শিরোনাম: |
অলৌকিক প্রত্যাবর্তনে কোয়ার্টারে বার্সা
|
ক্রীড়া ডেস্ক : ৯০ মিনিটের খেলা শেষে অতিরিক্ত সময় যোগ হলো পাঁচ মিনিট। তখন বার্সা ৫-১ পিএসজি। এই যখন খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ১ মিনিট বাকি। ঠিক তখন বার্সার গোলকিপারও চলে আসলেন প্রতিপক্ষের ডিবক্সের সামনে। চাই আরও একটা গোল। পারবেন কি? এই যখন প্রশ্ন সবার তখন সেই অলৌকিক কাজটাই করে দেখালেন সার্জিও রবার্তো। শেষ বাশি বাজার ৩০ সেকেন্ড আগেই গো....ল! ফলে বার্সা ইতিহাস গড়ে কোয়ার্টারে।
আর তখন পুরো মাঠ ও গেলারিতে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। খুদে এক বার্সা ভক্ত উঁচিয়ে ধরলেন প্লেকার্ড। যাতে লেখা, ‘ইয়েস উই ক্যান।’ এরপর ক্যামেরা ঘুরে আটকে গেল এক জায়গায়। যেখানে দেখা গেল, কেঁদেই চলেছেন এক কাতালান দর্শক। এ কান্না আনন্দের, গৌরবের, শ্রেষ্ঠত্বের। এরপর রেফারির শেষ বাঁশি। গগন বিদারি চিত্কারে কম্পমান গোটা ন্যু ক্যাম্প। আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল গ্যালারি থেকে গ্যালারি। মেসি-নেইমার-সুয়ারজদের নামে কোলাস যেন থামছিলই না। এ এক ভিন্ন অনুভূতি। মাঠের সবুজ গালিচায় তখন বার্সা খেলোয়াড়দের স্তূপ। সবার নিচে পড়ে হাসফাস করছেন জয়সূচক গোলদাতা সার্জিও রবার্তো। তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই কারো। সময়টা এখন উপভোগের, যেন রাজ্য জয়ের প্রশান্তি, আনন্দ উল্লম্ফনে ব্যস্ত সবাই। দিকভ্রান্তের মতো ছুটছেন কোচ লুইস এনরিক। যাকে পাচ্ছেন তাকেই জড়িয়ে ধরছেন। ভাবাবেগের এক অভিন্ন বহিঃপ্রকাশ। এ যেন অলৌকিক, দুরন্ত দুর্বার, অবিস্মরণীয় কিংবা বর্ণীল এক রূপকথা। ন্যু ক্যাম্প যেটার সাক্ষী হয়ে রইল। আর কুশীলবের ভূমিকায় মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ আর সার্জিও রবার্তো। এমন ফুটবল ম্যাচের বিবরণ আসলে যেন দেয়াই দায়। সব বিশেষণই যেন কম হয়ে যায়। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে যা ছিল না, সেটাই করে দেখালো বার্সেলোনা। কেন তারা ভিনগ্রহের টিম, প্রমাণ মিলল আরও একবার। কেন এমএসএন আর সবার চেয়েও সেরা, তাও প্রত্যক্ষ করল গোটা ফুটবল বিশ্ব। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর মাঠে ৪-০ গোলে হেরে এসেছিল বার্সেলোনা। কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে ফিরতি লেগে বার্সার দরকার ছিল ৫-০ গোলের অলীক জয়। ফিরতি লেগে এমন প্রত্যাবর্তনের রেকর্ড নেই। কিন্তু সেই বার্সাই তা করে দেখাল। বুধবার গভীর রাতে (বাংলাদেশ সময়) ফিরতি লেগে সেই পিএসজিকে ৬-১ গোলে পরাজিত করে শেষ আটে নাম লিখিয়েছে লুইস এনরিক শিবির। