শিরোনাম: |
একাদশ সংসদ নির্বাচন
ঢাকা জেলায় রদবদল হচ্ছে বিএনপির প্রার্থী
|
এম. উমর ফারুক : আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করছে বিএনপি। এ তালিকায় ঢাকা জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। রদবদল করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীর। দলের পরীক্ষিত ত্যাগী ও স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় নেতাদের নেয়া হচ্ছে প্রার্থী তালিকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমগ্র ঢাকা জেলার ৪৯টি থানাকে ২০টি আসনে ভাগ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে আসন নং১৭৪ থেকে ১৯৩ পর্যন্ত আসনগুলো ঢাকা জেলার নির্বাচনী এলাকা। এই ২০টি আসন থেকে গত নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের অনেককেই বাদ দিয়ে অন্তত দশটি আসনে এ প্রার্থিতা পরিবর্তন করা হচ্ছে। দলের এ অবস্থান বুঝতে পেরে এসব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। এর পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে গুলশান অফিস ও নয়াপল্টন অফিসে যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবহার করছেন ফেসবুক, টুইটারসহ যোগাযোগের সব মাধ্যম। আর এসব মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্যপ্রার্থী পরিবর্তনের তালিকায় রয়েছে ঢাকা-৪ (শ্যামপুর), ঢাকা-৮ (মতিঝিল), ঢাকা-৯ (সবুজবাগ), ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি), ঢাকা-১১ (বাড্ডা), ঢাকা-১২ (তেজগাঁও), ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর), ঢাকা-১৫ (মিরপুর), ঢাকা-১৬ (পল্লবী) ও ঢাকা-১৮ (উত্তরা)। সূত্র মতে, ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশরাফও মনোনয়ন চাইবেন। ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ-কামরাঙ্গীচর) চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এবারও এই আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন বলে জানা গেছে। তবে কোনো কারণে তাকে দেয়া না হলে বিকল্প হিসেবে কামরাঙ্গীচর থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেনের নামও রয়েছে। ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্চ) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও তার মেয়ে বিএনপির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অর্পণা রায় কাজ করছেন। ঢাকা-৪ (শ্যামপুর) আসনে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মুন্সীগঞ্জের সাবেক এমপি আবদুল হাই। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারও মুন্সীগঞ্জ থেকেই মনোনয়ন পেতে পারেন। এভাবে কাজও করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভির আহমেদ রবিন কাজ করছেন। এছাড়াও জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-৫-(ডেমরা-যাত্রাবাড়ী) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। তা সম্ভব না হলে সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদ এ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়ে লড়বেন।এ আসন থেকেও জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-৬ (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। কিন্তু মামলা ও অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে ফিরতে না পারলে তার ছেলে ইশরাক হোসেন মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-৭ (লালবাগ) আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক এমপি কারাবন্দি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। রাজশাহী কারাগারে তার মৃত্যু হয়। এ আসনে তার সহধর্মিণী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন চাইবেন। এর বাইরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-৮ (মতিঝিল) এ আসন থেকেই অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কারাগারে থাকার কারণে গত নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বর্তমান বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল নির্বাচন করেন। কিন্তু এবারে মির্জা আব্বাস এ আসন থেকে মনোনয়নের জন্য কাজ করছেন। ঢাকা-৯ (সবুজবাগ) আসন থেকে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। এ আসনে ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও শিরীন সুলতানার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি) আসন থেকে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমদ। তার অবর্তমানে আগামী নির্বাচনে ধানমন্ডির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে এলাকার জনপ্রিয় নেতা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম কাজ করছেন। বিগত ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আন্দোলনে রাজপথের পরীক্ষিত তিনি। এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীমও রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায়। কিন্তু নিজ এলাকার শ্রমিক দল নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ায় এবং মামলার কারণে তিনি এখন প্রবাসী। এ আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানরে বড় বোন বিন্দু ও সাবেক কমিশনার আবদুল লতিফও মনোনয়ন তালিকায় রয়েছেন। ঢাকা-১১ (বাড্ডা) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুম। ওয়ান-ইলেভেনের পর প্রার্থী সঙ্কটের কারণে তড়িঘড়ি করে তাকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ঢাকা-১২ (তেজগাঁও) আসন থেকে ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন আহমেদ নির্বাচন করেছিল। এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালু। তিনি বর্তমানে রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। তাই এ আসন থেকে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব অনেকটা নিশ্চিত। এ এলাকায় যুবনেতা হিসেবে বেশ জনপ্রিয় তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এ এলাকায় এ কাজও শুরু করেছেন। কর্মীবান্ধব এ নেতা দলমত নির্বিশেষে সবার মধ্যে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসন থেকে যুবদলের সাবেক সভাপতি ওদলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নির্বাচন করেছিল।তবে আলাল ওই আসনে তার ইমেজ ধরে রাখতে পারেনি। ফলে এ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম কাজ শুরু করেছেন। তিনি দলের হাইকমান্ড থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা-১৫ (মিরপুর) আসনে উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খানের মৃত্যুতে এ আসনটির প্রার্থিতা শূন্য রয়েছে। তবে এ আসনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক তুখোর ছাত্রনেতা মামুন হাসান প্রার্থী হিসেবে অনেকটা চূড়ান্ত। দলের হাইকমান্ডের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর এলাকাতে কাজও শুরু করেছেন। ওয়ান ইলেভেন পর বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার মামুন হাসান। দক্ষ সাংগঠনিক এ নেতা ইতোমধ্যে নেতাকর্মীর পাশাপাশি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। ঢাকা-১৬ (পল্লবী) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। আগামী নির্বাচনে এ প্রার্থিতাও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসান, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায়। ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনটিতে বিগত নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। স্থানীয় ইজমের কারণে এবার আর তিনি এ আসনে দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। অন্যদিকে তিনিও তার নিজ এলাকা খুলনা জেলা থেকে নির্বাচন করার চূড়ান্ত প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই দলীয় প্রার্থী হিসেবে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর কাজ শুরু করেছেন। নব্বইয়ের তেজগাঁ কলেজের ভিপি এরপরে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা এলাকায় জনমত গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও ঢাকা-১৪ (কাফরুল) আসনে এসএ খালেক, ঢাকা ১৯ আসনে ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা ২০ আসনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম আতাউর রহমান খানের ছেলে এলডিপি থেকে ফিরে আসা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খানসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন রয়েছেন। |