শিরোনাম: |
ঢাকার ভৌগোলিক অবস্থান ও জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়
|
প্রফেসর গোলাম রহমান/প্রকৌশলী তোফায়েল আহম্মেদ : বাংলাদেশ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকায় সৃষ্ট পৃথিবীর বৃহত্তম ও কনিষ্ঠ বদ্বীপ। এই বদ্বীপের মধ্যে ঢাকা একটি গুজ আকৃতির অন্তদ্বীপ। এই বদ্বীপের বৈশিষ্ট্য হলো বহু বৃষ্টিপাত অঞ্চল ও পানি প্রবাহের/নিষ্কাশনের একটি করিডোর বা বিশাল পানির পাত্র। বদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণে বঙ্গোপসারে ও উত্তরে হিমালয় পর্বত এর মধ্যখানে বাংলাদেশ। চেরাপুঞ্জির মতো বাত্সরিক ১২ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ভাটির অঞ্চলে, ঢাকা তিনটি আন্তর্জাতিক বৃহত্তম নদী ব্যবস্থার তথা হিমালয়ের নদীর মোহনার সামান্য উপরে এবং পানি প্রবাহের সঙ্গে বাহিত পলি দ্বারা গঠিত এবং গঠনপ্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। প্রকৃতি বাংলাদেশকে দুই ভাগে গঠন করেছে। এর মধ্যে আদি যুগের পাহাড়ি এলাকা বা পার্বত্য এলাকা বরেন্দ্রভূমি মধুপুর জঙ্গল, এবং কুমিল্লার উচ্চ ভূমি (খ) উপসাগরের মধ্য থেকে পলি অবক্ষেপন-সঞ্চিত হয়ে প্লাবন ভূমি এই ভূ-ভাগকে সৃষ্টি এবং সমতল ভূমি বদ্বীপ গঠন। এইভাবে নিচু ভূমিকে ক্রমশ উচু করছে। এর মধ্য প্রথমটি মোট ভূ-ভাগের ২৫ ভাগ এবং দ্বিতীয়টি ৭৫ ভাগ অতএব দেশটি পানির মাধ্যমে প্রবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। ঢাকারও প্রায় ৭০ ভাগ জলাশয় নদী খাল বিলে ভরপুর ছিল। ঢাকা শহর প্রথমে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ থেকে উত্তরে মধুপুর জঙ্গল উচ্চ ভূমিতে ও পরবর্তীতে প্লাবন ভূমিতে। আর পূর্বে পশ্চিমে জলাশয় কৃষি ভূমি নদ-নদী বেষ্টনী এবং উত্তর থেকে পুরাতন ব্রহ্মপূত্র এর শাখা নদীসমূহের অববাহিকার সমুদ্র পর্যন্ত বিল জলাশয় জলাধার জলাভূমি সৃষ্টিসহ পানি নির্গমনের একটি করিডোর। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা হলো ২৩০টি নদী পুকুর দিঘি ও বাঁধের দেশে হাইড্রোলিক সমাজ ব্যবস্থা। ও সেচ সভ্যতা দ্বারা পানিকেন্দ্রিক সমাজ। অর্থাত্ বাংলাদেশের তথা ঢাকার ভৌগোলিক অঞ্চলের একটি ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট জলবায়ু আবহাওয়ার প্রকৃতি সঞ্চালিত হয়ে থাকে।
ঢাকা মহানগরের মধ্যে ৪৩টি খাল ও বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বংশী, তুরাগ, টঙ্গী খাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীসমূহের স্থলবন্দর, সমতল ভূমির নদী ব্যবস্থাপনাসহ উজানের উচ্চ ভূমি শালদহ ও লবণদহ নদী সমন্বয়ে নদী ব্যবস্থা প্রকৃতির এক অপরূপ দান। কিন্তু দীর্ঘকাল এই সমস্ত নদ-নদী খাল প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও তদরকি ও সংস্কারের অভাবে রুদ্ধ ও অবরুদ্ধ হয়ে নিষ্কাশন ক্ষমতা হ্রাস ও দখল ভরাট হয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য যথেষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ঊধঃরহম ড়ঁঃ ঋঁঃঁত্ব ঢাকার চতুর্দিকে নৌপথ প্রকল্প প্রথম পর্যায়ে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের ব্রিজগুলো দ্বারা সারা বছর অবাধে নৌ চলাচল করতে পারছে না। ইহা ছাড়াও ঢাকার অভ্যন্তরে ও বাহিরে খালগুলোকে প্রয়োজনীয় নাব্যতার অভাবে নৌপথের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছে না। পরিবহন বাণিজ্যর অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ ও ঢাকা শহর। দেশের মোট পরিবহন জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ৮ শতাংশ অবদান রাখছে। এর মধ্যে নৌ-পরিবহনের ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ঢাকা