শিরোনাম: |
যে ১১টি ফিটনেস মিথ ভালোর চেয়ে মন্দ করে বেশি
|
আপনি নিজের শক্তি বৃদ্ধি করতে চান, স্লিম হতে চান বা মেজাজের উন্নতি ঘটাতে চান বলে ফিটনেস রুটিন অনুসরণ করেন। ফিটনেস সম্পর্কে কিছু মিথ প্রচলিত আছে তা হয়তো আপনিও বিশ্বাস করেন, কিন্তু এই প্রচলিত মিথগুলো আসলে ভুল! হ্যাঁ, আজকের ফিচারে আমরা এমন ১১টি ফিটনেস মিথের কথাই জানব যা আসলে ভুল এবং এর বিপরীতে বিজ্ঞান কী বলে তাও জেনে নেব –
মিথ ১: আপনার দেহের গড়ন ঠিক রাখার জন্য সপ্তাহে এক বা দুই বার ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। সত্য: সপ্তাহে এক বা দুই দিন ব্যায়াম করাটা কোন টেকসই স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারেনা। নিউ জার্সির রুটগারট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সারসাইজ সায়েন্টিস্ট শাওন আরেন্ট সম্প্রতি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ‘সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন পরিকল্পিত ব্যায়ামের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো’। মিথ ২: ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগ অর্থাত্ সকাল। সত্য: ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় সেটাই যখন আপনি মনোযোগ দিয়ে ব্যায়াম করতে পারবেন। তাই যদি রাতে জিমে যাওয়া আপনার জন্য ভালো হয় তাহলে রাতেই যান জিমে। আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে ওঠেই দৌড়ানো পছন্দ করেন তাহলে তাই করতে পারেন। যদি আপনার কোন পছন্দ না থাকে তাহলে কিছু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগে ব্যায়াম করলে ওজন কমার গতি বৃদ্ধি পায় সারা দিনে চর্বি পোড়ার মাধ্যমে। মিথ ৩: ভারোত্তলন করলে চর্বি পেশিতে পরিবর্তিত হয়। সত্য: চর্বি কখনোই পেশিতে পরিবর্তিত হয় না। শারীরবৃত্তীয় ভাষায় বলা যায় যে, টিস্যু ২ ধরনের হয়। এডিপস (চর্বিযুক্ত) টিস্যু পাওয়া যায় ত্বকের নিচে, স্যান্ডউইচ এর মত পেশির মধ্যবর্তী স্থানে থাকে এটি এবং হূদপিণ্ডের মতোই অভ্যন্তরীণ অঙ্গের চারপাশে থাকে এটি। আরেকটি হচ্ছে মাসেল টিস্যু যা ভেঙ্গে ৩ টি প্রধান ভাগে বিভক্ত হয় এবং সারা শরীরে এদের পাওয়া যায়। ওয়েট ট্রেইনিং এর ক্ষেত্রে যা হয় তা হলো- এটি যে কোনো ফ্যাট টিস্যুর মধ্যে বা চারপাশে মাসেল টিস্যু গঠিত হতে সাহায্য করে। ফ্যাট টিস্যু কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে শাকসবজি, আস্ত শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিনযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং অলিভ অয়েল ও মাছের মত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করা। মিথ ৪: ধাঁধার সমাধান করা এবং গেম খেলা মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সত্য: সাম্প্রতিক গবেষণা মতে, যে কোনো ধরনের মানসিক ধাঁধার বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে প্রাচীন শারীরিক ব্যায়াম। দুটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, এরোবিক ব্যায়াম যা আপনার হূদস্পন্দন বৃদ্ধি করে এবং ঘাম ঝরায়, তা করলে মস্তিষ্কের উপর উপকারী প্রভাব পরে। এরোবিক ব্যায়াম হূিপণ্ডের জন্য যেমন উপকারী তেমনি মস্তিষ্কের জন্য ও উপকারী। মিথ ৫: ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ব্যায়াম করা। সত্য: ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এর এক্সারসাইজ সায়েন্টিস্ট ফিলিপ স্টেনফোরথ বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ব্যায়ামের চেয়ে ডায়েট প্ল্যান অনেক বড় ভূমিকা রাখে। স্লিম হতে চাইলে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। মিথ ৬: সিক্স প্যাক এবস পাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সিট আপস। সত্য: সিট আপস এ কেবল পেটের পেশিকে টার্গেট করা হয়। প্লাঙ্কস রিক্রুট এ পেটের সামনের, পেছনের ও পাশের বিভিন্ন প্রকার মাসেলের উপর কাজ করে। সিক্স প্যাক এর জন্য এই সবগুলো পেশিকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়। মিথ ৭: ভারোত্তলন শুধু ছেলেদের জন্য। সত্য: ওয়েট ট্রেইনিং বা ভারোত্তোলন করলে পেশি শক্তিশালী হয়, এতে লিজ্ঞের পার্থক্য করার কিছু নেই। গড়ে পুরুষের চেয়ে নারী দেহে কম টেস্টোস্টেরন উত্পন্ন হয় এবং গবেষণায় বলা হয়েছে যে, আমাদের পেশি কীভাবে গঠিত হবে তাতে ভূমিকা রাখে হরমোন। মিথ ৮: দেহের গড়ন পরিবর্তনে অন্তত ২ সপ্তাহ সময় লাগে। সত্য: বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই নিয়মিত ব্যায়াম করা ছাড়াই মাসেল টিস্যু ভাঙতে শুরু করে ১ সপ্তাহের মধ্যে। আরেন্ট বলেন, আপনি যদি ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেন তাহলে আপনার ফিটনেস কমবে বা কমতে শুরু করবে। তাই এটিকে ব্যবহার করুন বা হারান। মিথ ৯: মেরাথনে অংশগ্রহণ করা ফিট থাকার আদর্শ উপায়। সত্য: দ্রুত এবং সবলভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট দৌড়ানো ঘন্টা ব্যাপী দৌড়ানোর মতোই স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারে। তাই ম্যারাথনে দৌড়াতে না পারলে কোন সমস্যা নেই। মিথ ১০: আপনি কী খাচ্ছেন তা নিয়ন্ত্রণ করার সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপায় হচ্ছে ফুড ডায়েরি রাখা। সত্য: এমনকি যখন আমরা আমাদের শরীরে কী দিচ্ছি এবং আমরা কতোটা সক্রিয় ছিলাম সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য চেষ্টা চালাই তখন আমরাই নিজেদেরকে অনেক বেশি ক্রেডিট দিয়ে দেই যা আমাদের প্রাপ্য না। স্টেনফোরথ বলেন, শারীরিক সক্রিয়তাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে এবং তারা কী পরিমাণ খাবার খাচ্ছে তাকে কম গুরুত্ব দিতে দেখা যায় তাদের। তারা এটাই ভাবে যে, তারা কম খায় এবং বেশি কাজ করে। মিথ ১১: ব্যায়ামের পরে রি হাইড্রেট হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে স্পোর্টস ড্রিংক পান করা। সত্য: বেশির ভাগ স্পোর্টস ড্রিংক হচ্ছে শুধু চিনি ও পানিতে পূর্ণ। এর পরিবর্তে সাধারণ পানি পান এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত স্ন্যাক্স খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু গবেষণায় জানা গেছে যে, ব্যায়ামের পরে পেশির পুনর্নির্মাণে সাহায্য করে প্রোটিন। - স্বাস্থ্যকথন ডেস্ক |