শিরোনাম: |
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মমতাময়ী পেশা নার্সিং
|
বর্তমান প্রতিবেদক : পৃথিবীতে প্রতিটি ধর্মেই মানব সেবার কথা বলা হয়েছে। কারো কারো মতে মানব সেবার মাধ্যমেই সৃষ্টি কর্তার আনুুকূল্য তথা সান্নিধ্য পাওয়া যায়। অনেকভাবেই মানব সেবা করা যায়। যার অন্যতম একটি হচ্ছে নার্সিং। কিছু দিন আগেও বাংলাদেশে নার্সিং পেশা মূলত একটি বিশেষ ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে, প্রয়োজনের তাগিদে তথা মানবিকতার কারণে আজ অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এই মহান পেশা। তেমনই একজন ওটি নার্স পারুল আক্তার। মানব সেবায় ব্রত হয়ে এসএসসি পাস করার পর সলিমুল্লাহ নার্সিং ইনস্টিটিউট ভর্তি হন। ৪ বছরের ডিপ্লোমা নার্সিং কোর্স শেষ করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে মানব সেবায় নিজেকে জড়িত করেন। সেবার মাঝেই আনন্দ-বিনোদন, সেবার মাঝেই আয়-রোজগার, সেবার মাঝেই সুখ-দুঃখ। অসুস্থ রোগীদের সেবার মাধ্যমে সুস্থ করার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান তারা। অচেনা অজানা মানুষদের পরম মমতায় আপন করে নেন এই পারুলরা।
ইট পাথরের এই শহরে কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা অপরকে নিয়ে ভাবেন। অপরের উপকারে নিজের জীবন উত্সর্গ করতে চান। মানব সেবাই যারা পেশা হিসেবে বেছে নেন। তারা হলেন সেবিকা। আমরা তাদেরকে নার্স হিসেবেই জানি। বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে মানবসেবা পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নারীদেরই কাজ করতে দেখা যায়। নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। পেশা হিসেবে নার্সিং হাল আমলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে। যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে কাজের পর্যাপ্ত ক্ষেত্র নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তার মধ্যে নার্সিং অন্যতম। নার্সিং শব্দটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে অসুস্থ মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার অনুসঙ্গটি। নার্সিং শব্দের আভিধানিক অর্থ তত্ত্বাবাবধান করা বা সেবা করা। নার্স বা সেবিকা রঙে সাদা, পোশাকে সাদা, মনে সাদা। সাদায় যেন একাকার নার্সিং পেশা। সাদা সেতো শান্তির প্রতীক। জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয়ভাবে সাদা রঙের গুরুত্ব আছে। এ পেশায় আসতে হলে অবশ্যই সেবা মনস্ক হতে হয়। হয়তোবা সাদামনের মানুষ বলে শান্তির রঙ সাদা ইউনিফর্মের নার্স পেশাকে গ্রহণ করে সমাজের কিছু আপনজন। যাদের সেবায় মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠি আমরা। নার্সরা পেশা ও সেবাকর্ম দিয়ে মানুষের মন জয় করে। জয় করে জীবন ও বিশ্ব। নার্সিং একটি সেবামূলক পেশা। অনেক পেশার ভিড়ে পেশা হিসেবে নার্সিং দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে এটি এমন একটি পেশা, যার চাহিদা নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এক দিকে যেমন বিদেশে এ পেশায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে, অন্যদিকে দেশেও কাজ করার অপার সুযোগ রয়েছে। দিন দিন মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নার্সের চাহিদা। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৬ হাজার ৩৫০ জন নার্স সৌদি আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়াও দেশে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, হোটেল-মোটেল, এনজিও এমনকি পর্যটন করপোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। নার্সিংয়ের ওপর স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখা করার সুযোগ কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ছিল না। কিন্তু সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে সাতটি বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজে এ কোর্স চালু রয়েছে। এদের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ১০০টি করে। কলেজগুলোতে বিএসসি ইন নার্সিংয়ের ওপর চার বছরের অনার্স কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এর বাইরেও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদেশি কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের বিএসসি ইন নার্সিংয়ের পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়েছে। দেশে এখন প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে ওঠেছে। আরও হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছরই নার্সের প্রয়োজন হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের সেবা পরিদফতর। এই পরিদফতর থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালে চার হাজার ১০০ জনকে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। সামনে আরও কয়েক হাজার নার্স নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে। তাই এ পেশায় যারা ক্যারিয়ার গড়তে চান, তারা এখন থেকে এর প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারেন। এ পেশা শুরুর আগে আপনাকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং অথবা ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন নার্সিং (বিএসসি) কোর্স করতে হবে। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সরকারি ডিপ্লোমা ইন নার্সিং কলেজ আছে ৪৩টি। আর বেসরকারি কলেজ আছে প্রায় ৭০টি। এ ছাড়া সরকারি বিএসসি ইন নার্সিং কলেজ আছে ৯টি, বেসরকারি আছে ২১টি। জনসেবামূলক পেশা নার্সিং। এ পেশায় আসতে হলে মানুষের সেবার মানসিকতা থাকতে হবে। একজন নার্সকে সাধারণত চিকিত্সকের নানা কাজের সহকারী হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের আউটডোর ও ইনডোর, অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া রোগীকে ওষুধ খেতে সহায়তা করাসহ নানাভাবে সেবা করারও কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তো বটেই, বিদেশেও নার্সিং পেশার দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, কাতার, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। তাই এ পেশায় বর্তমানে যেমন রয়েছে সম্মান, তেমনি রয়েছে সম্ভাবনা। এখানেও অন্যান্য চাকরির মতো ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে। দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নার্স থেকে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সুপারিনটেনডেন্ট, নার্সিং ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হওয়ার সুযোগ আছে। এছাড়া সরকারের সেবা পরিদফতরের উচ্চপদস্থ পদে যেতে পারেন নার্সরা। |