বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঢাকা মহানগর নতুন কমিটি
অবমূল্যায়নে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতারা
Published : Wednesday, 19 April, 2017 at 6:00 AM, Count : 924

এম. উমর ফারুক : সাদেক হোসেন খোকা আর মির্জা আব্বাসের ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতৃত্বের পর প্রথমবারের মতো দুই ভাগ হলো মহানগর বিএনপির কমিটি। ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এ কাইয়ুম ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আহসান উল্লাহ হাসান। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। নতুন এ কমিটি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতাসহ ঢাকা মহানগরের নেতারা নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন। দীর্ঘ প্রতিক্ষা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের লবিং তদবিরের পর এ কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ আর অসন্তোষ নিয়ে দিনভর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। এর মধ্যে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় যাত্রাবাড়ী এলাকার সাবেক কমিশনার ও সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-সভাপতি নবীউল্লাহ নবী পদত্যাগ করছেন বলে ইতোমধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আবার ঢাকা মহানগর বিএনপির সর্বাধিক পরিচিত মুখ আর অভিজ্ঞ নেতা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকে কোথাও রাখা হয়নি। তেজগাঁও এলাকা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে নতুন কমিটিতে পদ না দেয়ায়  ক্ষুব্ধ তার অনুসারীরা। অন্যদিকে দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলয় থেকে এই কমিটি অনেকটা রাহুমুক্ত হয়েছে বলেও এক ধরনের তৃপ্তির ঢেঁকুর নিতে দেখা গেছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে।   
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মির্জা আব্বাস বলয়ের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা দলের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির দুই অংশেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার অনুুগত বলয়ের চিহ্নিত কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। তবে কমিটির অন্যান্য পদে তার প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যার কারণে অনেক ত্যাগী আর মাঠের নেতাকে বলি দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ধলপুর ইউনিয়নের বাদল সরদার অন্যতম। আবার মির্জা আব্বাস বলয়কে ঘোষিত কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিতে গিয়ে ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা নবীউল্লাহ নবীকে অনেক নিচে নামানো হয়েছে। এসব কারণে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে দলের অভ্যন্তরে।
নবীউল্লাহ নবীর অনুসারী নেতাকর্মীরা জানান, সব আন্দোলন-সংগ্রামে নবীকে মাঠে রেখে পদ-পদবীর বেলায় অন্যদের গুরুত্ব দেয়ার সংস্কৃতি থেকে বিএনপি এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি। যার কারণে তাকে নিচে রেখে তার অনেক জুনিয়রকে উপরে রাখা হয়েছে।
এসব বিষয়ে নবীউল্লাহ নবী জানান, আমি শারীরিক ও পারিবারিক কারণে অনেকটা ঝামেলায় আছি। তাই মহানগর রাজনীতি অসম্ভব হয়ে উঠছে। যার কারণে আমাকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সংবাদ মাধ্যমে ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই অংশের আংশিক কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মহানগর বিএনপির নেতারা জানান, কেন্দ্র থেকে ঘোষিত ওই দুই কমিটিতে অনেক অপরিচিত নেতৃবৃন্দকে রাখা হয়েছে। যাদের বিগত আন্দোলনগুলোতে কখনো দেখা যায়নি। কিংবা নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তাদের কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। শুধুমাত্র তদবীর আর সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। আবার যে সব নেতারা বিগত আন্দোলনে নিজে মাঠে থেকেছেন, নেতাকর্মীদের পার্শে দাঁড়িয়েছেন তাদের অনেককে পদায়ন করা হলেও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, বংশাল এলাকার মো. মোহন বিগত আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় থাকলেও তাকে করা হয়েছে ১৭ নাম্বার সহ-সভাপতি আর মাঠের রাজনীতিতে কোনো অংশগ্রহণ না থাকলেও মির্জা আব্বাসের অনুসারী হিসেবে মুগদা এলাকার শামছুল হুদাকে এক নাম্বার সহ-সভাপতি এবং ইউনুস মৃধাকে দুই নাম্বার সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এ রকমভাবে সবুজবাগের মোস্তাফিজুর রহমান হিরু, গোলাম হোসেন, বংশালের ইশরাত মির্জাকে ৮, ১০ ও ১৪ নাম্বার সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এর মধ্যে ইশরাত মির্জা রাজনীতিতে না থাকলেও মির্জা আব্বাসের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বলে এই পদে এসেছেন বলে জানিয়েছেন।
নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতো উত্তরেও কম যোগ্যতা আর নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন নেতাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এরে মধ্যে এমএ কাইয়ুম দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মামলা জটিলতার কারণে মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন। ইটালিয়ান নাগরিক তাবেল্লা সিজারিয়ান হত্যা মামলার তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। তাই খুব শিগগিরই তিনি দেশে আসতে পারছেন না বলেই বিশ্বাস নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী থাকলেও সমপ্রতি তিনি দেশে অবস্থান করছেন। তার ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি পরিবারের সবাই এখন মালয়েশিয়ায়। তাই তাদের হাতে মহানগরের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড কি করতে চাচ্ছেন তা পরিষ্কার নয় মহানগর নেতাদের।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণের সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, ক্ষোভ, দুঃখ থাকবে না। বরং ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ে সবাইকে নিয়েই আগামীর আন্দোলন করা হবে। তাছাড়া যারা পদ পায় নাই তাদের এখনও সুযোগ আছে। সে ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।
নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের আন্দোলনে সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মহানগর বিএনপি (উত্তর) সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত এম কাইয়ূম দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে রয়েছেন সে ক্ষেত্রে তাকে দিয়ে দায়িত্ব পালন কতটা সম্ভব হবে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, মিথ্যা মামলায় যাদের দূরে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে (এম কাইয়ূম) যাদের এ কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা যে ভূমিকা রাখতে পারবেন না তা নয়, বরং তারাও একটি বড় ভূমিকা রাখবেন বলে বিশ্বাস করি। অতীত ইতিহাস বলে শুধু যে কাছে থাকলেই ভূমিকা রাখা যাবে তা নয়।
২০১৪ সালের ১৮ জুলাই সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। একই সঙ্গে ছয় সিনিয়র নেতাকে দিয়ে করা হয় একটি উপদেষ্টা কমিটিও। ওই সময়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস ছিল এবার ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন চাঙ্গা হবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আন্দোলনের ঢেউ উঠলেও ঢাকা ছিল নিরুত্তাপ। আন্দোলন শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস। অন্যদিকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির নির্দেশনা থাকলেও বিগত তিন বছরে তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft