শিরোনাম: |
আইপিইউ সম্মেলন
বিশ্ব পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল বাংলাদেশ
|
স্বপন কুমার সাহা :
বিশ্বের পার্লামেন্টারিয়ানরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি এবং অর্জনগুলো স্বচক্ষে দেখে গেছেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনবদ্য অবদান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশেরে নিরবচ্ছিন্ন অগ্রযাত্রার কথাও জেনে গেছেন। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংসদীয় ফোরাম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) পাঁচ দিনব্যাপী ১৩৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশে। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য কমানোর অঙ্গীকার নিয়ে সম্মেলনটি শেষ হয় গত ৫ এপ্রিল। এই সম্মেলন ঘিরে ছিল আইপিইউর এমপিদের মিলনমেলা। যেন জেনেভা থেকে শান্তির অন্বেষণে পৃথিবীর সব পথ এসে মিশেছিল ঢাকায়। ১৩২টি দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্যসহ ১ হাজার ৩৪৮ প্রতিনিধিসহ বিদেশি অতিথিদের পদচারণে মুখরিত হয়েছিল বাংলাদেশ। সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার সামাজিক মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন- এই স্লোগানকে সামনে রেখে গত ১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের দক্ষিণপ্লাজায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এই আন্তর্জাতিক বৃহত্তর এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মূল অধিবেশন চলে। মূল প্রতিপাদ্যের ওপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নোবেলবিজয়ী শিশু অধিকার ও চিন্তাবিদ কৈলাস সত্যার্থী। এ সম্মেলনে বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হলো স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত হওয়া। আইপিইউ সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবেই। আমাদের সংসদ সদস্যরা সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৩২টি দেশের আইন প্রণেতাদের সামনে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আইপিইউ সদস্য দেশগুলো পাশে থাকলে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় নিঃসন্দেহে সহজ হবে। বৈশ্বিক অগ্রযাত্রা ও মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ চাইলে আন্তর্জাতিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ নিরসনে একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। তাহলে বিশ্বের কোথাও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হতে পারে না, অস্তিত্বও থাকবে না। সব ধর্মের মূলমন্ত্রই হলো মানবতা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করে স্ব-স্ব ধর্মের বাণী মানুষের হূদয়ে প্রতিফল ঘটিয়ে বিশ্বমানবতার সুখ, শান্তি ও উন্নয়ন ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘ঢাকা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণায় নীতিগত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনি কাঠামো ও সংসদকে আরও শক্তিশালীকরণ, তরুণদের কর্মসংস্থান করাসহ পাঁচ দফা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ, জঙ্গিবাদ নির্মূলে অর্থায়ন বন্ধ, এমপিদের মানবাধিকার রক্ষা, নারীদের ক্ষমতায়নে অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য সম্মেলন থেকে রেজুলেশন নেয়া হয়েছে। আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বক্ত রাখেন। পরবর্তী সম্মেলন আগামী অক্টোবরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে ১৩৭তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এ কথাটি না বললেই নয়, গত বছর সেপ্টেম্বরে ঢাকায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগের কারণে তা বাতিল করা হয়। তাই এবারের আইপিইউ সম্মেলন আয়োজন ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা এবং দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ বিরাজমান। তবে নানা শঙ্কা ও নিরাপত্তার অজুহাতকে উড়িয়ে দিয়ে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এতবড় একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যে সফলতা আমাদের গর্ব। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতার বিষয়টিও বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হলো। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব পরিমণ্ডলে আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। বিদেশি অতিথিদের অনেকে বাংলাদেশে আসতেও চাননি। লক্ষণীয় বিষয়টি হলো- বর্ণাঢ্য সব আয়োজনের জন্য সম্মেলনের শেষ দিনে বিশ্ব বরেণ্য অতিথিরা বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। মুক্তকণ্ঠে প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। আইপিইউর মহাসচিব মার্টিন চুনগং সফলভাবে সম্মেলন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্মেলনে আসার আগে আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেছিল কেন সেখানে যাচ্ছি। আমি বলেছিলাম আমরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে বসে থাকতে পারি না। আমরা সংসদ সদস্যরা সব সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে চাই। তাছাড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তা আমাদের এ সম্মেলন সফল করতে সহায়তা করেছে। ‘ঢাকা আমার জন্য ভাগ্যবান শহর’ এমন প্রশংসাসূচক মন্তব্যও শোনা গেলে তার কণ্ঠে। সার্বিক নিরাপত্তাসহ আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন ইউরোপ-আমেরিকা থেকে শুরু করে দারিদ্র্যপীড়িত আফ্রিকান দেশের প্রতিনিধিরাও। সুইডেনের সংসদ সদস্য তেরেস লিন্ডবার্গ তার প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক সুন্দর দেশ। এখানে এসে অনেক ঘুরব, কেনাকাটা করব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের চলাফেরায় অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই ঘোরাঘুরি করা হচ্ছে না। তবে মেলার আয়োজন করে খুব ভালো করেছে। কেনাকাটা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেক ভালো।’ এ সময় বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসাও করেন তেরেস লিন্ডবার্গ। তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ অনেক ফ্রেন্ডলি (বন্ধুত্বপূর্ণ) ও অতিথিপরায়ণ।’ এছাড়া বিশ্বের পার্লামেন্টারিয়ানরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি এবং অর্জনগুলো স্বচক্ষে দেখে গেছেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনবদ্য অবদান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশেরে নিরবচ্ছিন্ন অগ্রযাত্রার কথাও জেনে গেছেন। এ সম্মেলনে বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হলো স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত হওয়া। আইপিইউ সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবেই। আমাদের সংসদ সদস্যরা সম্মেলনে অংশ নেয়া ১৩২টি দেশের আইন প্রণেতাদের সামনে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেছেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আইপিইউ সদস্য দেশগুলো পাশে থাকলে গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় নিঃসন্দেহে সহজ হবে। আইপিইউ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য, আলোচনা, সম্মেলনে গৃহীত ‘ঢাকা ঘোষণা’ এবং প্রস্তাবগুলো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির প্রয়োজনের নিরিখে সময়োপযোগী এবং তাত্পর্যপূর্ণ। ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৈষম্য কমাতে মানবাধিকার সুরক্ষায় আইনি কাঠামো শক্তিশালী এবং বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সকলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্থান হিসেবে আইনসভাকে শক্তিশালী করতে হবে। সকল জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব আহরণের আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়ার কথা বলা হয়েছে ঘোষণায়। এছাড়া শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, আইপিইউ বিশ্বব্যাপী সম্পদ বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। আইপিইউ বলেছে, বিশ্বের বর্ধনশীল তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, সম্পদহীনতা, এবং স্বল্প মজুরিসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। বৈষম্য কমাতে আইপিইউ এসব বিষয়ের সমাধানে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর উদ্যোগ আশা করছে। এছাড়া নারী শ্রমিকের মজুরি বৈষম্যের বিষয়টিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেবা, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে অল্প কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বাজারে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ কমে আসায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংসদীয় ফোরামটি উদ্বেগ জানিয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়- এসডিজির ১০ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, দেশে দেশে বৈষম্য কমাতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমাদের অঙ্গীকার- সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য নিরসন করব। লিঙ্গ বৈষম্য যেটি একটি বহুমুখী সমস্যা। তার মূলোত্পাটন করতে চাই। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি যে, পৃথিবীর সম্পদের এক থেকে দশ শতাংশ প্রথম সারির জনগণের হাতে আছে। যার কারণে বেকার জনগোষ্ঠী আছে, অনেকেই চাহিদা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। অনেকেই কাজের অনুপাতে স্বল্প বেতন পাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের সুযোগ কমে আসে। তারা প্রায়ই পরিবেশ দূষণ, বৈশ্বিক জলবায়ু দূষণের শিকার হয়। তারা সহিংসতা এবং বৈষম্যের শিকার হয়। ঘোষণায় বলা হয়, মহিলারা সাধারণত পুরুষের তুলনায় একই কাজ করার পরও কম বেতন পায় এবং তাদের কাজের জন্য অনেক বাধা পেরুতে হয়। কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। গৃহকার্য করার জন্য কোনো বেতন পায় না। আর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে বিশেষ করে মহিলা, তরুণ, আদিবাসী, অভিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যায়। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকা ঘোষণায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। ঢাকা ঘোষণায় এসব লক্ষ্য পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বৈশ্বিক অগ্রযাত্রা ও মানবজাতির সার্বিক কল্যাণ চাইলে আন্তর্জাতিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ নিরসনে একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। তাহলে বিশ্বের কোথাও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হতে পারে না, অস্তিত্বও থাকবে না। আজ বিশ্বে ইসলাম ধর্মের নামে একধরনের জঙ্গিপনার উত্থান দেখা দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না। ইসলাম ধর্ম হলো শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রতৃত্বের ধর্ম। সৌদি আরবের মসজিদুল হারাম ও মসজিদ-ই-নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. মুহাম্মদ বিন নাসির আল খুজাইম এবং মদিনার মসজিদ-ই-নববীর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম গত বৃহস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত উলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলনে পবিত্র ইসলামের বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। দুই ইমামই বলেছেন, ইসলাম ধর্ম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে মুক্ত। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে লিপ্ত তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম বিশ্বের সব মানুষের মানবতার ধর্ম। যারা মানুষ হত্যা করে তাদের জন্য জাহান্নাম রয়েছে। যারা দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, দেশে অশান্তি নিয়ে আসতে চায়, যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত তারা জাহান্নামে যাবে। মনে রাখবেন, ইসলামে কয়েকটি হারাম কাজের মধ্যে রয়েছে মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো, সন্ত্রাস-জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালানো। যারা এগুলো করে তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। পবিত্র মক্কা-মদিনার ওই দুই ইমামের দেয়া দিক-নির্দেশনার কথা তুলে ধরে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, এখানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। আমরাও মনে করি একযোগে কাজ করলে জঙ্গিবাদ বিস্তার ঘটতে পারবে না। প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্মেই জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্মেই শান্তির কথা বলে। মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সব ধর্মেই বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। সব ধর্মের মূলমন্ত্রই হলো মানবতা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করে স্ব-স্ব ধর্মের বাণী মানুষের হূদয়ে প্রতিফল ঘটিয়ে বিশ্বমানবতার সুখ, শান্তি ও উন্নয়ন ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাদের বুঝতে হবে কোনো ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস করা হলে তা নিছক ভিন্ন মতলব। তাই আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নির্মূলে সবাইকে এক হতে হবে। কেননা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস বিশ্ব শান্তি কেড়ে নেয়া ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না, মানুষের জীবন বিপন্ন করা ছাড়া সুখ-শান্তি-সৌহার্দ্য-ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ যেমন বিশ্বে অশান্তি বাড়ায় তেমনি উন্নয়নেরও অন্তরায়। তাই শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্ববাসীকে এক হয়ে এক আওয়াজ তুলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আইপিইউ সম্মেলনের মূলপ্রতিপাদ্য মনেপ্রাণে ধারণ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিকে প্রতিহত করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক বর্তমান |