শিরোনাম: |
মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সবার সামনে তুলে ধরুন
|
বর্তমান প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেমন বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাশবিক নির্যাতন করেছিল, তেমনি ক্ষমতায় এসে বিএনপিও দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার যখনই ক্ষমতায় থাকে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সারাদেশের মা-বোনদের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একজন মা-ই পারে তার সন্তানকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকা থেকে নিরাপদ রাখতে। কারণ সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু তার মা।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। একইসঙ্গে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক শিরিন রোকসানা। এরপরই শোক প্রস্তাবে আনা নিহতদের, একাত্তরের শহীদ এবং সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী সব শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুননেছা মোশাররফ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা এমপি। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভোলার লালমোহন ও আশপাশের গ্রামে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ কেউ বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। পাক হানাদারবাহিনীর মতোই তারা বর্বর সন্ত্রাস-নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝড়ায় মা-মেয়েকে একসঙ্গে ধর্ষণ করা হয়েছে। ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী সাবিত্রি দাসের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। লজ্জায় তারা অনেকেই কাউকে কিছু বলতে পারেনি। তারা অনেকেই আমার কাছে এসে তাদের এই কষ্টের কথা জানিয়ে গেছে। তিনি বলেন, রাজশাহীর ৭ বছরের শিশু রজুফা ধর্ষিত হয়েছে। নেত্রকোনাতেও মহিলাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, রাজশাহীতে মহিমা আত্মহত্যা করেছে। খুলনায় রুমাকে তুলে আনতে গেলে সে আত্মহত্যা করে ইজ্জত রক্ষা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, রংপুরের নিসবেদগঞ্জে, যারা তীর ধনুক নিয়ে এক সময় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তারাও ভয়াবহ সন্ত্রাস, নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার হয়েছে। বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পুকুরের পাশে চুলা দেখতে পেয়ে সেটি যে বসতবাড়ি ছিল তা চিহ্নিত করা গেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, মাদারিপুরে ২ বছরের শিশু রোকসানাকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চুলায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ বছরগুলোতেও একই কায়দায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে নির্যাতন করেছে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সেই দৃশ্য তো এখরও চোখে ভাসে। সেই যন্ত্রণা নিয়ে এখনও অনেকে বেঁচে আছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই জাতির পিতা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। আবার এই মাসের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার মায়েরা বিরাট ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়া, সন্তান ও স্বামীর হাতে অন্যত্র তুলে দিয়ে তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে পাঠানো, যুদ্ধের খবর সংগ্রহ এবং সশস্ত্র যুদ্ধ কি করেনি তাঁরা। তিনি বলেন, পিরোজপুর-বরিশালের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে হানাদার ক্যাম্পের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে যে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই দুর্গই গড়ে তোলেন বাংলার নারী সমাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আমার মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের কথা। তিনি ছিলেন জাতির পিতার ছায়াসঙ্গী। কারাগারে থাকার সময় এক হাতে সংসার সামলে জাতির পিতার মামলা পরিচালনা করা, সংগঠন চালানো আবার আন্দোলন জমিয়ে তোলা- সবই করেছেন একহাতে। ‘বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তাঁর নর।’ মায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনা থেকে এই অংশটি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধে সম্ভ্রমহারা নারীদের পুনর্বাসনে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাদের জন্য পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু নার্স, ডাক্তার নিয়ে এসে তাদের চিকিত্সা করান। যাদের অ্যাবরশন করানো যায় অ্যাবরশন করান এবং যাদের অ্যাবরশন করানো সম্ভব হয়নি তাদের সন্তান জন্ম দিয়ে বিশ্বের বহুদেশে পাঠিয়ে পুনর্বাসন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু তাদের ‘বীরাঙ্গনা’ উপাধি দেন। আর তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসব নারীদের স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব নারীদের অনেকেরই বিয়ের সময় সমস্যা দেখা দিলে বাবার নামের স্থলে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘লিখে দাও পিতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, বাড়ি ধানমন্ডি ৩২।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমাজ গড়ে তুলতে হলে সমাজের সকলের জন্যই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যেখানে গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রেও নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়। তার সরকারের আমলে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম সচিব, মহিলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সে প্রথম নারী সদস্যদের তার সরকারই নিয়োগ প্রদান করে। শুধু তাই নয়, মহিলা বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, হাইকোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের জজ হিসেবেও নারীদের নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় সরকারের সবপর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে বর্তমানে ২১ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিসহ কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কাউন্সিলর ডেলিগেটশনগণ অংশ নেবেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনারবাংলা গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ যেন পুনরায় সরকার গঠনে সক্ষম হয় সে জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দেশবাসীকে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অবহিত করারও আহ্বান জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু হবেন মা: শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ অভিভাবকদের সচেতন নজর রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়ে উঠতে হবে মাকে। তিনি সন্তানের সব খোঁজখবর রাখবেন। তিনি বলেন, সন্তানকে কেবল শাসন করলে হবে না। তাকে আদর-যত্নও করতে হবে। তাদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক যত্নবান হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কী করে, সে বিষয়ে মায়েদের খোঁজ রাখতে হবে। সন্তানদের জন্য সবচেয়ে বড় বন্ধু হবেন মা। কোনো কথা বলার দরকার পড়লে ছেলে-মেয়ে যেন আগে মাকে বলে। সে রকম পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সন্তান সবসময় যা চায় তাকে তা দেয়ার ক্ষেত্রেও মা-বাবাকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেরা যা চায়, অনেক সময় তাকে তা-ই কিনে দেয়া হয়। দেখা যায়, সেসব ছেলেরাই পরে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আমি চাই মায়েরা সবচেয়ে বেশি নিজের সন্তানদের প্রতি নজর দেবেন। সেটাই আমি প্রত্যাশা করি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্তানের সঙ্গে মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আর কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তির পথে না যায়। মায়ের কাছে সন্তান যেন নির্দ্বিধায় তার যে কোনো সমস্যার কথা বলতে পারে সেই ধরনের একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মা-বোনদের বলে রাখি বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। মাদকাসক্ত থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ছেলে-মেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেদের কখনও অপাংতেয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে রাজনীতির মধ্যদিয়ে আমরা জনগণকে কি দিতে পারলাম। তাদের জন্য আমরা যে কাজগুলো করেছি সেগুলো তাদের বলতে হবে। আমি একটা জিনিস আমাদের মা-বোনদের বলব, একটা জিনিস আপনারা জানেন আজকে শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র বিশ্বে একটা নতুন উপসর্গ হচ্ছে জঙ্গিবাদের আবির্ভাব। ড. ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী?র সমালোচনা : ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে ড. ইউনূসের প্রশংসা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে সেদিন অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক। এরপর আমাকে আমেরিকা থেকে বারবার থ্রেট (হুমকি) করা হয়। অথচ তিনি তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।’ ২ মার্চ রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণের কারণেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এ জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. ইউনূস এবং ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের অবদান রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই ক্রেডিট নেন। ক’দিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্রঋণের প্রশংসা করে বললেন যে, ক্ষুদ্রঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে। দারিদ্র্যবিমোচন যদি তার জন্যই হতো, তাহলে আর ৬০ ভাগের মতো দারিদ্র্য থাকে কেন, কীভাবে এটা ২২ ভাগে নেমে এসেছে, কবে নেমে এসেছে। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অর্থমন্ত্রীকেই বলব, উনি যদি হিসাব নেন, দারিদ্র্য যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে, সেটা কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ; যেটা অর্থমন্ত্রীও কর্মসূচি দিয়েছেন আবার কিবরিয়া সাহেব যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তাকে দিয়েও আমি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালে যেসব কর্মসূচি নিয়েছিলাম, তারই ফলাফলে আজকে দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য লালন পালন হয়। আর যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করেন, তারা সম্পদশালী হয়, তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে উচ্চহারে সুদ; ওই গরিবের মেয়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে সে টাকা সুদ হিসেবে চলে যায়। সে কোনো মতে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না। যারা এই ব্যবসা করে, তারা চায়ও না এরা দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে ব্যবসা করবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতি করতে এসেছি, ব্যবসা করতে না। মানুষের ভাগ্য গড়ার জন্য এসেছি। দরিদ্র মানুষকে নিয়ে ব্যবসা করে বিত্তশালী হওয়ার জন্য আসিনি, এসেছি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে। এসেছি জনগণের সেবা করতে, কল্যাণ করতে। যার কারণে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দারিদ্র্যবিমোচন হচ্ছে। কারণ আমরা মানুষকে দারিদ্র্যবিমোচন করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছি। যেন কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছে মাথা নত করে নয়। |