শহরের নৌপথ যানজটে ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে গৃহস্ত ও শিল্প বর্জ্য নির্বিচারে এসব নদীকে নির্গমনের ফলে নদীগুলো ভয়াবহ দূষণ সভ্যতাকে ভঙ্গুর করে তুলছে। লন্ডনে টেমস রিভারও এক সময় দূষণের শিকার হলে তারা লন্ডন শহরকে বিভিন্নভাবে ভাগ করে বর্জ্য অপসারণ, মোহনায় ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করে টেমস নদীর দূষণ রক্ষা করেছে। আমাদেরকেও ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গিচর, এলাকার ট্যানারি বর্জ্যকে বিশেষ স্যুয়ারেজ লাইন দ্বারা বর্জ্যের নালিকে আলাদা আলাদাভাবে সঞ্চালনের মাধ্যমে ভাটিতে রামপুরা খালে যেখাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অনূরূপভাবে বৃহত্তর ঢাকার বর্জ্যের নালিকে একত্র করে ভাটিতে নদীতে অথবা সাগরে স্থানান্তর করে ঢাকার নদী দূষণ রক্ষা করতে হবে। অর্থাত্ পরিষ্কার পানি দ্বারা গোসল করে পূতপবিত্র হওয়া ধর্মীয় বিধান। উঁচু পর্বত বা মালভূমি থেকে বৃষ্টি প্রস্রবন, হিমবাহ বা বরফগলা পানি মধ্যকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূমির ঢালের বরাবর প্রবাহিত হয়ে সমভূমি ও নিম্নভূমির উপর দিয়ে ঢাল অনুসারে নিচের দিকে বিশাল প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম জলাধারে বা সমুদ্রে প্রবাহিত ও পতিত হয়। তাই পানির দেশ বাংলাদেশ নদী, খাল বিল, জলাশয় দিঘি প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। আদিমকাল থেকে মানুষের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে এরই বাংলাদেশে আকৃতি প্রকৃতি নির্ণয় করেছে ও করিতেছে এরই দায়-দায়িত্ব বহন করছে। নদী ও সাগরের উর্বর পানি ও বালিতে তৈরি হওয়া দ্বীপের জন্ম থেমে নেই প্রতি মুহূর্তে গঠন চলছে। এখানেই প্রাকৃতিক অফুরন্ত সম্পদের কারণে পৃথিবীর ঘনতম মানুষের বসবাস। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১০০ জন (মঙ্গলিয়া প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২ জন, অস্ট্রেলিয়াতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩ জন, কানাডাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪ জন) পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ ঘনবসতি, জন্মের হার ১.৭ শতাংশ কিন্তু নগরে অভিবাসনের হার ২৫ শতাংশ। ২০২৫ সাল নাগাদ এই হার ৫৩ শতাংশে দাড়াবে। কিন্তু এ অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার অন্যতম। বর্ষকালে অনেক পানি এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্বল্পতার সঙ্কট তৈরি হয়ে থাকে। অনেকেই জীবিকার অন্বেষণে বিদেশে পাড়ি জমালেও দেশের অভ্যন্তরে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত এলাকা থেকে শহরে ও নগরের দিকে অভিবাসনের লক্ষণ স্পষ্ট। ঢাকা পৃথিবীর ১৩তম জনবহুল শহর। ঢাকা প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৮,০০০ জন এবং ভূমি ব্যবহারে ৮০,০০০ জন লোক বসবাস করে। অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জ্যামিতিক হারে নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ২০২৫ সালে দেশের জনসংখ্যা ৫৩ ভাগ হারে শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ২০০০ সনে ৪-৬ জুলাই বার্লিন শহরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তথ্যমতে আগামী ২০২৫ সন নাগাদ বিশ্বের ২/৩ অংশ মানুষ অর্থাত্ ৫০০ কোটির বেশি লোক নগরের অধিবাসী হবে। ফলে নাগরিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন হবে উচ্চতর দক্ষতারও আয়োজনের। এ জন্য বার্লিন ঘোষণার সুস্পষ্টভাবে বলা