শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বৈচিত্র্য হারাচ্ছে চলচ্চিত্রের ভিলেন চরিত্রগুলো
Published : Sunday, 2 April, 2017 at 6:00 AM, Count : 776

শেখ রাজিয়া সূলতানা : দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে খলনায়কের সঙ্কট চলছে। সম্প্রতি অভিনেতা মিজু আহমেদের মৃত্যুর পর এই কথাটি ঘুরেফিরে আজকাল বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে। এর কারণ চলচ্চিত্রের স্বর্ণালি যুগের পর্দা কাঁপানো খলনায়কদের অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন, আবারও কেউ চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন। আর নতুন যারা কাজ করছেন তারা অধিকাংশই জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
নামি খলনায়কদের মধ্যে খলিল, রাজীব, হুমায়ূন ফরিদী, মিজু আহমেদ মারা গেছেন। আর এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ, মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে আগের মতো দেখা যাচ্ছে না। কালে ভদ্রে সাদেক বাচ্চু আসলেও ছবির গল্প ও চরিত্রের দুর্বলতা থাকছেন আলোচনার বাইরে। আর এককালের জনপ্রিয় খল অভিনেতা ডন আগের মতো আর সরব নন।
এসব জাদরেল অভিনেতাদের পরের প্রজন্মের ভিলেন হিসেবে মিশা সওদাগরই একমাত্র ভরসা ইন্ডাস্ট্রির। তিনিই ভিলেন হয়ে পর্দায় হাজির হচ্ছেন কখনও কালো চুলে, কখনও সাদা চুলে। গ্রামে, শহরে, নগরে, বন্দরে যেখানেই চলচ্চিত্রের মন্দ মানুষ প্রয়োজন সেখানেই দেখা মিলে প্রায় নয় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা শক্তিমান এই অভিনেতার।
তবে এতে করে বৈচিত্র্যতা হারাচ্ছে চলচ্চিত্রের ভিলেন চরিত্রগুলোর। কমছে নতুনদের সুযোগ। আবার এই কথাও সত্যি, প্রচারণার এই যুগে সবাই নায়ক হতে চান। কেউ কোনো ভিলেনকে আদর্শ মেনে চলচ্চিত্রে আসতে চান না। মিশা পরবর্তী উল্লেখ করার মতো যে ক’জন ভিলেন এসছেন কেউই নিজের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না।
তরুণ প্রজন্মের গুটিকয়েক খল-অভিনেতা দু-একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হলেও শক্ত করে নিজের আসনটি ধরে রাখতে পারছেন না। নতুনদের তালিকায় আছেন শিমুল খান, ডিজে সোহেল, জিয়া ভিমরুল।
চলচ্চিত্রে বরাবরই খলনায়কদের ভূমিকা অপরিসীম। তারাই গল্পকে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে এগিয়ে নিয়ে গতি এনে দেন। সব মিলিয়ে দর্শক গ্রহণযোগ্য ছবি তৈরিতে খলনায়করাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কেন নতুন করে কেউ জ্বলে উঠতে পারছেন না, এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, অভিনয়ের প্রয়োজনে ভিলেনদের চলচ্চিত্রের পর্দায় বিচিত্র রূপ ধারনের পাশাপাশি কঠিন কঠিন কাজ করতে হয়। তাই খলচরিত্রে অভিনয় করতে হলে দক্ষ অভিনয়শিল্পী হওয়া আবশ্যক। কেননা, এককালে যারা খল চরিত্রের জন্য বিখ্যাত ছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা। গোলাম মুস্তাফা, রাজীব, খলিল, আহমেদ শরীফ, এটিএম শামসুজ্জামান, সাদেক বাচ্চুরা এই দেশের চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।  তাদের আরও দাবি, আজকাল অভিনয়ের প্রতি গুরুত্বই দেয়া হয় না। সবাই আলোচনায় থাকতে পছন্দ করে। সেবাই নায়ক-নায়িকা হতে চায়। ভিলেন হতে আগ্রহ হয় না কারও। আর যারা হতে চান তাদের দক্ষতা, একনিষ্ঠতার অভাব আছে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালকদেরও অনেক সমস্যা আছে। তারা গল্পই বাছাই করে নায়ক-নায়িকা নির্ভর। ভিলেনের দুটি ঘুষি দেয়া ছাড়া তেমন কোনো অংশগ্রহণ দেখা যায় না। ভিলেনের আসল শক্তি কিন্তু কূটচাল, গল্পের মোড় ঘুরানো। এখন এসব একদম নেই। বরং বলা যায়, ভিলেনরাই নায়ক-নায়িকার স্বার্থে পর্দাজুড়ে ঘুরে বেড়ায়।
