শিরোনাম: |
জাসাসে নতুন মেরুকরণ উজ্জ্বল-মামুনের দ্বন্দ্ব চরমে
• পদায়ন না করলে ধারাবাহিক
আন্দোলন করবে পদবঞ্চিতরা
|
এম. উমর ফারুক : ছন্দহীন হয়ে পড়েছে জাসাস। বিএনপির শক্তিশালী অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাসের) নতুন কমিটি হওয়ার পর পদবঞ্চিদের ধারাবাহিক আন্দোলনে মুখ থুবড়ে পড়েছে দলটির কর্মকাণ্ড। নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক চিত্রনায়ক আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহম্মেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। আর এসব জেনে জাসাস নতুন নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ লন্ডনে চিকিত্সাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সূত্র জানায়, দ্বন্দ্ব-কোন্দল এতটাই প্রকোট আকার ধারণ করেছে যে জাসাসের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনেও কোনো ধরনের কূলকিনারা পাচ্ছেন না পদবঞ্চিত কর্মীরা। প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এর ফলে ৩০ জনের গঠিত প্রাথমিক কমিটির লোক দিয়েই অনেকটাই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জাসাস। গত ২৬ মার্চ বিএনপির বিজয় র্যালিতেই তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি বর্তমান মামুন-হেলাল খানের কমিটি। এতে বেশ চটেছিলেন পদবঞ্চিতরা। একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, দলের দূর্দিনে আমরা মাঠের কর্মী হয়েও কোনো কর্মসূচি নিতে পারিনি দ্বন্দ্বে কারণে। এভাবে চলতে থাকলে জাসাস নয় বিএনপিও হারিয়ে যাবে একদিন। কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন ও দলে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে আন্দোলন করে কোনো ধরনের সফলতা আশা করা যাবে না। সূত্রটি আরও জানায়, ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণেও সম্মিলিতভাবে তেমন কর্মসূচি হাতে নিতে পারছে না দলের সাংস্কৃতিক এই অঙ্গসংগঠনটি। ৩০ জনের প্রাথমিক কমিটির প্রায় অর্ধেকের বেশি নেতারা নিষ্ক্রিয়। জাহাঙ্গির-সিকদারের নেতৃত্বাধীন মহানগর গ্রুপও প্রায় নিশ্চুপ। তাদের অনেকের মতো বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব না এলে আমরা কোনো ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেব না। সূত্রটি আরও জানায়, তারেক রহমানও বর্তমান কমিটির ব্যর্থ কর্মকাণ্ডে চরমভাবে ক্ষেপে আছেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, বর্তমান কমিটির সভাপতি ড. মামুন আহম্মেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও শিক্ষক রাজনীতির বাহিরে জাসাসকে সময় দিচ্ছেন না। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খানও সাংগঠনিকভাবে অনভিজ্ঞ হওয়ায় মূলত ৩০ জনের কমিটি ব্যর্থ ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের জাসাস কর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। সাবেক কমিটির সিনিয়র নেতারাও তাদের প্রিয় সংগঠন জাসাস মুখ থুবরে পড়ায় প্রত্যেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করছেন। জাসাসের এই নতুন মেরুকরণে চিত্রনায়ক উজ্জ্বলের পক্ষে উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং ডক্টর মামুনের পক্ষে সাবেক সভাপতি এমএ মালেকসহ অন্যান্য নেতার বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়। অন্য একটি সূত্র জানায় চিত্রনায়ক উজ্জ্বল জাসাসকে তার অধিনস্থ সংগঠন দাবি করায় জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে সূত্রপাত হয়। এই পরিস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটিকে তার হারানো গৌরব এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাবেক সিনিয়র নেতা বিশিষ্ট ছড়াকার আবু সালেহ এবং ইমতিয়াজ হোসেন চপলের নেতৃত্বে সাবেক নেতারা সহসাই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। এদিকে, জাসাসের অপর এক নেতা নাহিন আহমেদ মমতাজি সংগঠনের বর্তমান উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেন। জাসাসের নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর আন্দোলনে নামের পদবঞ্চিত নেতারা। জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জাহাঙ্গীর-সিকদারের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন চলতে থাকে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাসাসের নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত নেতাদের বিক্ষোভ করে। তাদের হাতে প্লেকার্ড থাকে সেভ জাসাস। ২০ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে জাসাসের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলন চলার সময় জাসাসের নেতাকর্মীরা সদ্যঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় সংবাদ সম্মেলনের কক্ষে প্রবেশ করে তারা রুহুল কবির রিজভীর দিকে আঙ্গুল তুলে স্লোগান দেন ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’সহ কমিটির বাতিলের বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন পরিস্থিতি শান্ত করতে তাদের স্লোগান বন্ধ করতে বললে মুনির সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে রুহুল কবির রিজভী জাসাসের পদবঞ্চিত নেতা ঢাকা মহানগর দক্ষিনের ‘জাসাস’ সাধারণ সম্পাদক এনাম আহমেদ মুন্নাকে শাষণ। রিজভী তাকে ‘মুন্না’ বলেন, এমন কাজ করা তোমাদের মুটেই উচিত হয়নি। গণমাধ্যমের সামনে তোমরা আমাদের অপমানিত করেছো। এই কথায় পরিপ্রেক্ষিতে মুন্না বলেন, তাহলে আমাদের কী করা উচিত ছিল? রিজভী বলেন, তোমরা বিএনপি চেয়ারপারসন, মহাসচিব ও আমর সঙ্গে কথা বলতে পারতে। তা না করে তোমরা আমাদের অপমান করলে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, হুমকি দিচ্ছো তোমরা। কী করবে? গুলি করবে, গুলি ভয় দেখাবে না আমাকে, গুলি এর আগে খেয়েছি, ভয় করি না। পরে জাসাসের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর পরেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের সবোর্চ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সিনিয়র নেতারা পদবঞ্চিতদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু না হওয়ায় আবারও আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর-সিকদার বলেন, মাত্র ক’মাসেই উজ্জ্বল-মামুনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কারণ যোগ্য লোকের হাতে জাসাসের নেতৃত্ব দেয়া হয়নি। যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করলে এই সঙ্কট সৃস্টি হতো না। তিনি বলেন, অবিলম্বে পদবঞ্চিত নেতাদের সঠিক জায়গায় পদায়ন করে জাসাসকে শক্তিশালী করতে হবে। নইলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আরও ভয়াবহ হতে পারে। |