বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১ পৌষ ১৪৩১
ঈদের পরই ছাত্রদলের নতুন কমিটি
পদ প্রত্যাশীদের জোর লবিং চলছে
Published : Saturday, 6 May, 2017 at 6:00 AM, Count : 778

এম. উমর ফারুক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাতে তোড়জোড় শুরু করেছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো নতুন কমিটি ঘোষণা দিচ্ছে। একইসঙ্গে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে দলের হাইকমান্ড। সবকিছু ঠিক থাকলে আসন্ন ঈদুল ফিতরের পরই নতুন কমিটি ঘোষিত হবে। তবে, নতুন কমটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে সম্ভাব্যপ্রার্থীরা জোড়েসোরে লবিং তদবির চালাচ্ছে। ধরনা দিচ্ছেন সাবেক ছাত্র নেতাদের বাড়িতে, নিজেদের আমলনামার ফিরিস্তি তুলে তদবির করছেন। আবার সুবিধাবাদী ছাত্র নেতারাও সিন্ডিকেটের উপর ভর করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, একমাত্র ছাত্রদল কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে চিকিত্সাধীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এখানে অন্য কোনো নেতাদের তেমন ভূমিকা থাকে না। তবে তারা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। যা ইতোমধ্যে নেয়া শুরু করেছে।
লন্ডনের একটি সূত্র জানায়, এবারের ছাত্রদলকে তারেক রহমান ভিন্নভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলকেই মাঠে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বিগত দিনের আন্দোলনে রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের মূল্যায়ন করা হবে। সম্ভাব্যপ্রার্থীদের সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন তারেক রহমান। তাদের খোঁজখবর নেয়ার ক্ষেত্রে একাধিক মাধ্যমে তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, আসন্ন রমজানের শেষ সপ্তাহে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে ওমরা করতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওমরা শেষ করে চিকিত্সার জন্য সৌদি আরব থেকে লন্ডনে যাবেন তিনি। ওখানেই মা ছেলের আলোচনায় ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বে বিষয়ে চূড়ান্ত হবে। ঈদের পর পরে খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বিএনপির মধ্যে একমাত্র ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় ঘনিয়ে আসলেই সিনিয়র-জুনিয়র, বিবাহিত-অবিবাহিত, সংস্কারপন্থি আর আঞ্চলিকতার অজুহাত সামনে তুলে আনেন এক শ্রেণির তল্পিবাহক। তারা নিজেদের আজ্ঞাবহ কমিটি গঠনের জন্যই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের খোলস পরিবর্তন করেন। আর ওই সকল যুক্তি সামনে তুলে এনে যোগ্যদের আড়াল করে দেন। তবে এবারের কমিটিতে তারেক রহমান হস্তক্ষেপ করায় ওই তল্পিবাহকরা সুবিধা করতে পারবে না।
দুই বছর মেয়াদি ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৪ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। বিএনপির আন্দোলনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে একাট্টা হয়েছেন সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা দলের নীতিনির্ধারকসহ দলে প্রভাব বিস্তারকারী নেতাদের কাছে নতুন কমিটি গঠনের জন্য ধরনাও দিয়েছেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবি খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের কাছেও সংগঠনটির নেতাকর্মীরা যান। তারা দলের স্বার্থে নতুন কমিটি গঠনের তাগিদ দেয়াসহ এর গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের এমন ধারণার কারণে ওইসকল নেতারাও আশ্বাস দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের মতো এত নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা আগে কখনো ছিল না। যে ছাত্রটি মেধায়, দক্ষতায় কর্মী হবারও যোগ্যতা রাখেন না সেও এবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সুপার ফাইভে থাকতে লবিং চালাচ্ছেন। এতে যোগ্য নেতাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন তারা। তারা দাবি করেন, বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের আন্দোলনে সফলতার দাবিদার হলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে একজন ছাত্রনেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলেও কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারেনি সংগঠনের নেতারা। এছাড়াও ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর অরাজনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও সরব ভূমিকা পালন করতে পারেনি সংগঠনটি। সংগঠনের এ সকল ব্যর্থতার জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিসহ দলটির নেতাদের খবরদারিকে দায়ী করেছেন তারা। বিগত আন্দোলনকে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে নেতৃত্ব বাছাই করা হলে আগামী দিনে আন্দোলন সংগ্রামে আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে। কিন্তু তল্পিবাহক আর সিন্ডিকেট নির্ভর কমিটি দেয়া হলে হতাশা ছাড়া আর কিছু হবে না।
সূত্র মতে, ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে পদ পেতে যারা কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই আলোচনায় নেই। যাদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছেন তারা হলেন,সহ সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু অন্যতম। সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারও রয়েছেন। এছাড়াও যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে কাজী মোকতার হোসেন, ওমর ফারুক মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক করিম সরকার, মির্জা ইয়াসিন আলি, গোলাম মোস্তফা সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ। এদের মধ্যে সকলেই রাজপথে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে স্বাক্ষর রেখেছেন।
সূত্র জানায়, এবার ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করছে সার্চ কমিটি। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনেরাই এ কমিটিতে রয়েছেন। তারা অতীতের মতো কোনো বিশেষ অঞ্চলকে প্রাধান্য না দিয়ে স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করবেন; যাতে বিগত কমিটি গঠনের পর যে রকম বিদ্রোহ হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি না হয়। এ জন্য লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft