শিরোনাম: |
মংলা বন্দরে পড়ে আছে ৪ হাজার ৭২৮টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি
|
বর্তমান প্রতিবেদক : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলা। ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বন্দরটি। এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির তালিকায় কোটি টাকা মূল্যের রিকন্ডিশন্ড গাড়িও রয়েছে। বর্তমানে মংলায় ৪ হাজার ৭২৮টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি খালাসের অপেক্ষায় আছে। গাড়িগুলো থেকে সম্ভাব্য রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৪৪৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কাস্টমস শুল্ক আইন অনুযায়ী, আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ৪৫ দিনের মধ্যে ছাড়িয়ে নেয়া না হলে- সেগুলো নিলামে তোলা হয়। কিন্তু মংলা বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত গাড়ির সিংহভাগই এখনও জেটির ইয়ার্ডে পড়ে আছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০০৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ বন্দরে খালাস না হওয়া গাড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ৭২৮টি। এর মধ্যে আমদানি নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত গাড়ি রয়েছে ৪৫৫টি; সেগুলোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসআরও নম্বর- ৩৫৭-আইন/২০১৬ অনুযায়ী শুল্কায়ন কার্যক্রম চলমান। বন্দরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা কিন্তু খালাস না হওয়া রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মধ্যে শুল্কায়নযোগ্য গাড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ২১২টি। সেগুলোর কায়িক পরীক্ষণ, শুল্কায়ন ও খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। আমদানির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালাস করা না হলে প্রতি মাসেই নিলামযোগ্য গাড়ি নিলামের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মংলা বন্দরের ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, বন্দর থেকে খালাস না নেয়া গাড়িগুলো খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্দরের নিয়ম মেনে সবগুলো গাড়ির খালাস বা নিলাম হবে। আমদানি নিয়ন্ত্রিত গাড়ির যে সমস্যা ছিল- তাও সমাধান করা হচ্ছে। তিনি জানান, এখন ৪ হাজার ২০০টি গাড়ি খালাসের অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে আমদানিকৃত গাড়িও রয়েছে। ২০১০-১২ সালে আমদানিকৃত ৬১টি গাড়ি খালাস করা হয়নি; সেগুলো নিলামে বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে আমদানি করা গাড়ির সংখ্যা বেশি। তবে সেগুলো শিগগির খালাস হবে। সরেজমিন দেখা গেছে, বন্দরের ইয়ার্ড ও জেটি এলাকায় সারিবদ্ধভাবে গাড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গোডাউন পরিপূর্ণ হওয়ায় ইয়ার্ড ও জেটির ছাউনির বাহিরে রাখা হয়েছে গাড়ি। কোনো কোনো গাড়িতে ময়লার স্তূপও পড়েছে। লম্বা সময় ধরে পড়ে থাকায় অকার্যকর হয়ে গেছে অনেক গাড়ি। মংলা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসেন খান বলেন, খালাস প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং আমদানিকারকদের অনিচ্ছার কারণেই গাড়িগুলো এভাবে পড়ে আছে। অনেক বছর পড়ে থাকার কারণে অনেক গাড়ি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, মংলা বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির সঙ্গে জড়িত ২০০ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স হক-এর আমদানিকৃত গাড়ির পরিমাণ অনেক বেশি। এ বিষয়ে মেসার্স হক বে’র মালিক ও বারভিটার সাবেক সভাপতি আবদুল হক বলেন, গাড়ি খালাসে আগে কিছু জটিলতা থাকলেও এখন কোনো জটিলতা নেই। নিয়মিত গাড়ি খালাস হচ্ছে। তবে জরিমানার কারণে অনেকে বন্দর থেকে ঠিক সময় খালাস করেন না। আর এই জরিমানা পরিশোধ এবং বন্দরের ভাড়া পরিশোধ করে গাড়িগুলো বাজারজাত করা হলেও হয়তো ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে না। সম্প্রতি মংলায় এক সভায় খালাস না হওয়া গাড়ি দ্রুত খালাসের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর একেএম ফারুক হাসান। তিনি বলেন, মংলা বন্দরে আটকে থাকা গাড়ি ও কন্টেইনার দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) অর্থবছরে মংলা বন্দর থেকে খালাসকৃত গাড়ির সংখ্যা ৯ হাজার ৭৩৪টি। ২০১৬-১৭ (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) অর্থবছরে ১০ হাজার ৪০৫টি খালাস হয়েছে; অর্থাত্ আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৬৭১টি গাড়ি বেশি খালাস হয়েছে। |