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলে জয়ী কাতালান শিবির। এ যেন অবিশ্বাস্য, আর রহস্যময় ঘেরা এক ম্যাচ। যে ম্যাচটি পেন্ডুলামের মতো দুলেছে সারাক্ষণ। তিন গোলের পর পিএসজির কাভানির এক গোল বার্সাকে ছিটকেই ফেলে দিচ্ছিল। কিন্তু সেখান থেকেও কি কামব্যাক! তবে শেষ মুহূর্তেও খাদের কিনারায় ছিল বার্সা। ম্যাচের ত্রিশ সেকেন্ড বাকি। ব্যবধান তখন দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৫। এই ব্যবধানে থাকলেও অ্যাওয়ে গোলের হিসাবে কোয়ার্টারে যেত পিএসজি। কিন্তু ফুটবল বিধাতা যেন বার্সার জন্য জয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেই রেখেছিলেন। না হলে, শেষ মুহূর্তে ডান দিক থেকে নেইমারের উড়ে আসা বলে সার্জিও রবার্তোর প্লেসিং শট কেন জালে জড়াবে? আর কেনইবা জয়ের আনন্দে উন্মত্ত উল্লাসে মাতবে গোটা বার্সা। যেখানে তা করুণ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখবে প্রথম লেগে দাপটে জয় পাওয়া পিএসজি শিবির। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল বার্সেলোনা। ম্যাচটি ছিল আসলে বার্সার জন্য ?ডু অর ডাই। হয় মরো না হয় বাঁচো। জিততে হবে বড় ব্যবধানে। শুরু থেকেই চাই গোলের দেখা। এমন মন্ত্রই যেন ছিল বার্সেলোনার। আর সেই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে শুরুটা করেন বার্সার উরুগুয়েন স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। তিন মিনিটেই পিএসজির জাল কাঁপান তিনি। জয়ের রসদ যেন সেখান থেকেই খুঁজে পান মেসিরা। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় গোলের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৪০ মিনিটে আসে দ্বিতীয় গোল। সেটা অবশ্য আত্মঘাতী। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার দুর্দান্ত ব্যাক হিল, আর তা রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল ঢুকান পিএসজির কুরজাওয়া। ২-০ তে এগিয়ে যায় বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পেনাল্টি পায় বার্সা। সফল স্পটকিকে দলকে স্বপ্ন ছোঁয়ার আরেকধাপ কাছে নিয়ে যান লিওনেল মেসি। লেইভিন নিজেদের ডি-বক্সে নেইমারকে ফেলে দিলে পেনাল্টিটি পায় বার্সেলোনা। স্কোর তখন ৩-০। গোল দরকার আরও দুটি। অপেক্ষা বাড়তে থাকে। টানটান উত্তেজনা তখন ন্যু ক্যাম্পে। ৬২ মিনিটি ন্যু ক্যাম্পকে স্তব্ধ করেন দেন পিএসজির উরুগুয়েন স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি। একক প্রচেষ্টায় বার্সার জাল কাঁপান তিনি। ব্যবধান কমে আসে ৩-১। বার্সার সামনে প্রতীক্ষিত গোলের সংখ্যা বেড়ে তখন তিনটিতে। জিতবে বার্সা? শঙ্কার মেঘ তখন গোটা ন্যু ক্যাম্পের আকাশে বাতাসে। তবে ইস্পাত কঠিন মনোবলে এগিয়ে গিয়েছে বার্সা। হাল ছাড়েনি নেইমার-মেসিরা। ৮৮ মিনিটে নয়নকাড়া ফ্রি কিকে গোল করেন নেইমার। জেগে উঠে গোটা গ্যালারি। মিনিট দুয়েক পর পেনাল্টি পায় বার্সা। সেটাও দক্ষতার সঙ্গে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার। ব্যবধান তখন ৫-১। কিন্তু কোয়ার্টারে যেতে হলে দরকার আরও একটি গোল। অবলম্বন তখন অতিরিক্ত তিন মিনিট। আসবে কি সেই কাঙ্ক্ষিত গোল? প্রার্থনায় মগ্ন গোটা স্টেডিয়াম। শেষ চেষ্টা চলছে মেসিদের। এক পর্যায়ে বার্সা গোলরক্ষকও উঠে আসলে মাঝ মাঠে। এগারজনই তখন পিএসজি প্রান্তে। এমনই হয় সফল সমাপ্তি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ডান প্রান্ত থেকে নেইমার উঠিয়ে দিলেন বল ডি বক্সের দিকে। দ্রুত গতিতে তাতে শুধু পা লাগিয়ে দিক পাল্টে দিলেন সার্জিও রবার্তো। গোওওওওওওওল। |