শিরোনাম: |
তাকওয়া অর্জনের সরল পথ সাওম
|
এম. শামসুদদোহা তালুকদার : মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে যে সব গুরুত্বপূর্ণ উপায় স্বীকৃত রয়েছে ইসলামি বিধি বিধানে যা আবশ্যিক ইবাদাত হিসেবে পরিগণিত, উহার মধ্যে সাওম হচ্ছে অন্যতম। এটি বান্দার আত্মোন্নয়নের সোপান। পবিত্র কোরআন মজিদে আত্মশুদ্ধির আরবি সমার্থক ‘তাজকিয়া’ শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিক ইবাদতের মধ্যে সাওম বা রোজার অবস্থানটি বিশেষ মর্যাদার। হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে- ‘মানুষের প্রতিটি কাজের পুরস্কার অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে। ক্ষেত্রবিশেষে তা দশ থেকে সাতশ’ গুণ। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন- রোজা হচ্ছে এর ব্যতিক্রম। কারণ এটা পরিপূর্ণভাবে আমার জন্য এবং আমি নিজে এর প্রতিদান দিব তা আমার যতগুণ ইচ্ছা ততগুণ।’ (বুখারী, মুসলিম)।
মূলত দ্বিতীয় হিজরিতে প্রবর্তিত সাওমের মূল অর্জন হচ্ছে এটা মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ ও উন্নতগুণে সমৃদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনে যা তাকওয়া হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার এরশাদ হচ্ছে- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৮৩)। তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য ও আনুকূল্য অর্জনের সবচেয়ে মৌলিক পূর্বশর্ত। তাকওয়ার ভিত্তিতেই মহান আল্লাহ বান্দাকে মূল্যায়ন করে যথাযথ পুরস্কার প্রদান করবেন। সাওম এমন একটি ইবাদত যার মাঝে তাকওয়ার আস্বাদ পাওয়া যায়। কোরআনুল কারীমে তাকওয়ার প্রসঙ্গ একাধিক স্থানে এসেছে। রাব্বুল আলামীনের স্পষ্ট ঘোষণা- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে বেশি তাকওয়াসম্পন্ন। বস্তুত আল্লাহ সর্বজ্ঞানী এবং সর্বজ্ঞ।’ (সূরা হুজরাত, আয়াত-১৩)। তাকওয়া হচ্ছে মানব হূদয়ের এক বিশেষ অবস্থার নাম। ঐ অবস্থা হাসিলের পর মানুষের হূদয় আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং পাপাচারের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। আর এ কারণেই ইসলাম রোজার জাহিরি বিধি-বিধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিশুদ্ধতার প্রতি বিশেষ তাকিদ করেছে। রোজা যাতে অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত না হয় এবং তা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশেই পালন করা হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) রোজার সঙ্গে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং উত্তম বিনিময় লাভের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি)। বস্তুত যে রোজা তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় ও হূদয়ের পবিত্রতাশূন্য, সে রোজা যেন প্রকৃত অর্থে কোনো রোজাই নয়। আল্লাহর নিকট এরূপ রোজার কোনো গুরুত্ব নেই। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি)। আসলে মাহে রমজানের সব দিবসের সমগ্র সময়টিই ইবাদতের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ। যার শুরু সূর্যোদয় থেকে, আর তা শেষ হয় পরবর্তী সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। ইহা সার্বক্ষণিক ইবাদত বটে আর এ কারণেই মহান আল্লাহতায়ালা সাওমকে তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ‘তাকওয়া বা পরহেজগারীর শক্তি অর্জন করার ব্যাপারে রোজার বিশেষ একটি ভূমিকা বিদ্যমান। কেননা রোজার ব্যাপারে প্রবৃত্তির তাড়না নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে বিশেষ শক্তি অর্জিত হয়। প্রকৃত পক্ষে সেটাই তাকওয়া বা পরহেজগারীর ভিত্তি।’ (মা’আরেফুল কোরআন)। মাহে রমজানে সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি নিঃসন্দেহে খাঁটি মুমিন বান্দা হিসেবে পরিণত হয়। কারণ রোজা মানুষের ইচ্ছা শক্তিকে বলিষ্ঠ করে। কারণ সে তার জৈবিক চাহিদাকে জলাঞ্জলি দেয় তার প্রতিপালককে ভয় করে। এটা অন্তর্নিহিত অব্যাখ্যেয় বিষয় বৈকি! অগোচরে উপবাস ভেঙে আর যৌনতায় রত হবার সুযোগ থাকলেও বান্দা এসব থেকে দূরে থাকে। এর একটাই কারণ সে ইতোমধ্যে তাকওয়ার সড়কে পথ চলতে শুরু করেছে। রোজার মাধ্যমে বান্দার এ ত্যাগকে মহান আল্লাহ অত্যন্ত সমীহর চোখে দেখেন বলে এর পুরস্কারও দিবেন তার কুদরতি দু’হাত ভরে। যা নবী করীম (সা.) এঁর মাধ্যমে তিনি হাদিসে কুদসিতে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এবং তিনি কতটা পরিতৃপ্ত হলে নিজে এর প্রতিদান প্রদান করবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। প্রকৃত মুত্তাকিতে উন্নীত বান্দা সহসাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হয়। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেছেন- ‘যখন আমরা রোজা রাখি তখন যেন আমাদের চোখ যে কোনো নিষিদ্ধ দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকে; এবং হূদয় যেন অসত্ চিন্তা থেকে বিরত থাকে।’ (সহিহ বুখারি)। অর্থাত্ রোজা পালনকারী হাদিস মতে- এসব গর্হিত কাজে লিপ্ত হলে সে কিছুই পেল না সিয়াম থেকে। আর যদি বান্দা ওসব থেকে বিরত থাকতে পারে তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, বান্দা ইতোমধ্যে তাজকিয়া তথা আত্মশুদ্ধির সন্ধান পেয়েছে। বছর ঘুরে মাহে রমজান এসেছে। বান্দা এ মাসে সিয়াম সাধনার বদৌলতে সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণ ও ভীতি জাগ্রত রাখার শিক্ষা গ্রহণ করে। এটা বান্দার অন্তরে এমন কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটায় যা তাকওয়া অর্জনে সহায়ক হয়। লেখক: ইসলামি গবেষক। |