আরও একটা সমস্যা হলো সস্তা আলোচনার জন্য অনেক পরিচালক সাবেক-বর্তমান নায়কদেরকেই ভিলেন হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। যার ফলে পেশাদারিত্বেও আঘাত আসছে ভিলেনদের। বাড়ছে হতাশা। আর আজকাল অভিনয়ের বিচার কেউ করে না। সবাই সেরা, সবাই মহাঅভিনেতা। কিন্তু দর্শক নিচ্ছে না কাউকেই। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। সেটি হলো এককালে রিনা খান, নাসরীনের মতো প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা খল চরিত্রে অভিনয় করে ক্রেজ তৈরি করেছেন। দর্শক পর্দায় তাদের দেখলেই ভয় পেত এই বুঝি কারও সংসার ভাঙল, কারও হূদয় ভাঙলো। কিন্ত আজকাল কোনো মেয়ে বা নারীই মন্দ চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। যারা করছেন হয় তারা নতুন নয়ত বা প্রযোজক-পরিচালকের আত্মীয়-পরিচিতা। আনেকে-অদক্ষ অভিনয় দিয়ে তারা বিরক্তি উত্পাদন ব্যতীত তেমন কিছুই উপহার দিতে পারছেন না।
আপাতত বর্তমানে চলচ্চিত্র নির্মাতারা একমাত্র খলনায়ক মিশা সওদাগরের ওপর নির্ভর করে আছেন। একমাত্র তিনিই দাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। ১৯৯০ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদের ‘চেতনাদ’ শীর্ষক চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে প্রথমে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালে ‘আশা আমার ভালোবাসা’ ছবিতে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। সেই সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে এ পর্যন্ত প্রায় নয় শতাধিক ছবিতে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। মিশা বলেন, ‘রাজীব, হুমায়ূন ফরীদি ভাইয়ের সময় আমি নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছি। এটা কিন্তু ২০-২৫ বছর আগের কথা। তখনই নির্মাতা ‘মিশাকে লাগবে’ এই প্রয়োজনটা অনুভব করেন। কিন্তু এখন যারা কাজ করছেন তারা সেটা পারেনি। এর কারণ একাধিক হতে পারে। তাদের অভিনয় দুর্বল হতে পারে, হতে পারে তারা মন দিয়ে কাজ করে না। আবার তারা সঠিক চরিত্র পাচ্ছেন না এমনটাও হতে পারে। নবীন খল অভিনেতা শিমুল খান বলেন, ‘আমরা যারা নবীন তাদের খল অভিনেতার কাজটি নিয়ে একদমই চর্চা নেই। তারা কেউ নিজেদের অভিনয় নিয়ে গবেষণা করছেন না। হুজুগে ফিল্মে আসছেন কাজ করতে। এর ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি নিজে আমার প্রতিটি কাজ নিয়ে চর্চা করি। কোনোটা ভালো হলো, কোনোটা খারাপ হলো এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করি।
এ বিষয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বলিউল আলম খোকন বলছেন, সবাই চলচ্চিত্রে এসে নায়ক-নায়িকা হতে চাচ্ছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
সম্পাদক ও প্রকাশক: আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, উপদেষ্টা সম্পাদক: এ. কে. এম জায়েদ হোসেন খান, নির্বাহী সম্পাদক: নাজমূল হক সরকার।
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক শরীয়তপুর প্রিন্টিং প্রেস, ২৩৪ ফকিরাপুল, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : মুন গ্রুপ, লেভেল-১৭, সানমুন স্টার টাওয়ার ৩৭ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত।, ফোন: ০২-৯৫৮৪১২৪-৫, ফ্যাক্স: ৯৫৮৪১২৩
ওয়েবসাইট : www.dailybartoman.com ই-মেইল : [email protected], [email protected]
Developed & Maintainance by i2soft