ন সভা সেমিনারে কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। খালেদা জিয়া লন্ডন চলে যাওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে। চলছে নানা হিসেব-নিকেশ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান বেশ কয়েক বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন বলে দলের নেতারা জানান।
সূত্র মতে, বেগম খালেদা জিয়ার এই সফরে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং আন্দোলনের ছক তৈরি, লন্ডন থেকে ফিরেই আন্দোলনের কর্মসূচি, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তকরণসহ জাতীয় রাজনীতির ইত্যাদি বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন খোদ বিএনপি নেতারা। এদিকে, ক্ষমতাসীন খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে এক ধরনের টেনশনে রয়েছে। বিভিন্ন সভা সেমিনারে দেয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। এ কারণেই সফরটি একান্তই খালেদার ব্যক্তিগত ও চিকিত্সার জন্য হলেও তা রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। ক্রমেই আলোচনা-সমালোচনার ডালপালা গজাচ্ছে। এমনকি গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসেছে খালেদা জিয়ার সফরটি।
বৈঠক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে যা বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেয়া একজন মন্ত্রী অনির্ধারিত আলোচনায় বলেন, উনি (খালেদা) গেছেন, কিন্তু আসবেন কি-না, কেউ জানে না। মন্ত্রীর এমন উক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেখেন ফিরে আসেন কি-না?’ শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার একদিন পরই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলছেন মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন। তিনি আর দেশে ফিরবেন না বলেও তারা সন্দেহ প্রকাশ করছেন। খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বমহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া পালিয়ে লন্ডন চলে গেছেন। মামলার ভয়ে খালেদা জিয়া আর ফিরে আসবেন না বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে ইঙ্গিত করে কাদের এও বলেন, আমাদের শক্তির উত্স বাংলাদেশের জনগণ। বিদেশে বসে শেখ হাসিনাকে হটানোর ষড়যন্ত্র সফল হবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একেবারে দেশের বাইরে চলে যাননি। তিনি ফিরে আসবেন। গতকাল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডন সফর নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যকে অনভিপ্রেত ও শিষ্ঠাচারবহির্ভূত বলেন ফখরুল।
এদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দেশে বন্যা হচ্ছে অথচ খালেদা জিয়া তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে মানি লন্ডারিং মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতে ও তার মামলার রায় বিলম্ব করতেই লন্ডনে গেছেন। বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সা করাতে নয়, ষড়যন্ত্র করতে লন্ডনে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
অন্যদিকে, খালেদা জিয়া যাতে দেশে ফিরতে না পারে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চক্রান্ত হচ্ছে কি-না সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিএনপি নেতারা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা একই সঙ্গে এই বিষয়টির অবতারণা করাতে এ ব্যাপারে তাদের সন্দেহ সংশয় ঘনীভূত হয়েছে। তবে সরকার এমনটা করতে চাইলেও সম্ভব হবে না বলেও বিশ্বাস করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এমন কথা বলা তার উচিত হয়নি। ২০১৫ সালে যখন খালেদা জিয়া বিদেশ গিয়েছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছিলেন, তিনি আসবেন না। কিন্তু তিনি ফিরেছিলেন। এবারও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত বুধবার লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের সব বিষয়ে কথা হবে। সবকিছু নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণমানুষের নেত্রী খালেদা জিয়া আপোষহীনভাবে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। যে নেত্রী শত-শত নির্যাতনের মধ্যে লড়াই করছেন, তিনি ফিরে আসবেন না, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তিনি অবশ্যই তার চিকিত্সা শেষে দেশে ফিরবেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন।
দলটির মধ্যম সারির নেতারা দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষািট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। কেননা, দলের সারাদেশের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সেটাই প্রত্যাশা করে এবং এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন।
১৫ জুলাই যুক্তরাজ্য সফরে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর। এর আগে ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া চিকিত্সার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন। এছাড়া ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে ফেরার পথে লন্ডনে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমানসহ তার পরিবারের সঙ্গে দুই মাসেরও অধিক সময় কাটিয়েছিলেন। এবারও সেখানে প্রায় ২ মাস কাটাতে পারেন বলে লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft