শিরোনাম: |
বই পড়ুন জীবনকে আলোকিত করুন
|
রায়হান আহমেদ তপাদার: জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার সবচেয়ে উত্তম একটি মাধ্যম হলো বই। আর এই বই আমাদের জানার পথকে প্রশস্ত করে। বই, এই নামটা শুনলে কারো হয়তো ভ্রু কুঁচকে যায় আর কেউ হারিয়ে যায় তুষার শুভ্র সাদা পাতার দেশে যেথায় ছড়িয়ে থাকে নানা ছন্দের, নানা আবেগের শব্দনামক কালো মুক্ত। সেই কালো মুক্ত কুড়ানোর নেশা যার একবার হয়েছে সেই জানে এই নেশায় রাত দিন ভুলে হারিয়ে যাওয়া যায় বর্তমান থেকে অতীতে, অতীত থেকে ভবিষ্যতে। বইয়ের প্রতি এমন নেশা বা ঝোক অনেকেরই আছে। তাই তো এই নেশার জন্য কেউ ডাকে তাদের বইয়ের পোকা আর কেউ বা ডাকে বই পাগলা। আমাদের রোজকার জ্ঞান ও বিনোদনের সঙ্গী এই বইয়ের ব্যবহারের প্রতি আমাদের কিন্তু ভ্রূক্ষেপ নেই। অবাক হচ্ছেন? বইয়ের ব্যবহার মানে শুধু বই নিলাম আর পড়লাম এই নয়। মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বইয়েরও দরকার আলদা যত্ন আর এর ব্যবহারেও রয়েছে কিছু আদবকায়দা।
বইমেলা এখন আমাদের প্রাণের মেলা। এ মেলার সঙ্গে আমাদের ভাষা ও বর্ণমালার যোগসূত্র। বইয়ের সঙ্গে মানুষের প্রীতিময় সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় এবং প্রাচীন। বই পড়ার অভ্যাস সারা বছরের বিষয় হলেও আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পায় যেন বইমেলায় এসে। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সর্বোত্তম জায়গা পরিবার। সেখান থেকেই তৈরি হওয়ার কথা বইপড়ুয়া প্রজন্ম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সময়ের সঙ্গে আমরা যেন সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর এই সুযোগে অপসাংস্কৃতি আমাদের মননে ভাঙন শুরু করেছে। ফলে সমাজে ফুলেফেঁপে উঠছে অস্থিরতা। শূন্যতা, হাহাকার ধ্বংস করতে বসেছে আমাদের সৃজনী-ক্ষমতা আর মানবিক মূল্যবোধকে। তবুও এ কথা সত্য যে, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছরে এসব জরাজীর্ণতার মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে লাখ লাখ তরুণ পাঠক। বইয়ের মাধ্যমে বোধ পরিবর্তনের এ আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে আমাদের বাংলা একাডেমি; লেখক, প্রকাশক সর্বোপরি প্রাণের প্রিয় এ বইমেলা। বইমেলার মধ্য দিয়ে বই কেনা, উপহার দেয়া এবং বই পড়ার অভ্যাস বাড়ে। এ ধারাবাহিকতা আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পাঠক ধরে রাখা এবং নতুন পাঠক সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রকাশক, লেখক ও বাংলা একাডেমিকে নতুন যুগোপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের আলোকিত জীবনের উপকরণ হচ্ছে বই। জগতে শিক্ষার আলো, নীতি-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সভ্যতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই জ্ঞানের প্রতীক বইয়ের মধ্যে নিহিত। মানবজীবন নিতান্তই একঘেয়ে দুঃখ-কষ্টে ভরা, কিন্তু মানুষ বই পড়তে বসলেই সেসব ভুলে যায়। পৃথিবীতে বিনোদনের কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু বই পড়ার নির্মল আনন্দের কাছে সেগুলো সমতুল্য হতে পারেনি। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক কোনো মজাদার বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে যায় না। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের নেশায় ডুবে থাকা দরকার। বই প্রকাশ, বইমেলা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে প্রকাশনা শিল্পটি লেখক-প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- প্রকাশনা শিল্পকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসা, বইমেলার সফল আয়োজন এবং লেখক সৃষ্টিতে প্রকাশকদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সে হিসেবে প্রকাশকরা সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে কী মূল্যায়ন পাচ্ছেন সেটাও ভাবার বিষয়। বাংলাবাজারের প্রকাশনালয়ে এমন সব প্রকাশক রয়েছেন, যারা এক জীবনে এই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি অসংখ্য জনপ্রিয় লেখক তৈরি করেছেন। সেসব প্রকাশকের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কোথায়? সঠিক মূল্যায়ন কী তারা পাচ্ছেন? অপরপক্ষে বলা প্রয়োজন- অনেক প্রকাশকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন না। বই প্রকাশের প্রকৃত সংখ্যার তথ্য গোপন করেন তারা। লেখককে তার প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানি দিতে চান না। লেখকের অনুমতি ছাড়া পুনর্মুদ্রণ বা সংস্করণ প্রকাশ করেন। আবার এমন অভিযোগও আছে, লেখকের অনুমতি ছাড়া গ্রন্থস্বত্ব প্রকাশকের নামে নিয়ে যান। শিল্পের স্বার্থে প্রকাশকদের এমন হীনমানসিকতার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। প্রকাশনা শিল্পের শৃঙ্খলা আনয়নে বাংলা একাডেমির সহায়তা নিয়ে প্রকাশকদেরই ভূমিকা রাখতে হবে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের প্রকাশনা শিল্পের নান্দনিকতা বেড়েছে বহু গুণে। বই প্রকাশের মান, বিষয় নির্বাচনে এসেছে বৈচিত্র্য। বইয়ের নামকরণে আধুনিকতা ও শিল্পমাত্রায় যোগ হয়েছে নতুন আঙ্গিক। বই বাঁধাইয়ের মান অনেক উন্নত হয়েছে। প্রচ্ছদ অঙ্কনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে গত এক দশকে। তরুণ প্রচ্ছদ শিল্পীরা বিষয়- সাহিত্য এবং ভাবনাজগতের চমত্কার সমন্বয় করছেন। লেখকরা তাদের লেখায় সময়কে ধরে রাখার এবং সময়ের সঙ্গে চলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণ-উদীয়মান লেখকরা তাদের সাহিত্য রচনায় প্রযুক্তির অগ্রগতিকে যোগসূত্র হিসেবে নতুন নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করছেন। তরুণ প্রকাশকের সংখ্যা বাড়ছে। চিন্তা-চেতনায় তরুণ প্রকাশকরা প্রকাশনা শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। সর্বোপরি শিল্পের নান্দনিকতাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রকাশনা শিল্প এবং বইমেলা। প্রকাশকরা নিজেদের বিনিয়োগে বই প্রকাশ করেন। তাদের মাথায় রাখতে হয় দেশের ক্রেতা-পাঠকের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি। তারপরও বলব, আমাদের দেশে শিশুদের উপযোগী মানসম্পন্ন বই খুব বেশি প্রকাশিত হচ্ছে না। শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোর বিষয় নির্বাচন, মান, লেখার দৈর্ঘ্য, অলঙ্করণ, রঙ প্রভৃতি বিষয়ে প্রকাশনা শিল্পের মনোযোগ কম লক্ষণীয়। ডোরেমন, পোকেমনের ছবি দিয়ে যেসব বই প্রকাশিত হতে দেখা গেছে, সেগুলোয় কাটপিসের প্রমাণ যেন স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। কেন জানি না, আমাদের দেশে শিশুতোষ বইগুলোয় তেমন চাকচিক্য চোখে পড়ে না। শিশুতোষ বই হওয়া উচিত উন্নত কাগজের অঙ্কনচিত্রসংবলিত চকচকে রঙের। প্রকাশনার খরচ বেড়ে যাওয়াটা অবশ্য এ ক্ষেত্রে একটা বড় বিষয়। তবু ব্যাপারটি নিয়ে আরও ভাবতে হবে। বই প্রজন্মের মেধা, মননশীলতা বিকাশের জন্য সুন্দর সুন্দর বৈচিত্র্যময় বিষয়ে তথ্যমূলক, ছবিসমৃদ্ধ রঙিন ঝকঝকে বই প্রকাশ করা উচিত। প্রকাশনা শিল্পের ভিত্তিভূমি বাংলাবাজার। এখান থেকেই অনেক সুন্দর, সৃজনশীল ঐতিহ্যবাহী, নান্দনিক বই প্রকাশ এবং বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এই বাংলাবাজারের পরিবেশ, অবকাঠামো এত অসুন্দর যে, দুটি বিষয়কে পরস্পর