শিরোনাম: |
মাগুরায় বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী
উন্নত দেশ গঠনে আবারও নৌকায় ভোট দিন
|
বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০১৯ সালের নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবেন, আপনাদের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা। তিনি বলেন, মাগুরা উপনির্বাচনে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। বিএনপিকে ভোটচোরের দল উল্লেখ করে তাদের আবার ক্ষমতায় না বসাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরায় মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এই জনসভা থেকে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে জয়লাভ করায় মাগুরার সন্তান সাকিব আল হাসানসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ক্ষমতায় এসে তারা সারাদেশে শুরু করে অত্যাচার নির্যাতন। তাদের আমলে এই মাগুরা সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, মাগুরায় উপনির্বাচনে বিএনপি ভোট চুরি করে এবং তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চুরির দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশে যত উন্নয়ন হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি জোট) ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ আর আমেরিকার সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসেই সারাদেশে শুরু করে অত্যাচার নির্যাতন। তাদের সেই নির্যাতনের কথা মাগুরাবাসী এখনো ভুলেনি। বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধে নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগেও তারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। তাদের কাজই হচ্ছে শুধু নির্যাতন। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের লক্ষ্য মানুষের সেবা করা, দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে মাগুরায় একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হালের গরু নিয়ে তারা জবাই করে খেয়েছে। খেতের ফসল নষ্ট করেছে, পুকুরের মাছ তুলে নিয়েছে, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। এ সময় তিনি বিএনপির আমলে খুন হওয়া মাগুরার নেতাদের তালিকা পড়ে শোনান। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির হাতে যেমন দেশের মানুষ নিরাপদ নয়- তেমনি ধর্মও নিরাপদ নয়। তারা মানুষকে যেমন পুড়ে মেরেছে, তেমনি বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। পরপর দুইবার ক্ষমতায় এসে কী কী উন্নয়ন করেছেন এর বিবরণ দেন প্রধানমন্ত্রী। মাগুরায় যেসব উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন এর তালিকাও জনসভায় পাঠ করে শোনান। এসব উন্নয়নকে তিনি ‘মাগুরাবাসীর জন্য উপহার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মাগুরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি রেললাইনের। সে দাবি পূরণেরও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিলাম দেশকে ডিজিটাল করব। আমরা ক্ষমতায় এসে তা করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল এখন সবাই পাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমরা যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। এতে তারা বিদেশে গিয়েও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল। এর সুফল জাতি ভোগ করছে আমাদের কল্যাণেই। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। অভিভাবক, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, মুরব্বি, মসজিদের ইমাম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে এর খোঁজ-খবর রাখবেন। ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে শিক্ষকদের খোঁজ রাখার আহ্বান জানান তিনি। কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। একটা সুন্দর সমাজ গড়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি বা আবেদন, এখানে (মাগুরায়) যেন কোনো রকম সন্ত্রাস স্থান না পায়। মাদক যেন কেউ গ্রহণ না করে। ছেলেমেয়েরা মাদক থেকে বেরিয়ে আসে- সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অভিভাবকদের বলব, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলেন; তারা যেন বিপথে না যায়। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের ভালো হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও সময় আছে, ফিরে আসুন। আমরা সুন্দর জীবন গড়তে যা যা করার সব ব্যবস্থা করে দেব। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে দেশে বিদ্যুতের হাহাকার ছিল। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুত্ মজুদ আছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না। প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। দেশের উন্নয়নে গতি ধরে রাখতে আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাগুরাবাসীর কাছে আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমার হারানোর আর কিছু নেই। জাতির জনকের কন্যা হিসেবে প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও দেশবাসীর জন্য কাজ করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এ পরিবারের সব হারিয়েছি। তাও এত কষ্ট মাথায় নিয়ে একটাই কারণে কাজ করে যাচ্ছি, কারণ আমার বাবা বঙ্গবন্ধু এই দেশকে উন্নত করতে চেয়েছিলেন। তাই তো জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত্ পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে একটা ঘরও ?অন্ধকারে থাকবে না। সবাই বিদ্যুত্ পাবে। ২৮টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: মাগুরায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩২৭ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুপুরে মাগুরায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে নামফলক উন্মোচন করে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের আগে বিশেষ মোনাজাত হয় এবং এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ১৯টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মাগুরা ২৫০-শয্যা হাসপাতাল, শ্রীপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, মহাম্মদপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ফটকি নদীর ওপর ১০০.১০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, কাটাখালী জিসি-ইছাখাদা আর অ্যান্ড এইচ পর্যন্ত প্রায় ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, ৩০.৫০ মিটার নতুন বাজার সেতু, ৩৫০ ঘনমিটার প্রতি ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রশাসনিক ভবন, বেলনগর এলাকায় হেচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার (তৃতীয় পর্যায়), আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, ৫০ শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন, শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, মাগুরা টেক্সটাইল মিল পুনঃউত্পাদন কার্যক্রম, শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। প্রধানমন্ত্রী ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, মাগুরা আঞ্চলিক পার্সপোর্ট অফিস ভবন, ফটকি নদীর ওপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, বরইচারা আটিরভিটা-বরইচারা বাজার সড়কে ফটকি নদীর ওপর ৬৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, চিত্রা নদীর ওপর ৯৬ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়), শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিইবেশন সেন্টার, শ্রীপুর উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম এবং শালিখা উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প। |