শিরোনাম: |
বাংলাদেশ বনাম হায়দরাবাদ ও একজন মুস্তাফিজ
|
ক্রীড়া ডেস্ক : হায়দরাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্পর্কটা বেশ পুরনোই। যখন আন্তর্জাতিক কোনো দল বাংলাদেশে আসতে চাইত না তখন হায়দরাবাদের বেশ কয়েকটি দল বাংলাদেশে ম্যাচ খেলতে আসত। যে দলে খেলতেন আজহার উদ্দিন, রবিন সিং, ভেঙ্কটপতি রাজুর মতো ক্রিকেটাররা।
হায়দরাবাদের টুর্নামেন্টে খেলতে যেতেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আকরাম খানসহ ১৯৯২-৯৩ সালে ক্রিকেট খেলা সব জাতীয় ক্রিকেটার। তখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সফরই ছিল এটা। বাংলাদেশ সফর করা হায়দরাবাদের দলটি নিয়েও বাংলাদেশের মানুষদের আগ্রহের কমতি ছিল না। তাদের কাছে এটাই ছিল জাতীয় লড়াই। মহিউদ্দিন গোল্ড কাপে খেলতে তিন-চারবার হায়দরাবাদে গিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ১৯৯৩-৯৪ সালের আইসিসি ট্রফির প্রস্তুতির জন্য হায়দরাবাদে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ইমার্জিং দল থেকে শুরু করে আবাহনী ও আজাদ বয়েজও সফর করেছে হায়দরাবাদে। আর এসব সফর করার নেপথ্যে কাজ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার সৈয়দ আশরাফুল হক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে হায়দরাবাদের যে অবদান আছে সেটা স্বীকার করতে দ্বিধা দেখালেন না আমিনুল ইসলাম বুলবুল। স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বললেন, ‘তিন-চার বার হায়দরাবাদে সফর করেছি। ওখানকার মহিউদ্দিন গোল্ড কাপে খেলেছি। এছাড়া ১৯৯৩-৯৪ সালের আইসিসি ট্রফির প্রস্তুতির জন্যও হায়দরাবাদে গিয়েছিলাম।’ হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশ ইমার্জিং দল, আবাহনী ও আজাদ বয়েজও হায়দরবাদে সফর করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রসারে রাঙ্গা রেড্ডি, মি. মান সিংয়ের অনেক অবদান আছে। আর এসব সফর নিশ্চিত করেছেন আশরাফুল ভাই।’ হায়দরাবাদের কোন দল বাংলাদেশে খেলতে আসত বা ওই দলে কোন কোন ক্রিকেটার খেলতেন বুলবুল বলেন, ‘হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়া সিমেন্ট, তামিল নাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ সার্ভিসেস সাম্পলাস্ট কেলতে আসত। ওসব দলের হয়ে খেলতেন আজাহর উদ্দিন, ভেঙ্কটপতি রাজু, রবিন সিংরা। এছাড়া আরও অনেক ক্রিকেটার ছিল।’ এরপর ধীরে ধীরে এগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আর ক্রমেই হায়দরাবাদের সঙ্গে কমেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। একটা সময়ে হায়দরাবাদের সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ হয়ে যায়। তাই একটা সময়ের পর (১৯৯৫) বাংলাদেশ দলের হায়দরাবাদ সফর কিংবা হায়দরাবাদের কোনো দলের বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়নি। এরপর পেরিয়েছে অনেক বছর। হায়দরাবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের যোগাযোগও জমা পড়ে পুরনো ডায়েরিতে। এমন সময় বাংলাদেশ ও হায়দরাবাদের মাঝে মেলবন্ধন হয়ে হাজির হন মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের তরুণ এই পেসার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলতে আসেন আইপিএলে। প্রথম আইপিএল খেলতে এসেই বাজিমাত কাটার মাস্টারের। তার কাটার জাদুতে দিশেহারা সব প্রতিপক্ষ। শেষ পর্যন্ত দলকে শিরোপা এনে দেয়ার পথে সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতেন মুস্তাফিজ। এমন একটি আসর পার করার হায়দরাবাদে মহানায়কে পরিণত হয়ে যান মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজ বলতেই এখানকার মানুষ পাগল। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার একমাত্র টেস্ট চলাকালীন সেটা বোঝা গেল। গ্যালারিতে মুস্তাফিজের জন্য হাহাকারও দেখা গেল। মুস্তাফিজকে না দেখে রোহান নামের এক ভারতীয় ক্রিকেটভক্ত বললেন, ‘মুস্তাফিজকে না দেখে খুব হতাশ হয়েছি। আইপিএলে তার সব খেলা দেখার চেষ্টা করেছি। ফিজ এলে ভালো হতো। গ্যালারি ফাঁকা থাকত না।’ মুস্তাফিজকে দিয়ে হায়দরাবাদের সঙ্গে পুরনো সম্পর্কটা একটু হলেও চাঙ্গা হয়েছিল। এবার রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সেটা আরও মজুবত হয়েছে। ঐতিহাসিক এই ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। যেখানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ এবং হায়দরাবাদের মধ্যকার ক্রিকেট সম্পর্ক। তবে এমন একটি ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৭ বছর পর ভারত সফরে এসে ২০৮ রানের বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। |