বিরোধী মনে হয়। বাংলাবাজারে সিংহভাগ প্রকাশনা সংস্থার অফিস ও বিক্রয় কেন্দ্র। সেখানে প্রকাশক ছাড়া অন্য যারা কাজ করেন তাদের অনেক ক্ষেত্রেই বেমানান মনে হয়। ব্যবহার, সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচার এসব কিছু এই সৃজনশীল অফিসগুলোর অনেক জায়গায় নেই। একটি সমৃদ্ধ সৃজনশীল জায়গার মানুষগুলোও সুন্দর হওয়াই কাম্য। বাংলাদেশে বইকেন্দ্রিক সামাজিকতা এখনও গুরুত্ব পাচ্ছে না। ছোটবেলায় আমরা বই চুরি করে নিয়ে পড়তাম। বই বদল করে পড়তাম। বই উপহার পেতাম এবং দিতাম। এখন কেন জানি এই অভ্যাসে ভাটা পড়েছে। এটি খুবই ভয়ানক ব্যাপার। বিয়ে, জন্মদিন, সাংস্কৃতিক উত্সবে এখন আর বই উপহার দিতে দেখা যায় না। আজকালকার বিয়ের অনুষ্ঠানে এক হাজার টাকার নিচে কিছু উপহার দেয়া যায় না। অথচ এক হাজার টাকায় ৫-৭টি বই উপহার দেয়া সম্ভব। ধরা যাক, একটি বিয়েতে আপ্যায়িত হয়ে থাকেন ২০০ থেকে ৩০০ জন। এদের মধ্যে ৫০ জন যদি এক হাজার টাকার বই দেন তাহলে ৫০ হাজার টাকার বই উপহারে সেই পরিবারটিতে একটি পাঠাগার তৈরি হতে পারত। আমাদের সমাজে অদ্ভুত আরেকটি রীতি লক্ষ্য করা যায়, এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এমনকি শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভোজনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে বই উপহারের বদলে গৃহসামগ্রী দেয়া হয়। অথচ এসব আয়োজনে বইকে প্রাধান্য দিলে কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হতে পারত। আমাদের বই ক্রেতা বা পাঠক সমাজের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এখনও মধ্যবিত্তরাই বেশি বই কেনেন বলে আমার ধারণা। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপ্তি যতটা বিকশিত হয়েছে বই কেনার রীতি ততটা বাড়েনি। আমাদের সমাজে একটি পরিবারের বইমেলায় বই কেনার জন্য দুই হাজার টাকাও বাজেট থাকে না। মেলা ঘুরেও এর বাস্তবতা লক্ষ্য করা গেছে। অথচ বাণিজ্যমেলায় উপচেপড়া ভিড়ে ৫-১০ হাজার টাকা খরচ করার বাজেট থাকে। এখন ভাববার সময় এসেছে, যখন সন্তানের জন্য বইও প্রয়োজন; সংসার সাজাতে সামগ্রীও প্রয়োজন- তখন আপনি কোনটিকে অধিক গুরুত্ব দেবেন। দেখা গেছে, শিশুরা বই কিনতে চাইলেও মা-বাবার অনাগ্রহের কারণে তাদের বইয়ের চাহিদা মিটছে না। অথচ এই বাবা-মায়েরাই একদিন একবেলা পেটপুরে চায়নিজ খেয়ে ২-৩ হাজার টাকা অবলীলায় শেষ করে। এতে যে আনন্দ তারা প্রকাশ করেন সন্তানকে সেই পরিমাণ টাকার বই কিনে দিয়ে কিন্তু গর্বিত হতে দেখা যায় না। সুতরাং, আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বইমেলায় বছরে একবার পরিবার প্রতি যদি দুই হাজার টাকার বই কেনার বাজেট থাকে তাতেও অনেক বই বিক্রি হওয়ার কথা। সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃজনশীল বই কিনে পাঠাগার স্থাপন করা বাধ্যতামূলক হলে শত কোটি টাকার বই বিক্রি হওয়ার কথা। আশ্চর্য লাগে, এসব বিষয় নিয়ে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর তত্পরতা লক্ষ্য করা যায় না। সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়, মননশীলতার সম্প্রসারণ ও জ্ঞানের গভীরতা বাড়ায়। ভবিষ্যত্ চিন্তার জন্য বই পড়ার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। বই পড়ার আনন্দে ও আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে পাঠক-পাঠিকাদের নামতে হবে। বড় মনের মানুষ হওয়ার জন্য সবাইকে বইয়ের সান্নিধ্যে আসতে হবে। একটি বইয়ে লেখক তার সুপ্ত ভাবনাকে সৃজনশীল লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। কবি-সাহিত্যিক-লেখকেরা তাদের মনের আলো বইয়ের পাতায় ঢেলে দেন, বই পড়ে সেই জ্ঞানের আলো সংগ্রহ করা যায়। বই পড়া সচেতন মানুষের হাতেই দেশের ভবিষ্যত্ নিরাপদ ও স্থিতিশীল। যারা বড় হতে চায়, তাদের প্রয়োজন বেশি বেশি করে বই পড়া। বড় স্বপ্ন দেখতে হলে আর বড় মনের জন্য চাই বইপাঠের সুঅভ্যাস। ছাত্রজীবন থেকে বই পড়ার অভ্যাস করা উচিত। গ্রামগঞ্জে যদি একটি করে পাঠাগার গড়ে তোলা যেত এবং প্রতিবছর বই কেনার ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে সমাজের বিত্তহীনদেরও বই পড়ার সুযোগ হতো এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেধা ও মননের চর্চা হতো। সবশেষে বলব সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত, আমাদের দেশে সৃজনশীল ও একাডেমিক প্রকাশনা শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাবাজার। এই বাংলাবাজারে ৫০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান। সারা দেশে প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত জনশক্তি প্রায় পাঁচ লাখের বেশি। ৬০ বছর ধরে সদরঘাটসংলগ্ন বাংলাবাজারে বাংলা বইয়ের প্রকাশনা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। এই বাংলাবাজারে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং চার হাজারের বেশি বই বিক্রির দোকান রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে পাইকারি পুস্তক বিক্রেতার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি এবং খুচরা ১৫ হাজারের বেশি পুস্তক বিক্রেতা রয়েছেন। শুধু এরা নন, প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক, প্রুফ রিডার, কম্পোজিটর এবং ডিজাইনার; যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এই প্রকাশনার বৃহত্ কার্যক্রম। সারা দেশে পাওয়া যাচ্ছে বই। বই শিল্প বিকাশে সরকারের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা অতি আবশ্যক। প্রকাশনাকে শুধু একটি নান্দনিক মেধা বিকাশক শিল্পই নয়, জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির সম্প্রীতি ঘটাতে এ শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এমন একটি শিল্পের প্রতি সরকার উদাসীনতা হবে না- এটাই জাতির প্রত্যাশা। সৃজনশীল প্রকাশনার প্রথম ক্রেতা হতে হবে সরকারকে। সরকার ক্রেতা হয়ে বই পড়াকে জনপ্রিয় করে তুললে প্রজন্মের মাঝে সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে। এ কাজে সরকারেরই লাভ বেশি। সরকার তার পাঁচ বছর ক্ষমতার মেয়াদে ২০ কোটি করে ১০০ কোটি টাকার বই কিনলে পাল্টে যাবে প্রকাশনা শিল্পের অবয়ব। লেখক, পাঠক তৈরি হবে। এগিয়ে যাবে দেশ এবং জাতি। তবে সরকারের ক্রয়নীতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। তা না হলে প্রকাশনার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সরকার পৃষ্ঠপোষক হলে দ্রুততম সময়ে বিকশিত হবে এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি। প্রতিষ্ঠিত হবেন লেখক এবং বাড়বে বইয়ের বাজার। আমরা একটি সৃজন ও মননশীল প্রজন্ম গড়তে পারব। বই মানুষের মননশীল চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয় দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি, সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই অবসর কাটায়। বই কেনা ও পড়ার অভ্যাসে ভাটা পড়ছে। প্রযুক্তিনির্ভর মানুষ বইকে সময়ক্ষেপণ বলেই মনে করে। ছাত্রছাত্রীরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই পাঠ্যবই পড়ে। বই পড়ার প্রতি যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম একটা কারণ। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই। তাই বই পড়ুন, জীবন গড়ুন। লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী |