শিরোনাম: |
ইংল্যান্ড থেকে ফেরা নিয়ে তামিমের ভাষ্য
তামিমের ঘটনায় ইংলিশ মিডিয়া কী বলছে?
|
ক্রীড়া প্রতিবেদক : অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এসেক্স লিখেছিল, ‘কারণটি ব্যক্তিগত’। কিন্তু কিছু সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, লন্ডনে ‘হেইট ক্রাইমের’ শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন তামিম ইকবাল। তার পরিবারকে নাকি অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার চেষ্টা হয়েছে। তবে নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় সেই খবর উড়িয়ে দিলেন তামিম।
বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১১টার দিকে এক পোস্টে তামিম এসেক্সের হয়ে এক ম্যাচ খেলে হঠাত্ করেই ফেরার কারণ দেখিয়েছেন ‘ব্যক্তিগত’। ‘আমি আমার সব ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীকে জানাতে চাই যে, এসেক্সে আমার মৌসুম আগেই শেষ করে দেশে ফিরছি ব্যক্তিগত কারণে। কিছু সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে আমরা হেইট ক্রাইমের শিকার হয়েছি। এটি আসলে সত্যি নয়।’ ভবিষ্যতে আবার ইংল্যান্ডে ফিরতে তিনি মুখিয়ে আছেন তামিম। ‘ক্রিকেট খেলার জন্য আমার প্রিয় জায়গাগুলির একটি ইংল্যান্ড এবং আগে চলে যেতে হওয়ার পরও এসেক্স আমার প্রতি ছিল দারুণ সৌজন্যময়। সব ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের ভাবনা ও নানা বার্তার জন্য। ভবিষ্যতেও ইংল্যান্ডে খেলার অপেক্ষায় থাকব আমি।’ এসেক্সের হয়ে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলতে গত শনিবার ইংল্যান্ডে যান তামিম। খেলেছেন একটি ম্যাচ। মঙ্গলবার বিকেলে এসেক্স জানায়, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ দেশে ফিরছেন তামিম ইকবাল। এই সময়ে তামিমের ‘প্রাইভেসি’ রক্ষা করতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে কাউন্টি দলটির বার্তায়। মাত্র এক ম্যাচ খেলেই ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এসেছেন তামিম ইকবাল। এ নিয়ে দেশীয় সংবাদমাধ্যম বেশ সরগরম। বর্ণবাদী আচরণ, নাকি আসলেই ‘ব্যক্তিগত’ কারণে তামিমের এমন ফেরা এ নিয়েও চলছে তর্ক-বিতর্ক। ইংলিশ গণমাধ্যমকেও ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে। তামিমের ফেসবুক ও টুইটার বার্তার পর বিসিবি কর্মকর্তার দেওয়া বিবৃতিতে ‘হেট ক্রাইমের’ বর্ণনায় দ্বিধাগ্রস্ত তারাও। তবে সেই দেশের মিডিয়া কেন বিষয়টি নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে না, এ নিয়ে ইংলিশ পাঠকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। বিভিন্ন খবরের মন্তব্যে তারা বলেছেন, কোনো ইংলিশ ক্রিকেটার সামান্য কোনো ঘটনাতেও বাংলাদেশ থেকে ফিরে এলে কী হতো? সেখানে এ ঘটনায় ইংলিশ মিডিয়া এভাবে নিষ্ক্রিয় না থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখুক। গত সোমবার ইস্ট লন্ডনের স্ট্রাটফোর্ডে কিছু শ্বেতাঙ্গ তরুণের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হন তামিমের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। ব্যাপারটি এসেক্সকে জানিয়ে পরদিনই সপরিবারে দেশের উদ্দেশে লন্ডন ছাড়েন তামিম। এসেক্স এক বিবৃতিতে জানায়, তামিম ‘ব্যক্তিগত কারণে’ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি ওপেনারও দেশে ফেরার কারণ হিসেবে ফেসবুক ও টুইটারে ‘ব্যক্তিগত কারণে’র কথাই বলেছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ছাপা হওয়া খবর অস্বীকার করেছেন। তামিমের দেশে ফেরার প্রস্তাবে এসেক্স রাজি হলেও ঘটনাটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই পক্ষ মিলেই। সে কারণেই এ নিয়ে যতটা সম্ভব চুপ থাকছেন তামিম। কিন্তু বিসিবির সূত্রে ঘটনাটি প্রকাশ পেয়ে যায়। কলকাতার এজেন্টের বরাত দিয়েও কলকাতার একটি দৈনিকও বিষয়টি জানিয়ে দেয়। একদিকে তামিম বলছেন কিছুই হয়নি, আবার বিসিবির সূত্র বলছে, ‘হেট ক্রাইম’ করা হয়েছে তামিমের পরিবারের সঙ্গে। এমন দ্বিমুখী কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয় পড়ছে ইংলিশ সংবাদমাধ্যম। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে একজন নিরপেক্ষ দর্শকের দৃষ্টিতে। তবে, তাদের শিরোনাম দেখে চমকে উঠতে হয়, ‘চাপে পড়েই (ফোর্সড টু) তামিম ইকবাল তার পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা (এসেক্স থেকে বিদায়ের কারণ) অস্বীকার করছেন’। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, বিসিবির এক সূত্র তাদের বলেছে, তামিমের স্ত্রী বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন। তবে অ্যাসিড নিক্ষেপের যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটা সত্য নয়। টেলিগ্রাফ এর সঙ্গে তামিমের ফেসবুক স্ট্যাটাস যোগ করে দিয়েছে। ডেইলি মেইলও তামিমের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা উল্লেখ করেছে। তবে, এ রিপোর্টে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, তামিমের সঙ্গে নিশ্চয় কোনো ঘটনা ঘটেছে বলেই এক ম্যাচ খেলেই ফিরছেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করায় তামিম ও এসেক্স ক্লাব দুইপক্ষই ঘটনাটিকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই দাবি মেইলের। সত্য ঘটনা যা-ই হোক, এ ঘটনা ক্রিকেট ও লন্ডনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে পত্রিকাটি। বিবিসির রিপোর্ট অবশ্য তামিমের বিবৃতি মেনে নিয়েই লেখা হয়েছে। লেখাগুলোর নিচে ব্রিটিশ পাঠকেরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, যদি এমন ঘটনা সত্যিই ঘটে থাকে। কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করলেও বেশির ভাগই পুরো উড়িয়ে দিতে পারছেন না। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে হেট ক্রাইম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। বেশ কিছু গুরুতর ঘটনাও ঘটেছে এর মধ্যে। তবে ব্রিটিশ পাঠকেরা বলেছেন, বৃটেন গণতান্ত্রিক দেশ। সব বর্ণ, ভাষা ও ধর্মের সম্মিলন। কোনো ধর্মের নাম করে আক্রমণ বিচ্ছিন্ন কিছু উগ্রবাদী মানুষ করে থাকে, সে তারা ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করুক কিংবা খ্রিস্ট। হাতে গোনা কিছু মানুষের হঠকারিতা কোনো দেশ বা ধর্মের ওপরে চাপানো যাবে না। তামিমের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আবার সেই দেশে ফেরার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনেকে। |