শিরোনাম: |
আমার দুঃসময়ে পাশে ছিলেন হানিফ সংকেত স্যার : আকবর
|
শেখ রাজিয়া সূলতানা : যশোর শহরের অলিগলিতে রিকশা চালাতেন আকবর। খুলনার পাইকগাছায় জন্ম হলেও আকবরের বেড়ে ওঠা যশোরেই। সেখানে টুকটাক গান করতেন। তবে গান নিয়ে ছোটবেলা থেকে হাতেখড়ি ছিল না। আকবরের ভরাট কণ্ঠের গানের কদর ছিল যশোর শহরে। সে কারণে স্টেজ শো হলে ডাক পেতেন।
২০০৩ সালে যশোর এমএম কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন আকবর। সেবার বাগেরহাটের এক ভদ্রলোক আকবরের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে চিঠি লেখেন আকবরকে নিয়ে। এরপর ইত্যাদির টিম আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই বছরই ইত্যাদিতে ‘একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, ফিরবে না সে তো আর কারও আকাশে’- কিশোর কুমারের এ গানটি গেয়ে রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে যান আকবর। এরপর আকবরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি গায়ক পরিচয়ে পরিচিতি পান। বর্তমানে আকবর রয়েছেন আলোচনার বাইরে। কোনো রকম প্রচারণাতেই দেখা যায় না তাকে। আলাপকালে আকবর বলেন, কিছুদিন আগে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। জন্ডিস, টিবি ছাড়া আরও নানা রোগ একসঙ্গে আক্রমণ করেছিল। আল্লাহপাকের রহমত ছাড়া বাঁচতে পারতাম না। তিনি দুঃখের দিনের বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমার ওই দুঃসময়ে সবসময় ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন হানিফ সংকেত স্যার। উনি আমাকে চিকিত্সা করিয়েছেন দেশের বাইরে নিয়ে। তার ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। আকবর বলেন, হানিফ সংকেত স্যারের কল্যাণে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে আমেরিকা, ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া, ২০০৮ সালে লন্ডনে শো করেছি। সবসময় স্যার (হানিফ সংকেত) আমাকে আগলে রেখেছিলেন। এখনও সন্তানের মতো ভালোবাসেন আমাকে। একজনমে উনার মতো মানুষ পেয়েছিলাম বলে আমি সত্যি সৌভাগ্যবান। ‘ইত্যাদি’তে গান করে তারকা বনে যাওয়া আকবরের কণ্ঠে ‘একদিন পাখি উড়ে’ ‘হাত পাখার বাতাসে’ ‘হঠাত্ দেখা, ‘ইচ্ছে করে’ ‘বেদনার মেঘ’ ‘চাঁদ রূপসী’ নামের ছয়টি অ্যালবাম বাজারে আসে। এর মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় ‘হাত পাখার বাতাসে’ অ্যালবামের এই টাইটেল গানটি। ওই সময় আকবরকে নিয়ে তুমুল আলোচনা হতো। তাছাড়া ‘কঠিন পুরুষ’ ছবির একটি গানে কণ্ঠ দেন আকবর। যে গানটিতে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন প্রয়াত নায়ক মান্না। প্রসঙ্গ, এদিকে আকবরের গাওয়া ‘হাত পাখার বাতাসে’ গানটি যেমন তাকে নিয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয়তার নান্দনিক উচ্চতায় তেমনি এই গানটিই তাকে উত্থানের গল্প শোনার আগেই পতনের দিকে ধাবিত করেছিল। আকবরের এমনই ধারণা। গানটির অডিও প্রকাশের পর এর ভিডিও প্রকাশও হয়েছিল। সেখানে আকবরের সঙ্গে মডেল হয়েছিলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। সেসময় চাউর হয়েছিল আকবর পূর্ণিমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এতে পূর্ণিমা রেগে গিয়েছিলেন এই গায়কের ওপর। এ ঘটনায় আকবর সমালোচিত হন। কমে যেতে থাকে তার গ্রহণযোগ্যতা। কিন্তু এই কথাটুকু কতটুকু সত্যি? আকবর বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। আমি কখনই নায়িকা পূর্ণিমা ম্যাডামকে বিয়ে করতে চাইনি। আমার গানটি করার সময় ম্যাডাম তখন সুপারহিট নায়িকা ছিলেন। উনাকে যে আমার গানে পেয়েছিলাম এটাই আমার পরম পাওয়া। আমার মতো অখ্যাত এক গায়কের সঙ্গে মডেল হয়েছিলেন। তার তারকা খ্যাতির স্পর্শে আমি অনেক দূর এসেছি। সবাই আমাকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু কিছু মানুষ যারা আমাকে হিংসে করতো, যারা আমার উত্থান মেনে নিতে পারেনি তারা আমার সঙ্গে পূর্ণিমা ম্যাডামকে জড়িয়ে নানা কটূ কথা ও গুজব ছড়ায়। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আরও বেশি কষ্টের কারণ হলো অধিকাংশ মানুষই এই গুজব বিশ্বাস করেছিলেন। আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। আমার মত মানুষের একটা দোষ হাজার দোষের সমান। কেউ যাচাই বাছাই করার ধৈর্য রাখে না। তিনি আরও বলেন, যা হবার তাই হয়েছে। আমি এসব নিয়ে দুঃখ করি না। পূর্ণিমা ম্যাডাম যদি এসব গুজবকে মিথ্যে মনে করেন তাই হবে আমার জন্য শান্তির। বর্তমানে কীভাবে দিন কাটছে আপনার? আকবর বলেন, আমি এখন খুব ভালো আছি। পুরোপুরি সুস্থ আছি। আমার রোজগারের উত্স হচ্ছে স্টেজ শো। আজ মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়ায়, আগামী ২৫ তারিখ চাঁদপুরে শো আছে। এছাড়া আরও কয়েক জেলায় গানের কথাবার্তা চলছে। গত ডিসেম্বরে যশোরে ‘ইত্যাদি’ প্রচার হওয়ায় সেই পর্বে একটি গান গেয়েছিলাম। তারপর আবার নতুন করে আমি কাজ পাচ্ছি। বর্তমানে আকবর রয়েছেন সাতক্ষীরায়। সেখানে তিনি ‘ইত্যাদি’র নতুন পর্বের জন্য গান করবেন। উল্লেখ্য, স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে ঢাকাতেই আছেন আকবর। তার মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। আকবর বলেন, ‘আজ আমি যা কিছু করেছি বা হয়েছি সবটুকুর অবদান হানিফ সংকেত স্যারের। উনি আমাকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন। আমি এখন মোটামুটি সচ্ছল। আগামীতে সবাই চাইলে আমি আবার সিনেমায় গান গাইব। সবার সহযোগিতা চাই। যতদিন বাঁচব গান নিয়ে থাকতে চাই। |