শিরোনাম: |
বিএনপিতে পদ পাচ্ছেন সংস্কারপন্থিরা
|
এম. উমর ফারুক : দল গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে বিএনপি। আর নির্বাচনী কৌশল হিসেবে সংস্কারপন্থি নেতাদের বিএনপির বিভিন্ন পদে নেয়া হচ্ছে। কারণ ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিএনপির সংস্কারপন্থিদের মধ্যে সাবেক এমপি ছিলেন শতাধিক। ওই এমপিরা না থাকায় বিএনপির তৃলমূলের রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতা কাটাতে সংস্কারপন্থিদের দলে পদ দেয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন দলের বাইরে রেখে রাজনৈতিক ভুলের শিক্ষা দিয়ে পদে ফেরাতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনেকটা নরম হয়েছেন। ইতোমধ্যে দুই ধাপে সংস্কারপন্থি তিন নেতাকে একান্তে ডেকে কথা বলেছেন তিনি। তাদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছেন। শিগগিরই সংস্কারপন্থি আরও দুই নেতাকে বিএনপি চেয়ারপারসন ডাকবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, সংস্কারপন্থিরা তো বিএনপির লোক। চলার পথে ভুল হয়। আর সেই ভুল একদিন ক্ষমাও হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাদের আর ফিরিয়ে আনছেন। এতে দল আরও শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করেছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদেরকেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলে নিয়েছেন। এমনকি পরবর্তীতে তাদের এমপি-মন্ত্রীও বানিয়েছেন। রাজনীতিতে এমন উদাহরণ অনেক আছে। সূত্র মতে, ওয়ান-ইলেভেনের বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশকিছু নেতা তত্কালীন সরকারের ফাঁদে পা দেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের সংস্কারপন্থি নেতাদের ডেকে দলে ভেড়ান। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন তার দলের বেশিরভাগ সংস্কারপন্থি নেতাকে দলে ভেড়াননি। তবে এই দীর্ঘ ১০ বছরে এসব সংস্কারপন্থি নেতা দলের প্রতি আনুগত্যের পরিচয় দিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেননি তারা। এমনকি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার লোভনীয় অফারও তারা ফিরিয়ে দেন। সূত্রটি আরও জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সাবেক সংসদ সদস্য যারা দলের বাইরে রয়েছেন তাদের মূল দলে একীভূত করবেন তিনি। সংস্কারপন্থির লেভেলের কারণে এখনও ৬৭ জন সাবেক এমপি দলের বাইরে রয়েছে। তাদের যদি আগামী নির্বাচনের আগে দলে ভেড়ানো না হয়, তাহলে তারা রাজনৈতিক জীবনের অস্তিত্বের জন্য বিকল্প চিন্তা করবে। এই ৬৭ সাবেক এমপি যদি বিএনপির প্রার্থীদের বিপরীতে নির্বাচনে দাঁড়ায় তাহলে ওই আসনগুলো হারানোর সম্ভাবনা বেশি। তাই গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে দলের নরসিংদীর সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও বরিশালের সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে একান্তে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাদের অতীতের ভুলত্রুটি ভুলে এলাকায় গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশ পেয়ে দুই নেতাই এলাকায় জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন। এরপর গত কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জের সাবেক এমপি নাজির হোসেনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাকেও এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। তাদের দলের ভেড়ানোর খবরে স্থানীয় নেতারা মিষ্টি বিতরণ করেন। সূত্র জানিয়েছে, পরবর্তী ধাপে ডাকা হবে সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লাকে। ওই দুই নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে নীতি-নির্ধারণী ফোরাম থেকে। এর বাইরে আরও যারা ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন- তাদের মধ্যে বগুড়ার সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, নোয়াখালীর ফজলে আজিম, মুন্সীগঞ্জের শাম্মী শের, একেএম আনোয়ারুল হক, শাহরিয়ার আক্তার বুলু, ময়মনসিংহের সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, জয়পুরহাটের আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) আনোয়ারুল কবীর তালুকদার, নেত্রকোনার আবদুল করিম আব্বাসী, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এসএ সুলতান টিটু, মৌলভীবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, গাইবান্ধার শামীম লিঙ্কন, মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, আশরাফ হোসেন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, নুরুল ইসলাম মনি, ইলেন ভুট্টো, আলমগীর কবীর, আবু হেনা, মেহেরপুরের আবদুল গণি প্রমুখ। |