শেখ রাজিয়া সূলতানা : ‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই, দুইকে আমি এক করি না এককে করি দুই।’ দিনটি ছিল কেবলই দুজনার, শুধুই ভালোবাসার। প্রিয়জনের হাতে নির্ভরতার হাত রেখে এমন দিনে কেবলই স্বপ্ন দেখা। যে স্বপ্নের পুরোটাজুড়ে রঙের বর্ণিল বিভোরতা। আর এমন দিনে কে থাকে চারদেয়ালে। সবাই যেন মুক্ত বিহঙ্গ। ডাগর চোখের সবটা জুড়ে ভালোবাসার মাতামাতি। এমন দিনে প্রিয়ার খোঁপার লাল গোলাপ আর ডাগর চোখের চাহনি ভালোবাসার গল্প বলে। দখিনা বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে জীবনের সবটুকু সুখ খুঁজে নেয় এক লহমায়। গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে এমন স্বপ্নই ধরা পড়েছে সবার মাঝে। সকাল থেকে রাত অবধি তারুণ্যের জোয়ারে মুখর করে রাখে ভালোবাসার সব আয়োজন।
প্রিয়ার শাড়ির ভাঁজ, হাঁটার ছন্দ, চোখাচোখি সবকিছুতেই ছিল প্রিয়তমের ভালোবাসার উচ্ছ্বলতা আর উন্মাদনা। ভালোবাসার এমন দিনের প্রতিটি ক্ষণে ছিল শুধু আরও বেশি ভালোবাসার, আরও বেশি কাছে আসার। যেন দুটি দেহ, দুটি হূদয় এক হয়ে মিশে একাকার। এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কবি হেলাল হাফিজের এই পংক্তিটি মিথ্যায় পরিণত করেছে ভালোবাসার উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাসে এগিয়ে যাওয়া তারুণ্য। যুদ্ধে যাওয়ার পরিবর্তে প্রিয়জনের হাত ধরে প্রেমের তরীতে ভেসে যেন স্বর্গে চলে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের শপথ নিয়েছে উদ্দীপ্ত তারুণ্য। প্রিয়তমের হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে যেন এই মর্ত্যলোকেও দিনভর স্বর্গের সুখ খুঁজে বেড়িয়েছিল ভালোবাসার আনন্দ, উল্লাসের তরুণ-তরুণীরা। রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক, হাতির ঝিল, শাহবাগ, টিএসসিসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বেইলী রোডের ফাস্টফুডের দোকান, বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা সর্বত্রই ছিল ভালোবাসামুখর হয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভালোবাসার জুটিদের নিরন্তর এগিয়ে চলা। ফুচকা-চটপটি খাওয়ার পাশাপাশি রিকশায় করে  নগরীর এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়ানোতেই যেন তৃপ্তি খুঁজে নিয়েছিল কপোত-কপোতীরা। রাজধানীর সর্বত্রই যেন ভালোবাসার হাট বসেছে। কপোত-কপোতীদের ভালোবাসার উত্তাপে দোল খেয়ে যায় মহানগরীর অলিগলি আর প্রশস্ত রাজপথ। সকাল থেকে রাত অবধি চলে প্রেমের টানে হারিয়ে যাওয়ার পালা। ‘প্রেমের অনন্ত শিখা চিরদিন জ্বলে/ স্বর্গ হতে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে’ কবির এমন পংক্তিটিকে সত্যে পরিণত করেছে রাজধানীর ভালোবাসা জুটিরা। এমন ভালোবাসা থাকলে পৃথিবী সুন্দর থেকে আরও সুন্দরতম হবে এটাই স্বাভাবিক। তারুণ্যের এই ভালোবাসা শুধু মোহ থেকে না হয়ে যদি হূদয় থেকে হয়ে থাকে তাহলে দেশ হবে ভালোবাসার শীতল পরশে শান্তি ও সুখময়।