শিরোনাম: |
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপমুক্ত
পুনর্বাসিতদের সঞ্চয় দেড় কোটি টাকা
|
নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপমুক্ত হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে ও নিভৃত পল্লীতে কাউকে ভিক্ষার জন্য দ্বারে দ্বারে হাত পাততে দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর পেয়ে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হয়েছে। পুনর্বাসিতদের ব্যাংক হিসেবে বর্তমানে তাদের সঞ্চয় প্রায় দেড় কোটি টাকা হয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ পুষণা গ্রামের মোজোতোন (৬০) তার স্বামী তহির উদ্দিনের মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরতে-ঘুরতে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার অভিপ্রায়ে মোজোতোনকে দেয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসার উপকরণ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে মোজোতোন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে। ক্ষুদ্র মুদির ব্যবসার লাভ ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প হতে ঋণ নিয়ে আজ সে স্বাবলম্বী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়ে মোজোতোন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ব্যাহে মুই ক্যানে আর ভিক্ষা করিবার যাইম? মোক এখন আর খাবারের চিন্তা করিবার নাগে না। সরকার মোক একটা ঘর দিয়া কি যে উপকার করেছে। মোজোতোনের মতো কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬৯০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে ঘর পেয়েছেন। এদের সবার মুখে এখন অনাবিল হাসি। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করার আগে তালিকাভুক্ত ৯৭৯ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের আওতায় নেয়া হয়। এদের দেয়া হয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হয়েছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে খাওয়া মানুষগুলো কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি এক একজন উন্নয়ন কর্মীতে রূপান্তর হয়েছে। পুনর্বাসিতদের মধ্যে ৯৫১ জনকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সদস্য করে দেয়া হয়েছে ঋণ। ঋণের টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ব্যবসা করে আজ তারা স্বাবলম্বী। তাদের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে নিজস্ব সঞ্চয় ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮শ’ টাকা, কল্যাণ অনুদান ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮শ’, আবর্তক তহবিল ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ৬২৩ টাকাসহ মোট তহবিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২২৩ টাকা। কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুনর্বাসিতদের সাফল্যের কথা শুনে সরেজমিনে এই চিত্র দেখার জন্য আসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাদের পুনর্বাসনের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি পুনর্বাসিতদের মাথাগোঁজার ঠাঁই ঘর নির্মাণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে প্রথম পর্যায় ১০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পুনর্বাসিত ১০ জনের ঘর নির্মাণ কাজের প্লান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের একটি দল তা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩ দফায় আরো ২৩২ জনের ঘর নির্মাণের জন্য ঘরপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে। |