শিরোনাম: |
কুড়িগ্রাম গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
|
বর্তমান ডেস্ক : কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধায় ৫১টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম: রোববার ভারতের ১১টি পয়েন্টে নদীর মুখ খুলে দেয়ায় ফের কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার রাত থেকে নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ছকিনা বেওয়া জানান, হামার বাড়িততো দুইদিন হইল পানি উঠছে। এ্যাল্যা হামরা কটে যায়া থাকি বা। কাইয়োতো কোনো হেলেপ করিবেন নাগচেনা। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলা ও চিলমারীতেও বন্যায় তলিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি। কোদালকাটি ইউনিয়নের রেহেলা আক্তার ও জামির উদ্দি জানান, এবার বন্যার পানি যেভাবে আসতেছে তাতে আমাদের কষ্টের সীমা থাকবে না। বন্যাকবলিত বেশির ভাগ মানুষ গত ৪ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছে। নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পথ-ঘাট ও ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে তাদের। বন্ধ রয়েছে জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, আমরা বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি সাহায্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করা যায় কবলিতদের সমস্যা হবে না। এদিকে উলিপুর সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদ-নদীর তীরবর্তী স্থানগুলোতে ব্যপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। উপজেলার নদ-নদী কবলিত বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, হাতিয়, সাহেবের আলগা, দলদলিয়া, থেতরাই, বজরা ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া, কবিরাজপাড়া, মসালের চর, শেক পালানু, পূর্ব দুর্গাপুর, চিতুলিয়া, নামাজের চর, চর বাগুয়া, গেন্দার আলগা, কাজিয়ারচর, ঘুঘু মারি, কলাকাটা, সাতভিটা, ফকির মোহাম্মদসহ বিচ্ছিন্ন চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৬.০৪ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয় পয়েন্টে ২৮.৮২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪.০২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলের প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন ফসল পোটল, ঢেঁড়শ, করলা, ঝিঙা, মরিচ, চিচিঙ্গাসহ সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সব উঠতি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে দরিদ্র কৃষকেরা। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে হাতিয়া নয়াডাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছে। হাতিয়া ইউনিয়নের চর অনন্তপুর গ্রামের আবদুর রহমান, নজর আলী, ইসলাম মিয়া, আজাহার আলীসহ অনেকেই জানান, ঘরের ভেতর থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় কেউ চৌকি আবার কেউ বাঁশের মাঁচানের ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। এ অবস্থায় ঘরে খাবার ও হাতে কাজ না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এদিকে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, আশা করছি দ্রুত পানি নেমে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং মেডিকেল টিমসহ আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া আছে। গাইবান্ধা: গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সোমবার আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৭ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলা শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ১ সেমি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বিপদসীমা অতিক্রম করলে আশপাশের এলাকাসহ পুরো জেলা শহর নিমজ্জিত হবে। জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এছাড়া তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪ উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। ওইসব এলাকার নিম্ন ও চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চরাঞ্চল বেষ্টিত ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ১৩০টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিদ্যালয় কক্ষে পানি উঠায় ঝানঝাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গলনা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কটকগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সংশ্ল্লিষ্ট দফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সাঘাটার জুমারবাড়ি থেকে সুন্দরগঞ্জের তারাপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশকিছু এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। চিহ্নিত এলাকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হচ্ছে সাঘাটার বসন্তের পাড়া, গোবিন্দী, ফুলছড়ির রতনপুর, সিংড়িয়া, কাতলামারি, সদর উপজেলার কামারজানি, কাজলঢোপ, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছয়ঘড়িয়া, সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া। এরেন্ডাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, কয়েকদিনের ভাঙনে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, পশ্চিম জিগাবাড়ি, হরিচন্ডি, পাগলারচর এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে ১৪০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিগাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ও জিগাবাড়ি কমিউনিটি ক্লিনিক। ফুলছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেমায়েত আলী শাহ জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হবে। ফুলছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হেমায়েত আলী শাহ জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন নিচু এলাকার মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আসার মতো পরিস্থিতিতে পড়েননি। তবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও তৈরি রাখা হয়েছে। প্রশাসনের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। সুতরাং কোথাও কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, ফুলছড়ি ও সাঘাটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি পানি চলে আসায় সেই এলাকায় বসবাসকারি পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। |