হয় বাসস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতি নিরাপত্তা পরিবেশ প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে টেকসই, সুষম সামঞ্জস্যপূর্ণ নগর উন্নয়নই হবে এখন মুখ্য চ্যালেঞ্জ। ঢাকা জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ৭৫ ভাগ অবদান রাখছে। মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধাবিত হচ্ছে। ঢাকা বেকার সমস্যা ও দারিদ্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঢাকার মাথাপিছু গড় আয় জাতীয় গড় আয় থেকে কয়েকগুণ বেশি। ঢাকায় কাজ আছে, কাজের সুবিধা আছে, এখানে বিনিয়োগে লাভ আছে। সহজ সরল ভাষায় বলা যায়, পানি যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার, আকৃতি, প্রকৃতি ও রূপ রঙ পরিমাণ ধারণ করে। পানির ধর্ম পানি সমতা রক্ষা করে। পানি নিম্নগামী। পানি প্রবাহ নিষ্কাশনে বাধা পেলে ফুলে ফেপে উঠবে তখনই নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা/ বন্যার সৃষ্টি হবে। ঢাকার মহানগরের ভূমির উচ্চতা বিভিন্ন স্তরে স্থাপন করায় গভীরতা ভেদে এরূপ বহু আকৃতিক ও প্রকৃতির পাত্রে পরিণত করা হয়েছে। বর্ষায় ভারি ও বৃষ্টিপাতের আধিক্যের কারণে তাত্ক্ষণিক পানি প্রবাহে ও নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা বা জলজট সৃষ্টি করে। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বা অনুপাতে নিষ্কাশন খাল ও নালা নর্দমা দ্বারা নিষ্কাশিত হতে না পারার দরুন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে। ভুপ্রকৃতির আকৃতি অনুপাতে সময়সীমার মধ্যে বৃষ্টিপাত জলাবদ্ধতা প্রকৃতি ও ব্যাপকতা নির্ভর করছে। দক্ষিণ পশ্চিমের মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত। কর্কটক্রান্তি রেখা বাংলাদেশের ঢাকার উপর দিয়ে চলে গেছে। ফলে ৭-৮ মাস ভারি বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া মনোরম ও সমভাবাপন্ন বন্যাপ্রবণ। এক কথায় ঢাকা জেলার জলবায়ুকে ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অতএব মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর বহুল বৃষ্টিপাত অঞ্চল এই চিরন্তন ও শ্বাসত সত্যটি আমাদের পূর্ব-পুরুষরা, খনার বচন এবং আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরীতে বিভিন্নভাবে আমাদের বলে গেছেন। আকাশের মেঘের সৃষ্টি হবে বৃষ্টিপাত হবে এই নৈসর্গিক নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম নেই। মৌসুমি অঞ্চলে দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বাংলাদেশকে আবহাওয়াবিদরা বায়ু প্রবাহ বায়ুর আর্দ্রতা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তাপমাত্রার তারতম্যের ভিত্তিতে বছরে চার ধরনের আবহাওয়ার সন্ধান পাচ্ছেন। ১. জ্যৈষ্ঠ-আশ্বিন/ জুন-সেপ্টেম্বর উষ্ণ আর্দ্র ও সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ২. আশ্বিন-অগ্রহায়ণ/অক্টোবর-নভেম্বর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা হ্রাস ৩. অগ্রহায়ণ-ফাল্গুন/ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি উষ্ণতা সর্বনিম্ন ও শুস্ক ৪. ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ/মার্চ-মে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধি ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার জীবনধারা থেকে সম্প্রতিকালের বিভিন্ন ঘটনাপুঞ্জি যেমন ভূতত্ত, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট জলবায়ু আবহাওয়া, বৃষ্টি, ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সনে ঢাকা ও তার উজানের অববাহিকায় মাসাধিকালব্যাপী ভারি ও অতিবর্ষণে সৃষ্ট বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষের তথ্য উপাত্ত সমৃদ্ধ জেলা গেজেটিয়ার বা ভৌগলিক অভিধান আমাদের উপহার দিয়েছেন। যা আমাদের পরিকল্পনায় স্মরণীয়, অনুকরণীয় ও অনুশীলনযোগ্য তথ্যভাণ্ডার। সেই তথ্যভাণ্ডারে জেলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত নকশা চিত্র অঙ্কন অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজ. বিবর্তন এর মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রশাসন ও প্রশাসনিক পরিবর্তনে ধারাসমূহ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। ভূমি জরিপ করে নদ-নদী, খাল-পুকুর, ডোবা ও জলাশয় সমন্বয়ে ভূমির নিখুঁত চিত্র অঙ্কন করেছেন যা সিএস নকশা হিসেবে খ্যাত। এর সঙ্গে পানি উন্নয়নে ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বা সমস্ত বাংলাদেশের ভূমির উচ্চতার নকশা অঙ্কন করেছিল। আমরা বিগত ৪৩ বছর তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য তথ্য সন্নিবেশিত লিপিবদ্ধ করেছি? অতএব জলাবদ্ধতা একটি মানবসৃষ্ট সমস্যা। যে কোনো দেশে ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্টাবলি এবং জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ওই জাতির জন্য সূর্য ও চন্দ্র এবং ডান এবং বাম চোখের ন্যায় তুল্য। জ্ঞানী ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের জন্য এ দুটি বিশেষণ অর্জন করা প্রয়োজন। প্রকৃতি কিছু ভূমি উঁচু কিছু ভূমি নিচুভাবে গঠন করেছে উঁচু ভূমি মানুষ বসবাসের জন্য আর নিচু ভূমি পানির জায়গা এবং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বসবাসের জন্য। এই পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আসে বৃষ্টিপাত থেকে। বাংলাদেশে বাত্সরিক ২৪০০ মিমি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত। ঢাকার গড় ২১০০ মিমি., চট্টগ্রামের গড় বার্ষিক ২৭০০ মিমি, কক্সবাজারে ৫০০০ মিমি., দেশের উত্তরাংশে মেঘালয় মালভূমি ও সিলেট অঞ্চলে বার্ষিক ৪০০০ মিমি. সুনামগঞ্জে ৫০০০ মিমি. এবং বাংলাদেশের লালখালে বার্ষিক সর্বাধিক ৬০০০ মিমি. বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের বাত্সরিক ২৩২০ মিমি. গড় বৃষ্টিপাতের মধ্যে মে-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এ হিসাবে বাত্সরিক ১.৮ মি. গভীরতার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং এর মধ্যে ০.৫৬ মি. পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। নিম্নচাপ ঘনীভূত হলে নদী অববাহিকা অঞ্চলে প্লাবন/ভারি বৃষ্টিপাত ঘটে। ২০০৪ সনে সেপ্টেম্বর এর ১৩ থেকে ১৭ তারিখ বিধ্বংসী বৃষ্টিপাতে ঢাকার অতিরিক্ত পানি ধারণ ও নিষ্কাশনে অক্ষমতায় ঢাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তখন ঢাকার অভ্যন্তরীণ ভূমির উচ্চতা ও বাহিরের নদ-নদীর পানির উচ্চতা/বন্যার স্তর বিশ্লেষণে আমরা সময়মতো সতর্ক বার্তা ও বিপদ সঙ্কেত দিতে সম্ভব হয়নি। ঢাকার শহর ডুবন্ত জাহাজ নৌকার মতো ডুবে থাকে। গাড়ি আবিষ্কারের পর শহরের প্রাণ হয়ে ওঠে সড়ক ও গাড়ি। ফলে বহুল বৃষ্টিপাতের দেশে মনের অগোচরে বা উদাসীনতায় নদী উপত্যকার এবং শহরের অভ্যন্তরের খাল বিল, জলাশয়, জলাধার, ভরাট করে ভঙ্গুর সভ্যতা গড়ে তুলেছে। ফলে অবহেলিত হয়েছে জলাধার ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। অধ্যাপক গোলাম রহমান: সভাপতি- বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনসটিটিউট ও সাবেক উপাচার্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। তোফায়েল আহম্মেদ: সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বিআইডব্লিউটিএ ও কো চেয়ারম্যান-আইডিইবির রিসার্সসেল। |