বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মতলবে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে বিএনপি
Published : Thursday, 20 April, 2017 at 6:00 AM, Count : 843

এম. উমর ফারুক : ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মতলব বিএনপি। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালালের প্রভাবে কোনঠাসা মতলব বিএনপির নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কমিটি ভেঙে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি করেছে ড. জালাল। আর এ কমিটি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে বলে প্রচার করেন তিনি। ফলে স্থানীয়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ কমিটির বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ। কেননা তারেক রহমানের দেয়া কমিটির নিয়ে কথা বলে নিজের পদপদবী হারাতে চান না কেউই। তবে তারেক রহমান এ কমিটিগুলো দিয়েছেন নাকি তার নামে অপপ্রচার চালালো হচ্ছে- তা খতিয়ে দেখছে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতলবে দুটি নির্বাচনী আসন। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা থাকায় সবসময় রাজনীতির বিভিন্ন মেরুকরণ হয়। এই আসনের অধীনে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা। মতলব দক্ষিণ পৌরসভা ও ছেংগারচর পৌরসভাসহ ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রয়াত নুরুল হুদা নির্বাচন করেছিলেন। এরপরই এই আসনের আধিপত্য নেয়ার জন্যই মাঠে নামেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল। কিন্তু স্থানীয় বিএনপি ও জনগণ তার পক্ষে সাড়া দেয়নি। তবুও এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করতে কমিটির ওপর হস্তক্ষেপ করেন তিনি। রাজধানী ঢাকায় তার বাড়ি। তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। দেশের বাইরেও তার ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসার কাজে তিনি ঘনঘন লন্ডন যান। আর দেশে এসে প্রচার করেন তিনি লন্ডনে চিকিত্সাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থাভাজন। তবে তারেক রহমানের কতটা আস্থাভাজন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমানের প্রভাব খাটিয়ে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কয়েকদিন আগে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা মতলব দক্ষিণ পৌরসভা ও ছেংগারচর পৌরসভা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেন। মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল হক সরকার, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সরকারকে বাদ দিয়ে ড. জালালের কাছের লোক বিএনপিতে সদ্য আগত আহসানুল হক ফটিককে সভাপতি করা হয়। যিনি জাপার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আর সাবেক ছাত্রনেতা হত্যা মামলায় আট বছর কারাভোগকারী নুরুল হক জিতুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। মতলব দক্ষিণ উপজেলার সাবেক সভাপতি বিল্লাল মৃধা ও সাধারণ সম্পাদক মিজান সরকার বাদ দিয়ে ড. জালালের আস্থাভাজন এমদাদ হোসেনকে সভাপতি ও এমরান হোসেন মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ছেংগার চর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি খোরশেদ মোল্লাকে বাদ দিয়ে নান্নু প্রধানকে সভাপতি করা হয়। আর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদিন খোকন যিনি গত পৌর মেয়র নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে ড. জালালের কাছের লোক ফজলুল রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একই কায়দায় মতলব দক্ষিণ পৌরসভা সাবেক সভাপতি বিল্লাল সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হককে সরিয়ে তার বলয়ের মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক, শাহ গিয়াসকে সদস্য সচিব করা।
সূত্রটি আরও জানায়, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল হক সরকার দুইবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। তার স্ত্রী আমেনা বেগম দুবার পৌর মেয়র ছিলেন। এ জনপ্রিয়তার পরও বিএনপির বর্তমান কমিটিতে তাদের জায়গা হয়নি। কমিটির কোথায় রাখা হয়নি সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সরকার ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল ইসলামকে। ছেংগারচর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর প্রধান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান সরদারকেও বর্তমান কমিটিতে রাখা হয়নি। সাংগঠনিক ধারার বাইরে এ কমিটিকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না স্থানীয় বিএনপি। বর্তমান কমিটির সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে কমিটির কর্মকাণ্ড। আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে থেকে পরীক্ষিত যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা পদ-পদবী না পাওয়ায় দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন না। ফলে মতলব হয়ে পড়েছে বিএনপি শূন্য।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালালের মোবাইলফোন কয়েক দফা চেষ্টা করলে তা বন্ধ দেখায়। পরে কথা হয় মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির আহসানুল হক ফটিকের সঙ্গে। তিনি জানান, ড. জালাল ব্যবসার কাজে লন্ডনে আছেন। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তা তিনি জানেন না।
ফটিক বলেন, কী কারণে পূর্বের কমিটি ভেঙে দিয়ে কোনো কাউন্সিল ছাড়াই নতুন কমিটি করা হয়েছে- তা আমি জানিনা। তবে জেলা কমিটি আমাদের নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। আমরা অনুমোদন পাওয়ার পর কাজ শুরু করেছি। গত এক বছরে আমি দলের জন্য অনেক কাজ করেছি। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পালন করেছি।
জানা গেছে, বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে পর নতুন কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী। মতলবের প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান আতাউর রহমান ঢালী। সাড়া জাগানো ছাত্রনেতাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় মতলব বিএনপির মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। নতুন কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের প্রস্তাবও দেন। অশুভ শক্তির হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করতে আতাউর রহমান ঢালীকে ভূমিকা রাখতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আমি মতলবের সন্তান। তাই মতলববাসীর জন্য সব সময় কাজ করেছি, আগামীতেও কাজ করবো। স্থানীয় বিএনপির সাংগঠনিক যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য দলীয় ফোরামকে জানাবো। দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদ্য প্রয়াত নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা তার বাবার ৪০ বছরের রাজনৈতিক মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নুরুল হুদার রাজনীতি জীবনের জনপ্রিয়তাকে তানভীর কাজে লাগাতে চান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft