শিরোনাম: |
হাজারীবাগে ট্যানারির দূষণে দিনে ক্ষতি ১১ লাখ টাকা
|
বর্তমান প্রতিবেদক : কার্যক্রম বন্ধে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা সত্ত্বেও চলছে রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো। ফলে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য এখনও ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এই দূষণের ফলে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকারও বেশি। এই হিসাবে দিনে ক্ষতি প্রায় ১১ লাখ টাকা।
হাজারীবাগে ট্যানারিগুলোর চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহূত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যাদি, লবণ ও অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারি থেকে দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য এখনও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্যে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহূত ভারি ধাতু এবং লবণসহ বিভিন্ন বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি রয়েছে। আর্থিক মূল্যে যার পরিবেশগত ক্ষতি বর্তমানে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৬৬ বছর ধরে বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণ করে চলছে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো। বর্তমানে বুড়িগঙ্গার পানি শিল্প, কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি ওই পানি পরিশোধন করেও ব্যবহারের উপযোগী করা সম্ভব নয়। এদিকে ট্যানারি শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, জীবনের তাগিদে তাদের কাজ করতে হয়। এখানে কাজ করার ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পলাশ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে ট্যানারিতে কাজ করছি। এখনই আমার শ্বাসকষ্ট হয়। আর কিছু না খেলে গলা জ্বলে।’ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারির কারণে বুড়িগঙ্গা নদী দূষিত হচ্ছে। আদালত রায় দিয়েছেন, আমরা চলে যাব। সাভারে গেলে আমাদের উত্পাদন বাড়বে। বায়ারদের (বিদেশি ক্রেতাদের) কাছ থেকে দামও বেশি পাব। কিন্তু আমাদের এ মৌসুমে ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের রফতানির অর্ডার রয়েছে। এখনই ট্যানারি সরালে এই রফতানি করা সম্ভব হবে না। ফলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে দেশ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাজারীবাগে ৯৫ শতাংশ ট্যানারি অপরিকল্পিত, যা পরিবেশকে মারাত্মক বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হাজারীবাগের মোট ২৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে ২৫০টিরও বেশি ছোটবড় ট্যানারি কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের মতে, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে ৮ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক গ্যাস্ট্রোইন-টেসটাইনাল রোগে ভুগছেন এবং মোট শ্রমিকের ৩১ শতাংশ চর্মরোগ, ১২ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ ও ১৯ শতাংশ জন্ডিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষ ৫০ বছর বয়সের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। মূলত অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশের কারণেই এখানকার শ্রমিকরা মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকে। জানা গেছে, গত ১২ মার্চ হাজারীবাগে আর কোনো ট্যানারি কারখানা থাকতে পারছে না মর্মে তাদের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ট্যানারি কারখানাগুলোর গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের আদেশও বহাল রেখেছেন আদালত। এর আগে ৬ মার্চ হাইকোর্ট ট্যানারিগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে বারবার আল্টিমেটাম দেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। |