শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত
অবিরাম বর্ষণে হাওর ও নদী এলাকার মানুষের ব্যাপক ক্ষতি
Published : Wednesday, 26 April, 2017 at 6:00 AM, Count : 653

বর্তমান ডেস্ক : কয়েক দিনের টানা বর্ষণে আখাউড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিবালয়ে জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তালতলীতে বাঁধ ভেঙে ৮ গ্রাম প্লাবিত। জামালগঞ্জের পাকনার হাওরে তলিয়ে গেছে ২শ’ কোটি টাকার ফসল। ক্ষেতের ফসল ও ভিটে-মাটি হারিয়ে মানষ দিশেহারা। এসব এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): আখাউড়া উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিচু এলাকার প্রায় ২৫ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় বোরো ধান পানিতে হেলে পড়ে নষ্ট হতে চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা প্রকার সবজি। এদিকে অবিরাম বৃষ্টি থাকায় অনেক পাকা জমিতে কৃষকরা ধান কাটতে না পারায় তাদের মাথায় হাত পড়েছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধান ঠিতমতো ঘরে তুলতে পারবে কি না এ নিয়ে কৃষকরা শঙ্কায়। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ মৌসুমে পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু হঠাত্ অবিরাম বর্ষণের ফলে পাকা ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়ে স্থানীয় কৃষকরা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, খরমপুর, দুর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকার অপেক্ষাকৃত নিচু ধানের জমিগুলো গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকে আবার ধান পানির নিচ থেকে কাটছেন। কেউ কেউ শ্রমিক সঙ্কটে জমি থেকে ফসল কেটে আনতে পাছেন না।
আমতলী (বরগুনা): মঙ্গলবার সকালে তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাগরে লঘু চাপের প্রভাবে পায়রা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ১০টার সময় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা জায়গা দিয়ে পানি প্রবেশ করে ওই এলাকার তেঁতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া, আগাপাড়া, মরা নিদ্রা, নিদ্রারচর, গোড়াপাড়া  সম্পূর্ণ ও জয়াল ভাঙার আংশিক প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তেঁতুলবাড়িয়া স্লুইস গেটের পাশে ভাঙা বাঁধ দিয়ে নদীর পানি ঢুকে কৃষকের লাগানো মিষ্টি আলু, বাদাম, মুগডালসহ রবি ফসলের ক্ষেত প্রায় এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঠের বুকে এখন শুধু পানি বিরাজ করছে।
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের মুগডাল চাষি দরিদ্র বাবুল হাওলাদার জানান, তিনি লাভের আশায় ধারকর্য করে ১ একর ৩৩ শতাংশ জমিতে মুগডাল চাষ  করেছেন। ফলনও বেশ ভালোই হয়েছিল। ডাল পাকা শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে ডাল তোলা যেত। ঠিক এই মুহূর্তে ভেড়িবাঁধ ভেঙে পায়রা নদীর পানি ঢুকে সম্পূর্ণটাই তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের আলু চাষি দরিদ্র আনছার আলী জানান, তার স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে প্রায় ২ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন কিন্তু পানিতে সর্বনাস হয়ে গেছে। আলু উঠানোর সময় হতে না হতেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে এতে আলু আর ঘরে তোলা যাবে না। পানি উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ড বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। জমি না পাওয়ায় বাঁধ মেরামত করা নম্ভব হয়নি। বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি পাওয়া গেলে মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের ঝুকিপূর্ণ বাঁধগুলো দীর্ঘদিন থেকে কৃষকরা বাঁধ রক্ষায় দিন-রাত পরিশ্রম করেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। গত ২৪ এপ্রিল ভোরে পাগনার হাওরের দক্ষিণাংশে উড়ার বাঁধ ভেঙে যায়। গাজিয়ারগাঁও সংগল্ন পাতলিচোরা বিলের পাশে কাউয়ারবাধা বাঁধে ফাটল দিয়ে একদিকের মাটি ধসে গিয়ে পানি প্রবেশ করছে পাগনার হাওরে। বাঁধের ওপর কৃষকের আহাজারি। রফিনগর ইউনিয়নের আওতাধীন বেড়িবাঁধের অংশে ডালিয়া স্লুইস গেটের পশ্চিমের ক্লোজার ও পূর্বের দুটি ক্লোজারে পর্যাপ্ত বাঁশ-বস্তা, পলিতিন না থাকায় এই ঘটনা ঘটে। করাটিয়া বাঁধ, ডালিয়া স্লুইচ গেট থেকে পূর্বের পাতলিচোরা বিল পর্যন্ত বেড়িবাঁধের নিচু জায়গা দিয়ে উপচে পানি দ্রুত গতিতে প্রবেশ করছে। পাগনার হাওরের সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমির ১৫ হাজার কৃষক পরিবার ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসূন কুমার চক্রবর্তীর বলেন, পাকনার হাওরের ফসল রক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসন বাঁশ, বস্তা, শুকনা খাবার, শ্রমিক মজুরিসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি, কিন্তু সর্ব শেষ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা হেরে যাই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft